সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। এরই মধ্যে এই রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৬ শতাংশ।
কোচ, ইঞ্জিন ও জনবল সংকটের কারণে আপাতত একটি ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু হবে এ রুটে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হলেও বাণিজ্যিক ট্রেন সার্ভিস শুরু হতে আরো কয়েক মাস লেগে যাবে।
এছাড়া কোচ সংকট ও ইঞ্জিন স্বল্পতার কারণে চাইলেও অতিরিক্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া ১৪৭টি মিটার গেজ কোচ দিয়ে নতুন ট্রেনগুলোর রেক-কম্পোজিশন সাজানো হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে একাধিক সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ১০ মে প্রস্তাব চায় রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ। এর পরই নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে সময়সূচি প্রণয়ন ও প্রস্তাব তৈরি করতে কাজ শুরু করে পরিবহন বিভাগ। পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত একটিমাত্র ট্রেনের সময়সূচি তৈরি করে রেল ভবনে প্রস্তাব পাঠানো হয়।
রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত আগে থেকেই রেললাইন আছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত এই রেলপথের ৮৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ছয় তলাবিশিষ্ট রেলস্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৬ শতাংশ। অবশিষ্ট ১৪ শতাংশ কাজ শেষ করে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ রেল যোগাযোগ চালু করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসের জন্য রেলভবনে দুটি সময়সূচি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী (ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন নম্বর-১) ঢাকা থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে একটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটি কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি পথে কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টায় ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী (ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন নম্বর-২) ঢাকা থেকে ট্রেনটি রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে পৌঁছবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি পথে একই ট্রেন কক্সবাজার থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে রাত ১০টায়।
স্থানীয়রা বলছেন, ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালু হলে কক্সবাজারে পর্যটনের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। এ রেলপথ চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এলাকার মানুষের কর্মস্থান বৃদ্ধি পাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে।
২০১০ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করার পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে রামু থেকে ঘুমঘুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারের কাজ বন্ধ আছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।