শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

টাকা দিলেই কি অস্ট্রেলিয়া যাওয়া যায়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ফলে সহজেই বোঝা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের চাহিদা অন্যান্য সময়ের মতো এখনো শীর্ষে। এই বসবাসের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়ার প্রাথমিক কিছু বিষয় ও ধাপ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অস্থায়ীভাবে বসবাস বা প্রবেশের একদম প্রাথমিক কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, শিক্ষা ও কাজ। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে বসবাস বা প্রবেশের কয়েকটি কারণ হচ্ছে ব্যবসা, মানবিক সম্পর্ক ও আশ্রয়। এ কারণগুলোকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার প্রকারভেদ হয়ে থাকে। যদিও অস্ট্রেলিয়ার ভিসার প্রকারভেদ সত্তরের অধিক। আবেদনকারীকে প্রথমে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে হবে কোন ভিসায় তিনি আবেদন করবেন।

ভিসাসংক্রান্ত সব তথ্য অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। ভিসাসংক্রান্ত সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতের কাছে রেখে আবেদন করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ ভিসাই আবেদন করা যায় অভিবাসন বিভাগের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের ‘ইমিঅ্যাকাউন্টের’ মাধ্যমে। শুধু মা–বাবা ও সন্তানের ভিসাসহ হাতে গোনা কয়েকটি আবেদনপত্র সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের বিভিন্ন অফিসে জমা দিতে হয়। বলা হয়, ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়ার দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনপ্রক্রিয়া বিশ্বের অন্যতম সহজ পদ্ধতি। কারণ, অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের প্রায় অনেক ভিসাতেই সরাসরি সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন পড়ে না। ভিসাসংক্রান্ত কাজের মধ্যে শুধু আবেদনকারীর ছবি ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য সরকারের নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়, যা ঘণ্টা দুয়েকের কাজ।

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজানো রয়েছে, চাইলেই একজন আবেদনকারী নিজেই ভিসা আবেদন করতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ায় একজন অভিবাসন আইনজীবী শুধু ভিসা আবেদনসংক্রান্ত কাজ করেন, এমনটি নয়, ভিসা বাতিল, প্রত্যাখ্যান ও আরও কিছু জটিল ইস্যুতে কাজ করেন। এ ছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার ভেতরে ভিসাসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে অভিবাসন আইনজীবীসহ নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া কোনো রকম পরামর্শ, সহযোগিতা ও প্রতিনিধিত্ব করা অবৈধ। ভিসাসংক্রান্ত যেকোনো সহায়তা দেওয়ার আইনি ক্ষমতা কেবল একজন অভিবাসন আইনজীবীরই রয়েছে। এই অভিবাসন আইন নিয়ে কাজ করা পেশাজীবীদের বাংলায় অভিবাসন আইনজীবী বলা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনসংক্রান্ত কাজ করা এই পেশাজীবীদের কয়েকটি স্তরে অবিহিত করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ‘রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্ট’, ‘ইমিগ্রেশন সলিসিটার’, ‘স্পেশালিস্ট ইমিগ্রেশন লয়ার’।

সম্প্রতি আরও কয়েক ধরনের আইনজীবীকেও অভিবাসনসংক্রান্ত সেবা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে সবাইকেই নিবন্ধনের আওতায় আসতে হয়। যেকোনো ভিসায় আবেদনকারীকে ভিসাসংক্রান্ত সব কাজেই সহায়তা প্রদানসহ আবেদনকারীর নিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে অভিবাসন বিভাগে প্রতিনিধিত্ব করা, আবেদনপত্র জমা দেওয়া, ভিসা ফি গ্রহণ, জমা দেওয়া ইত্যাদি যেকোনো কাজ করার আইনি অনুমতি রয়েছে। এ ছাড়া ভিসা প্রত্যাখ্যান বা বাতিল হলে সরকারের সে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আবেদনকারীর পক্ষে লড়াই করার কাজও করেন এই অভিবাসন আইনজীবীরা।

কোনো অভিবাসন আইনজীবী বা তৃতীয় কোনো মাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে একজন আবেদনকারী তাঁর ভিসাসংক্রান্ত কোনো বিষয় জানতে এবং ভিসার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় কারও সহায়তা নিতে পারেন।

