1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ট্রাম্পের ভিসা নীতি কি ভারতীয় তরুণদের স্বপ্ন চুরমার করে দিচ্ছে
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১১ অপরাহ্ন

ট্রাম্পের ভিসা নীতি কি ভারতীয় তরুণদের স্বপ্ন চুরমার করে দিচ্ছে

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্বপ্নিল চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত) কলকাতার কাছেই খড়গপুরের আইআইটি-র চতুর্থ বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক স্তরের মেধাবী ছাত্র। আরও বহু ব্যাচমেটের মতোই সামনের বছর কোনও মাল্টিন্যাশনালে মোটা মাইনের চাকরিতে যোগ দিয়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল এই তরুণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি প্রোক্ল্যামেশন আপাতত তার সেই পরিকল্পনাকে মোটামুটি তছনছ করে দিয়েছে বলা যেতে পারে।

স্বপ্নিল এদিন ফোনে বলছিল, “এটা ঠিকই যে আমাদের ব্যাচের অনেকেই এখন আর গ্র্যাজুয়েশনের পরেই আমেরিকা যাওয়ার কথা ভাবে না। কিন্তু আমার সেই উচ্চমাধ্যমিকের সময় থেকেই নানা কারণে ইচ্ছে ছিল আইআইটি থেকে পাস করে আমেরিকায় বছরকয়েক কাটিয়ে আসব।”

কিন্তু যে ‘এইচ ওয়ান-বি’ ক্যাটেগরির ভিসায় স্বপ্নিলের মতো টেক বা মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের মার্কিন কোম্পানিগুলো এতদিন চাকরি দিয়ে নিয়ে যেত, সেটার ফি গত ২০শে সেপ্টেম্বরের পর থেকে এক লাফে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লক্ষ ডলার! অথচ এতদিন এই ক্যাটেগরির প্রতিটি ভিসার ফি ছিল মাত্র ২০০০ থেকে ৫০০০ ডলার।

এই ১ লক্ষ ডলারের অঙ্কটা এইচ ওয়ান-বি ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে যারা চাকরি করছেন, তাদের বার্ষিক গড় বেতনের চেয়েও বেশি।

অন্যভাবে বললে, ব্যতিক্রমী রকমের মেধাবী বা দক্ষতাসম্পন্ন না হলে বিদেশি কোনও প্রফেশনালকে এত চড়া ফি দিয়ে কোনও

যে নির্বাহী আদেশে ভিসা-র ফি বাড়ানো হয়েছে, সেটি তুলে ধরে দেখাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,যে নির্বাহী আদেশে ভিসা-র ফি বাড়ানো হয়েছে, সেটি তুলে ধরে দেখাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

আর এটার প্রভাব পড়বে ভারতেই সব চেয়ে বেশি – কারণ আমেরিকা প্রতি বছর যত এইচ ওয়ান-বি ভিসা দিয়ে থাকে, তার ৭০ শতাংশেরও বেশি পান ভারতীয় নাগরিকরাই।

কেন ভারতীয়দের ওপরেই কোপ?

গত আর্থিক বছরেও আমেরিকার এইচ ওয়ান-বি ভিসা পাওয়া ১০০জনের মধ্যে ৭১জনই ছিলেন ভারতীয়। তুলনায় চীনা নাগরিকরা ছিলেন সংখ্যায় ১১.৭ জন।

বস্তুত যে দশটি দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি এইচ ওয়ান-বি ভিসা পেয়ে থাকেন, ভারতের পর বাকি ন’টি দেশ মিলিয়েও তারা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক কম সংখ্যক ভিসা পান – আর এটা ঐতিহাসিকভাবেই সত্যি।

টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস) বা ইনফোসিসের মতো ভারতীয় কোম্পানিগুলোও এই ভিসার খুব বড় গ্রাহক।

আমেরিকার সিটিজেনশিপ ও ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের ওয়েবসাইট বলছে, চলতি আর্থিক বছরের জুন মাস পর্যন্ত আমেরিকা যে ১ লক্ষ ৭ হাজারের মতো এইচ ওয়ান-বি ভিসা মঞ্জুর করেছে, তার ১৩ শতাংশই পেয়েছে বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানি। নতুন ব্যবস্থায় এই রেওয়াজটা প্রবল অনিশ্চিত হয়ে পড়বে অবধারিতভাবে।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক তো প্রথমে বলেছিলেন, কোনো তিন বছর মেয়াদী এইচ ওয়ান-বি ভিসার প্রত্যেক বছরেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে এই ১ লক্ষ ডলার ফি গুনতে হবে। পরে অবশ্য মার্কিন প্রশাসন পরিষ্কার করেছে যে এটা হবে একটা ‘এককালীন পেমেন্ট’।

