শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

টুইন টাওয়ারের আলোকছটা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

আমাদের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দর্শন শুরুতেই হোঁচট খেলো। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। সকালে গুগল ম্যাপ খুলে দেখতে চাইলাম টুইন টাওয়ার কোনো পথে যাব। কিন্তু মঙ্গলবার ওটা বন্ধ দেখাচ্ছে! মানে ভেতরে ঢোকা যাবে না। সাপ্তাহিক ছুটির আর দিন পেলো না!

কিছুটা মন খারাপ করে বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ম্যাকডোনাল্ডসে খেয়ে ফিরলাম হোটেলে। এদের সুইমিংপুলের পরিবেশটা সম্রাটদের প্রাসাদের আদলে করা। মাথার ওপর ছাদ, দুইপাশে গোলাকার থামের ওপর অপূর্ব কিছু ভাস্কর্য। আর সেখানে বাস করে কিছু কবুতর। ওরা মাঝে মাঝে এসে বসছিল পুলের পাড়ে। তাই আর মন খারাপ ভাবটা রইলো না। সেই সঙ্গে যখন চোখে পড়লো, অদূরেই সুউচ্চ মারদেকা টাওয়ারের কোমরের কাছে মেঘেরা এসে ভিড় করেছে, আর মেঘেদের ভেতর দিয়ে গাঢ় নীল কাঁচে মোড়ানো ভবনটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, বিস্ময়ে আমাদের তো মুখ হা হয়ে গেলো। আফসোস, সাঁতার কাটতে এসেছি বলে ফোনটা রুমে ফেলে এসেছি। এই অপরূপ দৃশ্য তাই রয়ে গেলো মনের মেমোরি কার্ডে। ফোনের ক্যামেরায় সেটা ধারণ করা গেলো না।

টুইন টাওয়ারের আলোকছটা

টুইন টাওয়ারে ঢুকতে পারব না তো কী হয়েছে? বাইরে তো ঘোরা যাবে। কাজেই বিকেলে চলে গেলাম কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টারে।

আমরা প্রথমে গেলাম পেছনের দিকটায়। সেখানে লেকের ভেতর চমৎকার এক ফোয়ারা রয়েছে। সন্ধ্যার পর সেই ফোয়ারায় যুক্ত হয় রঙিন আলো। মিউজিকের তালে তালে সে আলো আর জল নেচে ওঠে নির্দিষ্ট সময়ে।

পেছনের সেই লেকপাড় থেকে বেশ কিছু পথ হেঁটে যখন পৌঁছালাম টুইন টাওয়ারের ঠিক গোড়ায়, তখন ইস্পাতের সেই ভবন যেন আমাকে চুম্বকের মতো টানছিল। স্পর্শ করলাম সেই ইস্পাতে মোড়ানো কলাম। অসাধারণ অনুভব! দূর থেকে বা ছবিতে দেখে সত্যিই বুঝিনি কী অপার বিস্ময়কর এই স্থাপনা! কী তার দ্যুতি! কী তার চাকচিক্য! আর প্রতিটা ইস্পাতের পাতের যে অভিজাত Color আর Texture, সেটা ভাষায় অপ্রকাশ্য।

পোর্চ থেকে বেরিয়ে সামনে আরেক বিশাল ফোয়ারা আর বাগান। সেটার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভবনটার দিকে তাকালে প্রথমেই আমার যেটা মনে হলো, তা হচ্ছে, এত সুন্দর এক অট্টালিকা সত্যিই কি মানুষ তৈরি করেছে? এর গায়ের যে আলোকছটা, তা যে অপার্থিব, অবিশ্বাস্য রকমের সুন্দর! দিনের আলোয় এর সৌন্দর্য এক রকম, ইস্পাতে তখন ঠিকরে পড়ে ঝলমলে রোদের আলো। বিকেলের পর বদলে যায় এর রূপ ও রঙ। অনবদ্য সে দৃশ্য!

দু’চোখ ভরে দেখে নিলাম। ক্যামেরাও সচল হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। আর তখনই হঠাৎ বৃষ্টি! মালয়েশিয়ার আবহাওয়াটাই নাকি এমন। এই রোদ, এই মেঘ, এই বৃষ্টি। আর মে মাস থেকে তো ওদের বর্ষাকাল শুরু। আমরা দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নিলাম পোর্চে। আমাদের সাথে বেশ কিছু বিদেশি পর্যটক। তাদের অধিকাংশই ভারতীয়। গ্র্যাবের ড্রাইভার বলেছিল, মালয়েশিয়া ভারতীয়দের ফ্রি ভিসা দিচ্ছে। তাই কলকাতা থেকে চেন্নাই সব রাজ্য থেকে পর্যটকের ঢল নেমেছে দেশটিতে।

 

হিন্দি-বাংলা-তামিল-ইংরেজি কলকাকলি শুনতে শুনতে সেই বৃষ্টিও উপভোগ করলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আশপাশের ভবনগুলো আর রাস্তায় জ্বলে উঠলো ঝলমলে আলো। তবু টুইন টাওয়ার তার আলোকছটা নিয়ে স্বমহিমায় প্রোজ্জ্বল। বৃষ্টি থামতেই আমরা আবার ফিরে গেলাম সামনের ফোয়ারা আর বাগানের দিকটায়। সেখান থেকে জমজ মিনার দেখে চলেছি। আশ মিটছে না। তবু ফিরতে হলো।

এর পরের দিন বুধবার সকালে আবার গেলাম। একটু বেলা হয়ে গিয়েছিল। ১২টায় যখন টিকিট কাটতে বেইজমেন্টে গেলাম, তখন জানা গেলো, বেলা ২টার আগের সব টিকিট শেষ। বলে রাখি, এরা টিকিট দেয় সকাল ১০টা থেকে। দর্শনার্থীরা রাত ৮টা পর্যন্ত ভেতরে ঢুকতে পারবেন। তবে প্রতিটি টিকিট ৪৫ মিনিটের জন্য। টিকিটের মূল্য বিদেশিদের জন্য জনপ্রতি ১৯৮ রিংগিত (বাংলায় ৫ হাজার টাকা)।

এই ভবনের নীচতলায় যে একটা বিশাল শপিংমল আছে, সেটা কিন্তু সপ্তাহে সব দিন খোলা থাকে। সেটা নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আমরা ১২টা থেকে ২টা, এই দুই ঘণ্টা কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবিত।

কাজী মনজুর করিম মিতুল

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com