বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ায়ও ‘ফ্লাইটের স্বপ্ন’

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিমানবন্দর ক্যাটাগরি-২-এ উন্নীত না হলে নিউ ইয়র্কে সরাসরি ফ্লাইট সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাভিয়েশন সেক্টরের সঙ্গে। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি বিমানবন্দর ক্যাটাগরি-২-এ উন্নীত না হলে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু হবে না।

শর্ত দেওয়ার পর হযরত শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েকটি মেগা প্রকল্প নিয়েছে বেবিচক। কাজও শুরু হয়ে গেছে। থার্ড টার্মিনালের পরিচালনাগত কার্যক্রম শুরু করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শাহ আমানতের প্রকল্পের কাজও চলছে। শাহজালাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের দিকেই বেশি ঝুঁকেছে কর্তৃপক্ষ। এসবের জন্য ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বাজেট ধরা হয়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় প্রাক্কলিত বাজেটের সঙ্গে ৫৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার ব্যয় বেড়েছে। বাড়তি অর্থ চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

অ্যাভিয়েশন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত বৈরী আবহাওয়া বা ঘন কুয়াশার কারণে পাইলট খালি চোখে রানওয়ে দেখতে না পারলে নিরাপদে অবতরণের জন্য বিমানবন্দরগুলোতে আইএলএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইলট বেতার তরঙ্গের সাহায্যে সহজেই রানওয়ের অবস্থান শনাক্ত করে ফ্লাইট অবতরণ করাতে পারে।

বর্তমানে ঢাকার শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে আইএলএস আছে তার প্রত্যক্ষণসীমা (পারসেপটিবিলিটি) ৮০০ মিটার। শীতকালে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই বিমানবন্দরের রানওয়েতে এ প্রত্যক্ষণসীমা নেমে আসে ৫০ মিটার থেকে শূন্য মিটারে। পুরনো আইএলএস প্রযুক্তির কারণে গত বছরও ফ্লাইট বিপর্যয় ঘটেছে। নামতে না পেরে অনেক ফ্লাইটকে ঢাকার বাইরে বা পাশের দেশের বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়েছে। এতে এয়ারলাইনসগুলোর খরচ বাড়ে।

জানা গেছে, শাহজালাল ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়নের বিষয়ে পাঁচ মাস আগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন। সভায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধিসহ খরচ ৫৪ কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৯ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল।

ইতিমধ্যে রানওয়ের শোল্ডার ও ওভার রানওয়েসহ ট্যাক্সিওয়ের চূড়ান্ত স্তরের পেভমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। ওই বৈঠকে জানানো হয়, রানওয়ের সাইড স্ট্রিপ, গ্রেডিং ও ড্রেনেজ কাজ শেষ হয়েছে। তবে এজিএল সিস্টেম ক্যাটাগরি-২-এর কাজসহ প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপি ও এ-সংক্রান্ত ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনসাপেক্ষে আর্থিক কার্যাদি শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, আগের চেয়ে উন্নতমানের বিমানবন্দর গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে বেবিচক। অবসরে যাওয়া বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম মফিদুর রহমান একাধিক প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। তার আমলে প্রকল্পের কাজও ছিল বেশ বেগবান।

ইতিমধ্যে বেবিচকের নতুন চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনরা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। চেয়ারম্যান বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করছেন। যেকোনো উপায়ে ক্যাটাগরি-২ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সে আলোকেই শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আরও আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গত তিন দশকে টার্মিনাল ভবন, কার্গো কমপ্লেক্স, এয়ারক্রাফট পার্কিং-ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক রাডার ও বডি স্ক্যানারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিতে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। মিলেছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি। নতুন করে দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেবিচক। প্রকল্পগুলো হচ্ছে রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে সংহতকরণ এবং বোর্ডিং ব্রিজ ও কানেকটিং করিডোর নির্মাণ। কাজ শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে বিমানবন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে খারাপ আবহাওয়ায় অবতরণ-উড্ডয়নের সক্ষমতা বাড়বে। যাত্রী ও বিমান সংস্থাগুলোর ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। এ মাসেই শেষ হচ্ছে আইএলএস-২ সিস্টেম স্থাপনের কাজ।

এ সিস্টেমকে আইএলএস-৩-তে রূপান্তরের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এটা হলে শাহজালাল ও শাহ আমানতে প্রচণ্ড খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও বিমানের ওঠানামায় সমস্যা হবে না।

বেবিচক বলছে, বিমানবন্দরে স্থাপিত আইএলএস-১ অনেক পুরনো প্রযুক্তি। খারাপ আবহাওয়া বা কুয়াশায় এটির পারসেপটিবিলিটি বা প্রত্যক্ষণসীমা বেশ কম ছিল। আইএলএস-২ প্রযুক্তি বসানোর পর এটি আরও বাড়বে। রানওয়েতে অনায়াসে নিরাপদে বিমান ওঠানামা করতে পারবে।

বেবিচক সূত্র জানায়, শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে বর্তমানে পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালু আছে। আগামী ছয় মাসে আরও পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বাড়ানোর সুযোগ নির্ভর করে যাত্রীর চাহিদার ওপর। নতুন প্রকল্পের ফলে বিমান চলাচল সুবিন্যস্ত ও নিরাপদ হবে। প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের কার্যক্ষমতা বাড়বে। রানওয়ের লাইটিং সিস্টেমের উন্নয়ন হলে আরও কম প্রত্যক্ষণসীমায় বিমান অবতরণ করতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর শুরু হওয়া আইএলএস-২ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগির পরীক্ষামূলকভাবে ফ্লাইট শুরু হবে। এরপরও আবহাওয়া বেশি খারাপ হলে ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখার জন্য ঢাকার বাইরে বিমানবন্দর প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য জানান, আগামী মাসের প্রথম দিকে বিদেশি একটি ফ্লাইট দিয়ে এটির পরীক্ষামূলক শুরু হবে। এখনো শিডিউল হয়নি। এরপর আইকাওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ২৮ দিন পর অপারেশনে যাওয়া যাবে। ধাপ-২ সম্পন্ন হলে ধাপ-৩-এ উন্নীত হওয়া সহজ হবে। ৫ কোটি ডলার দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আইএলএস-২ প্রযুক্তি কেনা হয়েছে। শাহজালালে গত ১-১৪ অক্টোবর প্রতিদিন রাতে সাড়ে তিন ঘণ্টা মেইনটেনেন্স ও আইএলএস-২ ইনস্টলেশনের জন্য রানওয়ের কার্যক্রম ও ফ্লাইট অপারেশন সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়। কারিগরি কাজ শেষ হয়েছে। শাহ আমানত ও ওসমানীতে একই সরঞ্জাম বসানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com