আমেরিকায় ভারতীয় ডায়াসপোরার একটা বড় অংশই এইচ -ওয়ানবি ভিসাতে সে দেশে গেছেন

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,আমেরিকায় ভারতীয় ডায়াসপোরার একটা বড় অংশই এইচ -ওয়ানবি ভিসাতে সে দেশে গেছেন

এটাও পরে ঘোষণা করা হয়েছে যে মেডিক্যাল খাতে যারা এইচ ওয়ান-বি ভিসায় আসবেন, এই চড়া ফি থেকে ছাড় পাবেন তারাও।

কিন্তু তাতে স্বপ্নিলের মতো ভারতের হাজার হাজার হবু ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেক গ্র্যাড-দের কোনও সুরাহা হচ্ছে না।

“আমি তো এখন আপাতত দেশের মধ্যেই চাকরি খুঁজব ভাবছি, কারণ আমেরিকার দরজা বন্ধ থাকলে আমার ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়াতে এখনই চাকরি করতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই”, বিবিসিকে বলছিল তরুণটি।

সোশ্যাল মিডিয়া-সহ নানা প্ল্যাটফর্মে ভারতীয়রা অনেকেই মন্তব্য করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কার্যত এইচ ওয়ান-বি ভিসার কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়েছেন – ফলে এই রুটে নতুন করে ভারতীয়দের আমেরিকা যাওয়ার রাস্তা একরকম বন্ধই হতে চলেছে।

ঠিক কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?

তবে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) বা ভারতের অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনায় যুক্ত আছেন, এমন অনেকেই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন কয়েক বছর আগেও তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার যে ‘ক্রেজ’ ছিল তা এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে।

ফলে এইচ ওয়ান-বি বন্ধ হয়ে গেলেও তাতে খুব বড় কোনো ‘হাহাকার’ পড়ে যাবে না বলেই তাদের অভিমত।

মুম্বাই আইআইটি-র একটি ল্যাবরেটরিতে কাজ করছেন তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,মুম্বাই আইআইটি-র একটি ল্যাবরেটরিতে কাজ করছেন তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা

বিবিসি বাংলার সর্বশেষ খবর ও বিশ্লেষণ এখন সরাসরি আপনার ফোনে।

ফলো করুন, নোটিফিকেশন অন রাখুন

বিবিসি বাংলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল

বর্তমানে হায়দ্রাবাদ আইআইটি-র অধ্যাপক ড: সৌম্য জানা নিজে খড়্গপুর আইআইটি থেকে স্নাতক স্তরে পড়াশুনো করে বহু বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে এসেছেন।

তার অভিজ্ঞতা বলে, “নব্বইয়ের দশকে আমরা যখন আইআইটি থেকে পাস করে বেরিয়েছি তার তুলনায় এখন সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের আমেরিকায় যাওয়ার ঝোঁক অনেক কম।”

“বরং ভারতীয়রা এখন বেশির ভাগই চায় তাদের কেরিয়ারের পরবর্তী কোনো পর্যায়ে মার্কিন ইকোসিস্টেম বা আমেরিকার বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে। এদের ক্ষেত্রে এইচ ওয়ান-বি’র নিয়ম পরিবর্তন খুব একটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না”, জানাচ্ছেন ড: জানা।

কারও আবার ধারণা, আমেরিকার ইতিহাস বলে সে দেশের ইমিগ্রেশন নীতি এরকম নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে যায় – ফলে এই পর্বটাও একটা সময় কেটে যেতে বাধ্য এবং আমেরিকাও তাদের নিজের স্বার্থেই বিদেশি পেশাদারদের জন্য দরজা খুলে দেবে।

কানপুর আইআইটি-র প্রাক্তনী অজয় কুমার কয়াল যেমন বলছিলেন, “এই মুহুর্তে ভারতীয়দের জন্য ভবিষ্যৎ বেশ অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে, সেটা ঠিকই।”

“তবে আমার মতে এখনই ওভাররিঅ্যাক্ট করারও কোনও দরকার নেই।”

“এই দেশটা ঐতিহাসিকভাবে এরকম নানা ‘সাইকেলে’র মধ্যে দিয়ে গেছে – কাজেই এই পরিস্থিতিটাও চিরকাল থাকবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস”, জানাচ্ছেন ড: কয়াল।

খড়্গপুর আইআইটি-র মূল প্রশাসনিক ভবন

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,খড়্গপুর আইআইটি-র মূল প্রশাসনিক ভবন

আইআইটি-র যে প্রাক্তনীরা এখন আমেরিকায় বহু বছর ধরে রয়েছেন বা সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তাদের কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটা বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।

ভারতীয়-আমেরিকান শিল্পোদ্যোগী ও খড়্গপুর আইআইটি-র প্রাক্তন ছাত্র বিপ্লব পাল যেমন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আজকে যে পুনে, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ তৈরি হয়েছে – যেখানে কম করে হলেও ১০ লাখের বেশী শুধু বাঙালি চাকরি করছে (কারণ পশ্চিমবঙ্গে চাকরি নেই)- এটা কি ভারত সরকার করে দিয়েছে?”

