 
							
							 
                    অর্থে কেনা সুখ কথাটি একদমই মিথ্যে নয়। টাকার বিনিময়ে আজকাল সবই মেলে। এমন কি টাকা থাকলে আপনি হতে পারেন ভিনদেশের বৈধ নাগরিকও! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। টাকার বিনিময়ে চাইলেই পেতে পারেন নাগরিকত্ব। আলোচিত এমন কিছু দেশের কথা জেনে নেয়া যাক, যেখানে টাকা দিলেই পাবেন নাগরিকত্ব।
তুরস্ক : বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশ তুরস্ক। ইউরোপীয় কালচারের এশিয় দেশ তুরস্ক বসবাসের জন্য অন্যতম আদর্শিক পছন্দ হতে পারে। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, সাতটি উপায়ে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য উপায় হলোÑ চার লাখ ডলার মূল্যমানের রিয়েল এস্টেট সম্পদ কেনা।
জর্ডান : ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী আরব দেশ জর্ডান। মরুভূমি এবং ডেড সীর (মৃত সাগর) দেশটিতে টাকার বিনিময়ে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ রয়েছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস অনুসারে, দেশটিতে বিনিয়োগের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প হলো- কোন প্রকল্পে ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করা, যা দেশটির রাজধানী আম্মানের বাইরে অবস্থিত একটি কমিউনিটিতে কমপক্ষে ১০টি স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি করে। আর মূলধন প্রকল্পগুলোতে ন্যূনতম ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।
অন্যান্য বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে- ন্যূনতম তিন বছরের জন্য সেন্ট্রাল ব্যাংক অব জর্ডানে (সিবিজে) ১০ লাখ ডলার ডিপোজিট করা, অথবা ১০ লাখ ডলার মূল্যমানের ট্রেজারি বন্ড কেনা এবং ছয় বছরের জন্য রাখা।
অভিবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য চূড়ান্ত বিকল্প হলোÑ জর্ডানভিত্তিক একটি কোম্পানির শেয়ার কেনা, যার মূল্য কমপক্ষে ১৫ লাখ ডলার।
অস্ট্রিয়া : হিটলারের জন্মভূমি এবং ইউরোপের ঐতিহাসিক একটি দেশ অস্ট্রিয়া। দেশটির নাগরিক হতে পারবেন আপনিও। তবে এর জন্য আপনাকে গুণতে হবে ৯৫ লাখ ডলার। অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব আইনের ধারা ১০ (৬)-এর অধীনে দেশটির সরকার ‘অসাধারণ যোগ্যতা’ সম্পন্ন বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদান করে থাকে। এসব অসাধারণ যোগ্যতার মধ্য রয়েছেÑ বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক বা অর্থনৈতিকভাবে অস্ট্রিয়ায় অবদান রাখা।
তবে আবেদনকারীদের অবশ্যই অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিতে সরাসরি বিনিয়োগ করতে হবে। নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের নির্দিষ্ট পরিমাণ স্পষ্ট নয়। তবে ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়, এই অঙ্ক প্রায় ৯৫ লাখ ডলার।
মাল্টা : ইতালির উপকূলের একটি দ্বীপরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য মাল্টা। অনিন্দ্য সুন্দর এবং বিলাসবহুল এই দেশটির নাগরিকত্বও চাইলে কিনে নিতে পারেন। এর জন্য আপনার আনুমানিক খরচ হবে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ইউরো থেকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ইউরো।
আন্তর্জাতিক আর্থিক কেলেঙ্কারির রেকর্ড থাকায় দেশটিতে এখন বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইইউ এখন সদস্য দেশগুলোতে গোল্ডেন পাসপোর্টের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে।
কঠিন হলেও মাল্টার নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ বন্ধ নয়। এর জন্য মানতে হবে কিছু শর্ত। এগুলো হলোÑ ১. কমপক্ষে ৭ লাখ ইউরো মূল্যমানের রিয়েল এস্টেট কেনা। ২. মাল্টার অর্থনীতিতে ৬ লাখ ইউরো থেকে এবং সাড়ে ৭ লাখ ইউরোর অতিরিক্ত অবদান। ৩. অনুমোদিত যেকেনো বেসরকারি সংস্থায় ১০ হাজার ইউরো অনুদান। ৪. আবেদনকারীকে বৈধ আবাসিক কার্ডধারী হতে হবে। মাল্টায় ১২ থেকে ৩৬ মাস থাকার পর বছরে সর্বনিম্ন ১৬ হাজার ইউরো মূল্যমানের লিজের অধীনে এই কার্ড দেয়া হয়।
