রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে টার্কিশ এয়ারলাইন্স আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৩ সালের ২০শে মে। প্রাথমিক ভাবে ৫টি ছোট ইঞ্জিন দ্বারা চালিত বিমান দিয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্স কার্যক্রম শুরু করে। যেগুলোর ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ৭ জন যাত্রী।
আজ আমরা জানবো টার্কিশ এয়ারলাইন্স সম্পর্কে অজনা ১০টি তথ্য। যা আপনার ভ্রমণকে করতে পারে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময়।
১. বিশ্বের ১১৮টি দেশে সেবা প্রদান
২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১২৪টি দেশের ৩০৬টি গন্তব্যে চলাচল করে টার্কিশ এয়ারলাইন্স। এমনকি সোমালিয়া, আফগানিস্তানসহ আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশেও প্রতিষ্ঠানটি সেবা প্রদান করছে। এয়ারলাইন্সটির প্রধান কার্যালয় তুরস্কের ইস্তানবুলে অবস্থিত।
২. ইউরোপের শ্রেষ্ঠ বিমান সংস্থা
আশির দশকে টার্কিশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন কঠিন সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। মানহীন গ্রাহক সেবা ও ফ্লাইট বিলম্বের জন্য এর দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে। উপায় না দেখে নতুন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়োগ দেয়া হয়। নতুন কৌশল অবলম্বন করে ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ শুরু করা হয়। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১১-১৬ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বার ইউরোপের সেরা এয়ারলাইন্স হিসেবে নির্বাচিত হয় টার্কিশ এয়ারলাইন্স।
৩. প্রথম জেট বিমান
দ্বৈত-ইঞ্জিন ও এক করিডোর বিশিষ্ট ম্যাকডোনাল ডগলাস ডিসি-৯ ছিল টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর প্রথম জেট বিমান। ১৯৬৭ সালে এই ডিসি-৯ জেট দিয়ে তারা এক নতুন যুগের সূচনা করে। মডেল ভার্সন এবং আসন ব্যবস্থা ভেদে এই বিমান ১৩৫ জন পর্যন্ত যাত্রী বহন করতে পারে। ডিসি-৯ কেনার ঠিক ৪ বছর পর তারা ৩টি নতুন বোয়িং ৭০৭ তাদের সেবায় অন্তর্ভুক্ত করে। টার্কিশ এয়ারলাইন্স-এর বোয়িং ৭০৭ খুব দ্রুত ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন রুটে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং এনে দেয় ব্যবসায়িক সফলতা। কিছুদিন আগে টার্কিশ এয়ারলাইন্স তাদের ৩০০তম বিমান হিসেবে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ক্রয় করে।
৪. লিওনেল মেসি ও কোব ব্রায়ান্ট বাণিজ্যিক মুখপাত্র
যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল কিংবদন্তী কোব ব্রায়ান্ট ও বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে ২০১৩ সালে টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করতে দেখা যায়। যেখানে এই দুই তারকাকে মস্কো, কেপ টাউন ও মালদ্বীপের মত জনপ্রিয় সব স্থানে সেলফি তুলতে তুলতে একে অপরকে তাড়া করতে দেখা যায়। ইউটিউব এই বিজ্ঞাপনকে এই দশকের সেরা বিজ্ঞাপন হিসেবে পুরস্কৃত করে।
৫. তুরস্ক থেকে সিডনি
টার্কিশ এয়ারলাইন্স ২০১৬ সালে তুরস্ক থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট চালু করে। যেটি পৃথিবীর দীর্ঘতম ফ্লাইট গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটিই পৃথিবীর সর্বপ্রথম ফ্লাইট যেটি ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়া সরাসরি চলাচল করে। দুই দেশের মধ্যকার দূরত্ব ১৪,৮৬৮ কিলোমিটার।
৬. আফ্রিকায় দ্রুত প্রসার
টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর মত এতটা দ্রুততার সাথে আর কোন এয়ারলাইন্স তাদের সেবার প্রসার ঘটায়নি। ২০১৫ তে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলীয় শহর ডারবানকে টার্কিশ এয়ারলাইন্স তাদের ৪৫তম আফ্রিকান গন্তব্য হিসেবে ঘোষণা করে। সোমালিয়ার রাজধানী মুগাদিশুতে চলাচলকারী একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা হল টার্কিশ এয়ারলাইন্স। দেশটির নতুন বিমানবন্দর টার্মিনাল তৈরিতেও সাহায্য করে টার্কিশ এয়ারলাইন্স।
৭. বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
লন্ডন, প্যারিস এবং ফ্রাঙ্কফুর্ট-এর পরে ইউরোপের চতুর্থ ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ব্যস্ততার দিক থেকে এর অবস্থান ১৩তম। শুধুমাত্র টার্কিশ এয়ারলাইন্স-এর কারণে প্রতিবছর যাত্রী সংখ্যা ১০% হারে বাড়ছে এই বিমানবন্দরে। বর্তমানে এই বিমানবন্দর ধারণক্ষমতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর অবস্থানের কারণে বিমানবন্দরটিকে আর সম্প্রসারণ করা সম্ভব না। তাই তুরস্কে নতুন সুবিশাল বিমানবন্দর নির্মাণাধীন রয়েছে। যার ভেতর থাকবে ৬টি রানওয়ে। যেখানে বছরে প্রায় ১৫ কোটি যাত্রী উঠানামা করা সম্ভব হবে।
৮. ১৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের দীর্ঘতম ফ্লাইট
টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট টিকে-৯ আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ১৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিট পর লস এঞ্জেলেসে অবতরণ করে। যাত্রীরা হয়তো জানেও না তারা এই বিমানের দীর্ঘতম ফ্লাইট শেষ করে নামলেন। ১৪,০০০ কিলোমিটারের এই ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বিমানযোগে। ইস্তানবুল থেকে সান ফ্রান্সিসকো বা সাও পাওলো যাওয়ার ফ্লাইটের ব্যবধান ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। যা লস এঞ্জেলেস-এর ফ্লাইট থেকে মাত্র ২০ মিনিট কম।
৯. যাত্রা শুরু
রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে টার্কিশ এয়ারলাইন্স আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৩ সালের ২০শে মে। প্রাথমিক ভাবে ৫টি ছোট ইঞ্জিন দ্বারা চালিত বিমান দিয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্স কার্যক্রম শুরু করে। যেগুলোর ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ৭ জন যাত্রী। এই ৫টি বিমানের একটি ছিল কার্টিস কিংবার্ড। কিংবার্ড নামের এই বিমান ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২৯ কিলোমিটার গতিতে ৪১৫ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারতো। কিংবার্ডের ২ ইঞ্জিনের সমন্বয়ে উৎপন্ন হত প্রায় ৩০০ অশ্বশক্তি। যেখানে বর্তমানে বোয়িং ৭৭৭ এর একটি ইঞ্জিন একাই ১১০,০০০ অশ্বশক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম।
১০. আতাতুর্ক বিমানবন্দরের চলাচল বেড়েছে
আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০১০ সালে ৩২ মিলিয়ন যাত্রী উঠানামা করে। মাত্র ৫ বছর পর এই সংখ্যা উঠে দাঁড়ায় ৬১ মিলিয়নে। দ্রুত ক্রমবর্ধমান বিমানবন্দরের মধ্যে দুবাইয়ের আমিরাত বিমানবন্দর ও আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্যতম। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি বিমান উঠানামার কারণে ফ্লাইট বর্জন ও বিলম্বের জন্য ইউরোপের মধ্যে বেশ দুর্নাম অর্জন করে ফেলেছে আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে খুব শীঘ্রই ইস্তানবুলের উত্তরে নতুন সুবিশাল বিমানবন্দর খুলে দেয়া হবে এবং আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।