“না, এগুলো সম্ভব হয়ছে আইটি বিজনেস কোম্পানিগুলোর জন্য। এবং এই আইটি বিজনেসে এইচ ওয়ান-বিতে লোক পাঠানো খুব দরকার। কারণ আমেরিকা থেকে কাজ তুলতে গেলে, তাদের ফ্যাক্টরি বা অফিসে বসে কাজ শিখে সেটা এরা ভারতীয়দের শেখায়। আজ ওই ভিসাটা না থাকলে, বাকি শহরগুলোর চাকরির অবস্থাও কলকাতার মতন হত।”

“তাছাড়া যারা গেছে, অনেকেই ভারতে কোম্পানি খুলেছে। ভারতে তারা বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। যা ভারতের ফরেন রিজার্ভের সব থেকে বড় উৎস।”

“এটা খুব ভুল ধারণা যারা ভারতের বাইরে আমেরিকায় কাজ করছে- তারা ভারতকে কিছু ফিরিয়ে দেয়নি। আজকে ভারতের এই ৫০ লক্ষ আইটি চাকরি তৈরিই হতো না এই ভিসাতে লোকে আমেরিকাতে না গেলে”, যুক্তি দিয়েছেন বিপ্লব পাল।

ভারতীয়রা যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন

তবে এই নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তা রীতিমতো উদ্বেগ আর আতঙ্কের।

ভিসা ফি বৃদ্ধি নিয়ে একজন ভারতীয়র সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট

ছবির উৎস,@deebayleaf/X

ছবির ক্যাপশান,ভিসা ফি বৃদ্ধি নিয়ে একজন ভারতীয়র সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট

এক্স বা ফেসবুকে এসে অনেকেই লিখছেন, মার্কিন মুলুকের ভারতীয় ডায়াসপোরা-র মধ্যে যে ধরনের ‘প্যানিক’ বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে, সেটার অবশ্যই সঙ্গত কারণ আছে। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, ভারতীয়দের ‘আমেরিকান ড্রিম’ ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।

‘মুম্বাই নাওকাস্ট’ নামে একটি হ্যান্ডল থেকে মন্তব্য করা হয়েছে, “ট্রাম্প এইমাত্র এইচ ওয়ান-বি ভিসা সিস্টেমটাকেই খুন করে ফেললেন।”

আরও একজন এক্স ব্যবহারকারী ব্যাখ্যা করেছেন কেন এটা ভারতের টেকনোলজি খাতে বড় বিপদ বয়ে আনতে চলেছে।

‘ডি’ নামে ওই ইউজার লিখছেন, “একটি টেক বহুজাতিকের টপ ম্যানেজমেন্টে কর্মরত এক বন্ধু বললেন : আমেরিকা হয়তো এই ধাক্কাটা সামলে নেবে, কিন্তু ভারত পারবে না।”

“কারণ যদি ৫০ হাজার ভারতীয় টেকি দেশে ফিরে আসেন, তার মধ্যে ৪৯ হাজারই চাকরি খুঁজতে ঝাঁপাবেন – অথচ দেশের বাজারে ভয়ঙ্কর মন্দা চলছে। অনেক কোম্পানি হয়তো তাদের পুরনো কর্মীদের ছাঁটাই করে আমেরিকার অভিজ্ঞতা-ওলা এই নতুনদের নিতে চাইবে।”

“আমরা সবাই বলতে ভালবাসি ভারতের কত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে … এখানে কিন্তু সত্যিকারের একটা বিপদ ঘনিয়ে আসছে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত নই!”

তেলুগুভাষী একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করছেন

ছবির উৎস,@CoderUday/X

ছবির ক্যাপশান,তেলুগুভাষী একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করছেন

নীতিন ভাটিয়া নামে আরো একজন লিখেছেন, “আমেরিকান স্বপ্ন এখন শেষ … ভারতের আইটি শিল্পের জন্য এটা সূর্যাস্ত বয়ে আনছে।”

জনৈক অরুণ অরোরা মন্তব্য করেছেন, “এইচ -ওয়ানবি ভিসাতে আমেরিকাতে আছেন, এমন বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাথে কথা হলো। প্যানিক ইজ রিয়াল!”

