প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিকের দাবি, ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা কর্মসূচির জন্য ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। তবে, সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে আবেদন জমা দেওয়ার সুবিধা এখনো চালু হয়নি বলে জানা গেছে। জনপ্রিয় ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘নিউজউইজ’ ডিপার্টমেন্ট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং হোয়াইট হাউজের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘গোল্ড কার্ড’ কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রে ৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকারীদের জন্য বসবাসের অনুমতি প্রদান করবে। এই কর্মসূচির ঘোষণা ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কয়েকটি নীতির অংশ, যা উচ্চ বিনিয়োগের সামর্থ্য না থাকা অভিবাসীদের জন্য সুযোগ সংকুচিত করছে। অতীতে ট্রাম্প কর্মভিত্তিক ভিসা, বিশেষ করে এইচ-১বি ভিসার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
ফক্স নিউজের ‘স্পেশাল রিপোর্ট’ অনুষ্ঠানে ব্রেট বায়ারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে লুটনিক বলেন, ‘এখনই ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অপেক্ষার তালিকায় আছেন’ এবং তারা এই বিশাল ফি দিতে প্রস্তুত। লুটনিক জানান, আবেদনকারীদের “গভীরভাবে যাচাই-বাছাই” করা হবে। ফক্স নিউজের অভিজ্ঞ সঞ্চালক বায়ার তাকে জিজ্ঞাসা করেন, রুশ ধনকুবেররা কি এই কর্মসূচির মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে?
মঙ্গলবার, ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, বর্তমান ঊই-৫ অভিবাসী বিনিয়োগকারী ভিসা কর্মসূচির পরিবর্তে ‘গোল্ড কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করা হবে। এই নতুন পরিকল্পনা আমেরিকান ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের নাগরিকত্ব প্রদান করবে। ইবি-৫ কর্মসূচির আওতায় আবেদনকারীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও নাগরিকত্ব পরিষেবায় (ইউএসসিআইএস) ১ লাখ থেকে ২ লাখ মার্কিন ডলার ফি প্রদান করতে হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের ন্যুনতম ৮ লাখ থেকে ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয় এবং কমপক্ষে ১০টি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হয়।
ট্রাম্প ‘গোল্ড কার্ড’ কর্মসূচিকে ‘গ্রিনকার্ড প্লাস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা সাধারণ স্থায়ী বাসিন্দাদের তুলনায় আরও বেশি সুবিধা দেবে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই নীতি সম্পদকে মেধার চেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং এটি প্রকৃতপক্ষে অভিবাসন সংকট সমাধানে কার্যকর নাও হতে পারে, বিশেষ করে যখন প্রশাসন লক্ষ লক্ষ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে বহিষ্কার করার পরিকল্পনা করছে।
ওভাল অফিসে মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ‘এটি নাগরিকত্বের একটি পথ হবে, এবং সম্পদশালী ব্যক্তিরা এই কার্ড কিনে আমাদের দেশে আসবে। তারা ধনী, তারা সফল হবে, তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করবে এবং প্রচুর কর প্রদান করবে।’
ফক্স নিউজকে হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সপ্তাহান্তে তার বন্ধু জন পলসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পলসন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমরা এই সুযোগ থেকে আরও বেশি সুবিধা নিচ্ছি না কেন? তিনি আমাকে ফোন করেন, আমরা আলোচনা করি এবং আমি সোমবার এই বিষয়ে কাজ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা দেন এবং বলেন, কল্পনা করুন যদি আমরা ১০ লাখ ‘গোল্ড কার্ড’ বিক্রি করতে পারি, তাহলে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ হবে। এটি আমাদের ঋণ পরিশোধ করবে, সুদের হার কমাবে এবং আমেরিকাকে দুর্দান্ত করে তুলবে।”
তিনি যোগ করেন, ‘আমি মনে করি এই বিনিয়োগকারীরা প্রচুর পরিমাণে আসবে কারণ তারা জানে যে তারা আমেরিকায় আসতে পারবে এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দেশে থাকতে পারবে। এই পরিকল্পনাটি আমাদের জাতীয় ঋণ পরিশোধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।’
কংগ্রেসম্যান রো খান্না নিউজউইককে বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমেরিকায় একটি সফল কোম্পানি গড়তে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫ মিলিয়ন ডলার থাকার প্রয়োজন নেই। সের্গেই ব্রিন, সুন্দর পিচাই বা সত্য নাদেলার দৃষ্টান্তই তার প্রমাণ।
‘আমরা এমন দক্ষ কর্মীদের স্বাগত জানানো উচিত যারা তাদের সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে আসবে, পাশাপাশি এইচ-১বি কর্মসূচির সংস্কার করা উচিত যাতে এর অপব্যবহার রোধ করা যায়।’
সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মার্কো এ. দুরাজো নিউজউইককে বলেন, ‘এই কর্মসূচিটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এতদিন তারা বলেছে, বৈধ অভিবাসীদের স্বাগত জানানো হবে যদি তারা ‘সঠিক উপায়ে’ আবেদন করে। তবে এই প্রস্তাবনা দেখানোর আগ পর্যন্ত কেউ জানত না যে ‘সঠিক উপায়ে’ আসতে হলে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে এবং শুধুমাত্র ধনীদের জন্যই এটি উন্মুক্ত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কার করার পরিবর্তে ট্রাম্প প্রশাসন এখন অভিবাসনের দরজা সবচেয়ে বড় দরদাতার জন্য খুলে দিচ্ছে।’
নতুন কর্মসূচি কীভাবে কার্যকর হবে এবং এটি কংগ্রেসের অনুমোদন পাবে কি না, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্টতা নেই। হোয়াইট হাউস বা ইউএসসিআইএস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়নি।