মন্টিনিগ্রো : মন্টিনিগ্রোর সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, আবেদনকারীরা রাজধানী পোদগোরসিয়ার যেকোনো প্রকল্পে সাড়ে ৪ লাখ ইউরো অথবা রাজধানীর বাইরের এলাকায় আড়াই লাখ ইউরো বিনিয়োগ করার মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভের আবেদন করতে পারবেন। একইসঙ্গে মন্টিনিগ্রোর উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন তহবিলে ২ লাখ ইউরো দান করেও নিতে পারবেন।
অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা : দেশটির সরকারি তথ্য অনুসারে চারটি উপায়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল বিকল্প হলো- দেশটির জাতীয় উন্নয়ন তহবিলে এক লাখ ডলার অনুদান। অথবা আবেদনকারীরা চাইলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় লাখ ডলার দান করতে পারেন।
আবেদনকারীরা কমপক্ষে চার লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ আবাসন খাতে (রিয়েল এস্টেট) বিনিয়োগ করতে পারেন। এর প্রসেসিং ফি রয়েছে আরো ৩০ হাজার ডলার।
ডমিনিকা : কমনওয়েলথ অব ডোমিনিকা সরকারের মতে, বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্যারিবীয় দ্বীপ ডোমিনিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার দুটি উপায় রয়েছে। প্রথমটি হলো- দ্বীপের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তহবিলে এক লাখ ডলার দান করা এবং দ্বিতীয়টি হলোÑ অনুমোদিত উন্নয়নে দুই লাখ ডলার মূল্যমানের আবাসন কেনা।
গ্রেনাডা : গ্রেনাডা ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য দুটি উপায় রয়েছেÑ ন্যাশনাল ট্রান্সফরমেশন ফান্ডে দেড় লাখ ডলার দান করা, যা পর্যটন, কৃষি এবং বিকল্প জ্বালানিসহ বিভিন্ন শিল্প প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এ ছাড়া কমপক্ষে ২ লাখ ২০ হাজার ডলার মূল্যমানের একটি সম্পত্তি কেনা। তবে সেই কেনা সম্পত্তি চার বছরের আগে বিক্রি করা যাবে না।
সেন্ট কিটস এবং নেভিস : দেশটিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার তিনটি উপায় রয়েছে। প্রথমটি হলো টেকসই উন্নয়ন তহবিলে দেড় লাখ ডলার দান করা। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিকল্প শক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রচারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্প চালু করা হয়।
দ্বিতীয়ত, আবেদনকারী ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার অবদান রাখতে পারেন। তৃতীয় এবং চূড়ান্ত বিকল্প হলোÑ কমপক্ষে ২ লাখ ডলার মূল্যমানের একটি অনুমোদিত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ করা।
সেন্ট লুসিয়া : সেন্ট লুসিয়া পূর্ব ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত একটি আগ্নেয় দ্বীপ। দেশটির বিনিয়োগ অভিবাসন কাউন্সিল অনুসারে, চারটি ভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পের বিনিময়ে দেশটি নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে।
সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল উপায় হলোÑ দ্বীপের জাতীয় অর্থনৈতিক তহবিলে এক লাখ ডলার অনুদান। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগে আগ্রহীরা কমপক্ষে তিন লাখ ডলার মূল্যমানের সম্পত্তি কিনতে পারেন, যা পাঁচ বছরের আগে বিক্রি করা যাবে না।
নর্থ মেসিডোনিয়া : নর্থ মেসিডোনিয়ায় নাগরিকত্বর জন্য দুটি উপায় রয়েছেÑ ব্যক্তিগত বিনিয়োগ তহবিলে ২ লাখ ইউরো বিনিয়োগ এবং রেস্তোরাঁ বা শপিং সেন্টার নির্মাণে ৪ লাখ ইউরো বিনিয়োগের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
এছাড়াও থাইল্যান্ডে ন্যূনতম ১৯ হাজার ডলার ফি, লাটভিয়া ন্যূনতম ৬০ হাজার ইউরো, পানামা ন্যূনতম ৪০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেও নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ রয়েছে।