নিজেকে তেলুগুভাষী বলে পরিচয় দেওয়া ‘উদয়’ নামে একজন ইউজার আবার এক ধাপ এগিয়ে লিখছেন – আমেরিকা আসলে পরোক্ষে এইচ -ওয়ানবি ভিসাটাকেই নিষিদ্ধ করে দিলো।

তার পর্যবেক্ষণ, “তেলুগুরা অনেকেই ৪০ বা ৫০ লক্ষ রুপি ধারকর্জ করে আমেরিকায় পড়তে যায়। তারপর এই ভিসায় চাকরি জুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।”

“এখন তাদের সামনে একমাত্র রাস্তা হলো মাথায় ৫০ লক্ষ রুপি ঋণের বোঝা নিয়ে ভারতে ফিরে আসা। যার মানে দাঁড়ায়, ‘গর্বিত এনআরআই’ থেকে এই মানুষগুলো রাতারাতি ঋণগ্রস্ত ‘গরিব ভারতীয়ে’ পরিণত হলো!”

‘আমেরিকায় যাওয়ার দরকারটা কী’

ট্রাম্প প্রশাসন তাদের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর পরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, এই পদক্ষেপের ‘সম্ভাব্য মানবিক পরিণাম’ হবে এবং ‘বহু পরিবারকে তা বিপর্যস্ত করবে’ বলে তারা মনে করছে।

গুগল, আমাজন, মেটা-র মতো মার্কিন টেক জায়ান্টরাই এইচ -ওয়ানবি ভিসা বেশি ব্যবহার করে, বলছে ভারত

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,গুগল, আমাজন, মেটা-র মতো মার্কিন টেক জায়ান্টরাই এইচ -ওয়ানবি ভিসা বেশি ব্যবহার করে, বলছে ভারত

এরপর এই ভিসা ফি বাড়ানোর নানা দিক নিয়ে গোটা সপ্তাহান্ত জুড়ে (২০ ও ২১শে সেপ্টেম্বর) ভারতের কর্মকর্তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে একটানা আলোচনা চালিয়ে গেছেন এবং অনেকগুলো বিষয়ে অস্পষ্টতা দূর করার চেষ্টা করে গেছেন।

সেই আলোচনা কার্যত এখনও চলছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যে ভারত সরকারকে প্রবল উদ্বেগে ফেলেছিল তা স্পষ্ট – কারণ আজকের তারিখেও তিন লক্ষেরও বেশি ভারতীয় এইচ -ওয়ানবি ভিসায় আমেরিকাতে কর্মরত।

ইতিমধ্যে মার্কিন প্রশাসনও এটা স্পষ্ট করেছে যে এই ১ লক্ষ ডলারের ফি শুধু নতুন ভিসা আবেদনের জন্যই প্রযোজ্য হবে – ভিসার নবায়ন বা যারা বর্তমানে এইচ -ওয়ানবি ভিসাধারী তাদের এই ফি দিতে হবে না। নতুন ফি চালু হবে এই ভিসার পরবর্তী লটারি সাইকেল থেকে, জানানো হয়েছে সেটাও।

তবে ভারত সরকারের মধ্যেই একটা অংশ আবার এই বার্তাও দিতে চাইছেন, ভারতীয়দের এখন আর এইচ -ওয়ানবি ভিসার পেছনে ছোটাই উচিত নয়!

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল

প্রধানমন্ত্রী মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সঞ্জীব সান্যাল যেমন যুক্তি দিয়েছেন এইচ -ওয়ানবিতে ভারতের চেয়ে আমেরিকারই সুবিধা বেশি – এবং কোনও দেশের সঙ্গেই আসলে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিয়ে ভারতের কোনও দরকষাকষি করার কোনো দরকার নেই!

সঞ্জীব সান্যালের যুক্তি হলো, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর তুলনায় আমেরিকান টেক জায়ান্টরাই এই ভিসার সুযোগ বেশি নেয়।

“এমন কী এখনও আমাজন বা গুগলের মতো মার্কিন টেক জায়ান্টরাই এইচ -ওয়ানবি অনেক বেশি ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হলো, এগুলো যদি আইটি কোম্পানিই হয়, তাহলে তাদের আমেরিকায় লোকজন নিয়ে যাওয়ার দরকারটাই বা কী?”

“তোমরা এমন একটা ইন্ডাস্ট্রিতে আছো যেখানে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে কাজ করা সম্ভব। তাহলে আমাদের লোকজনের আমেরিকায় যাওয়ার দরকারটা কী?”, প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এই অর্থনীতিবিদ।

আমেরিকায় সশরীরে যাওয়াকে নিরুৎসাহিত করেও যে ভারত এখন এই অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে চাইছে, সেই ইঙ্গিত এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট।

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com