ড্রুক এয়ার, যা “ড্রুক এয়ারলাইন্স” নামেও পরিচিত, ভুটানের জাতীয় এয়ারলাইনস এবং দেশটির আকাশপথের গর্ব। এটি ভুটানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা এবং ভুটানের “ড্রাগন রাজ্যের” নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই এয়ারলাইনসটি ভুটানের ভ্রমণ এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ড্রুক এয়ার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে, যখন ভুটান তার আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আকাশপথ ব্যবস্থার উন্নতি করতে চেয়েছিল। ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ড্রুক এয়ার তাদের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। এটি শুরুতে একটি Dornier 228-200 বিমান দিয়ে পরিচালিত হতো, যা মূলত পারো থেকে কলকাতার মধ্যে ফ্লাইট চালাত।
ড্রুক এয়ারের বহর (Fleet)
বর্তমানে ড্রুক এয়ার আধুনিক এয়ারবাস বিমান ব্যবহার করে। এর বহরে রয়েছে:
- এয়ারবাস A319: পারো বিমানবন্দরের সীমিত রানওয়ে এবং ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
- এয়ারবাস A320neo: উন্নত প্রযুক্তি এবং কম জ্বালানি খরচের জন্য পরিচিত।
- এয়ারবাস A320ceo: মাঝারি দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রতিটি বিমানে ভুটানের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং ডিজাইনের ছাপ রয়েছে।
পরিচালিত গন্তব্য
ড্রুক এয়ার ভুটানকে আন্তর্জাতিক গন্তব্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে। বর্তমানে এটি বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনা করে:
আন্তর্জাতিক গন্তব্য
- ভারত: কলকাতা, দিল্লি, গুয়াহাটি, এবং বাগডোগরা।
- বাংলাদেশ: ঢাকা।
- নেপাল: কাঠমান্ডু।
- থাইল্যান্ড: ব্যাংকক।
- সিঙ্গাপুর: সিঙ্গাপুর সিটি।
আভ্যন্তরীণ গন্তব্য
ভুটানের মধ্যে যাতায়াতের জন্য ড্রুক এয়ার সীমিত সংখ্যক অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে।
বিমানের অভিজ্ঞতা
ড্রুক এয়ারের প্রতিটি ফ্লাইট যাত্রীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
- পাহাড়ি দৃশ্য: ফ্লাইট চলাকালীন যাত্রীরা হিমালয়ের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন, বিশেষ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং এভারেস্ট।
- উন্নত সেবা: যাত্রীদের জন্য রয়েছে ভুটানি খাবার, বিনোদন, এবং উষ্ণ আতিথেয়তা।
- বিলাসবহুল অভিজ্ঞতা: বিমানের আসনবিন্যাস আরামদায়ক এবং বিমানের অভ্যন্তর নকশা ভুটানি সংস্কৃতির ছোঁয়া বহন করে।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য
- দুর্গম পথে দক্ষ ফ্লাইট পরিচালনা: ড্রুক এয়ার বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং রুটগুলোর মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনা করে, বিশেষ করে পারো বিমানবন্দরে অবতরণ এবং উড্ডয়ন।
- পর্যটকদের জন্য প্রধান সেতুবন্ধন: ভুটানের পর্যটন শিল্পের প্রধান ভরসা এই এয়ারলাইনস।
- নিরাপত্তা: কঠোর নিরাপত্তা নিয়মাবলি এবং প্রশিক্ষিত পাইলটদের উপস্থিতি ড্রুক এয়ারকে নিরাপদ একটি এয়ারলাইন হিসেবে তুলে ধরেছে।
চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
- পারো বিমানবন্দরের সীমাবদ্ধতা: পারো বিমানবন্দরের ছোট রানওয়ে এবং পর্বতমালা ঘেরা অবস্থান ফ্লাইট পরিচালনাকে কঠিন করে তোলে।
- সীমিত ফ্লাইট সংখ্যা: ভুটানের ছোট আকাশপথ ব্যবস্থার কারণে ফ্লাইট সংখ্যা সীমিত।
- আবহাওয়া নির্ভরতা: খারাপ আবহাওয়া প্রায়শই ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব ঘটায়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ড্রুক এয়ার ভবিষ্যতে তাদের বহর সম্প্রসারণ এবং নতুন গন্তব্য সংযোজনের পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি, যাত্রীসেবার মান আরও উন্নত করার জন্য তারা আধুনিক প্রযুক্তি এবং টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ করছে।
উপসংহার
ড্রুক এয়ার শুধু একটি এয়ারলাইন নয়, এটি ভুটানের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে একটি গভীর সংযোগ তৈরি করে। হিমালয়ের মনোরম দৃশ্য, ভুটানের উষ্ণ আতিথেয়তা, এবং নিরাপদ ফ্লাইট অভিজ্ঞতা ড্রুক এয়ারকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যারা ভুটানে যেতে চান, তাদের জন্য ড্রুক এয়ার এক অবিস্মরণীয় যাত্রার প্রতিশ্রুতি দেয়।