তবে আবেদনকারীকে যেকোনো সেবা প্রদান করার আগে সরকারি কাগজে দুই পক্ষেরই স্বাক্ষর দিতে হয়। আর একজন অভিবাসন আইনজীবীর সব তথ্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারের ‘মাইগ্রেশন এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন অথোরিটি’–র ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত থাকে, যা যে কেউ যাচাই করতে পারেন। এর জন্য আবেদনকারীকে একজন অভিবাসন আইনজীবী তাঁর নিবন্ধিত নম্বর অবশ্যই প্রদান করবেন।

একজন অভিবাসন আইনজীবী আবেদনকারীকে সহায়তাকালে কখনোই ভিসা পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেন না। এই ক্ষমতা কেবল অস্ট্রেলিয়া সরকারের অভিবাসন বিভাগের রয়েছে—এমনটা সেবা প্রদানের চুক্তিতেও উল্লেখ থাকে। ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে কোনো বাড়তি অর্থের লেনদেন তো নয়ই, বরং ভিসা মঞ্জুর হবে, এমন কোনো গ্যারান্টি দেওয়াও আইনবিরোধী। অভিবাসন আইনজীবীদের ‘কোড অব কনডাক্ট’ নামের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো আবেদনকারীকে ভিসার নিশ্চয়তা দেওয়াই একটি অপরাধ। এমনকি ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে একজন অভিবাসন আইনজীবী নিয়োগ করলে বাড়তি কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে—এমন ধারণাও দেওয়া নীতিবিরোধী। এ জন্য একজন অভিবাসন আইনজীবীর সেবা প্রদানের লাইসেন্স বাতিল হওয়া থেকে শুরু করে জরিমানা, এমনকি জেলও হতে পারে।

সুতরাং, যেখানে অস্ট্রেলিয়া সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত একজন অভিবাসন আইনজীবীই ভিসার ফলাফল নিয়ে কিছু বলতে পারেন না, সেখানে শুধু অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন কিংবা তাঁদের সঙ্গে যুক্ত কোনো ব্যক্তি ভিসা নিয়ে দিতে পারবেন—এ রকম ধারণা মোটেও সঠিক নয়। শুধু প্রবাসী পরিবারের সদস্য ব্যতীত ভিসাসংক্রান্ত কোনো সহায়তার জন্য অন্য কারও দ্বারস্থ হওয়া মানেই একটি বিপদের আশঙ্কাকে আমন্ত্রণ জানানো।

ভিসাসংক্রান্ত যেকোনো তথ্য প্রাথমিকভাবে একজন আবেদনকারী নিজেই অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারেন। এরপরও যদি কেউ তাঁর পক্ষে কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চান, তাহলে শুরুতেই সেই অভিবাসন আইনজীবীর তথ্য www.mara.gov.au ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নিতে হবে। এরপর ভিসা আবেদনপত্রের সব আপডেট একজন ব্যক্তির তাঁর ইমিঅ্যাকাউন্টে দেখার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ভিসার ফি কত পরিশোধ করা হলো, কোন কোন কাগজ জমা দেওয়া হলো—এসব তথ্যও দেখা যায়। এ বিষয়গুলো কেউ নিশ্চিত করলে সাধারণত প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।

আবার অনেকে শরণার্থী হিসেবে প্রোটেকশন ভিসায় আবেদনের কথা বলেন থাকেন আইনজীবী পরিচয়ে প্রতারকেরা। কিন্তু এ ভিসাগুলো এত সহজ নয়, কারণ অস্ট্রেলিয়াসহ প্রতিটি উন্নত দেশের কাছেই বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির আপডেট তথ্য থাকে এবং প্রোটেকশন ভিসায় মাত্রাতিরিক্ত যাচাই-বাছাই করে অভিবাসন বিভাগ। ফলে, কোনো রকম এটা-সেটা বলে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পদ্ধতি অত্যন্ত নিখুঁত। তথ্যপ্রযুক্তি ও সমৃদ্ধ নিজস্ব তথ্যভান্ডারের জোরে তারা হয়তো বাংলাদেশের একটি জেলা-উপজেলা কিংবা একটি নির্দিষ্ট বিশেষ এলাকার ছোটখাটো তথ্য একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে কম জানে না।

শেষ কথা হলো, টাকা দিলেই অস্ট্রেলিয়ায় আসা যায় না। অস্ট্রেলিয়ার ভিসাপ্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছ। শুধু সচেতন হলেই প্রতারণার শিকার থেকে বেঁচে যেতে পারেন।

কাউসার খান অভিবাসন আইনজীবী ও সাংবাদিক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।kawsar.khan.au@gmail.com

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com