১। জ্যামাইকা প্রথমে একটি স্পেনীয় উপনিবেশ ছিল; তখন এর নাম ছিল সান্তিয়াগো। ১৬৭০ সালে এটি একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৮শ শতকে এখানকার চিনির প্ল্যান্টেশনের মালিকেরা আফ্রিকা থেকে দাস নিয়ে আসা শুরু করেন। বর্তমানে দ্বীপটির সংস্কৃতি ও রীতিনীতিতে ব্রিটিশ ও আফ্রিকান মূলধারার মিশেল ঘটেছে। জ্যামাইকা ১৯৬২ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এখানে রাজনীতিতে দুইটি পরস্পর বিরোধী দলের শক্তিশালী আধিপত্য।
দ্বীপটিতে বসবাসরত আরাওয়াকান-ভাষী আদিবাসী আমেরিকান তাইনো জাতির লোকেরা দ্বীপটির নাম দেয় Xaymaca। এখান থেকেই দ্বীপটির নামকরণ জ্যামাইকা করা হয়েছে; শব্দটির অর্থ “কাঠ ও পানির দেশ”। দুই আমেরিকা মহাদেশের ইংরেজিভাষী দেশগুলির মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে এটি ৩য় বৃহত্তম (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পরেই)।
২। ১০ হাজার ৯৯১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।
৩। দেশটির প্রধান ধর্ম হছে খ্রিস্টধর্ম। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী।
৪। দেশটির সরকারী ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। তবে দেশটির জাতীয় ভাষা জামাইকান প্যাটোয়া।
৫। জ্যামাইকার রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর কিংস্টন। শহরটি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। ৪৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরটিতে মোট ৬৭ হাজার মানুষের বসবাস।
৬। জ্যামাইকার জলবায়ু উষ্ণ এবং আর্দ্র। এককথাই দেশটিতে গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়া বিরাজমান।
৭। জ্যামাইকা ক্যারিবিয়ানের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ।
৮। কিংস্টন হারবার বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম প্রাকৃতিক হারবার, যা ১৮৭২ সালে কিংস্টনকে দেশটির রাজধানী হিসাবে মনোনীত করতে বড় অবদান রাখে।
৯। জামাইকার প্রধান কৃষি রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কলা, চিনি এবং কফি।
১০। জ্যামাইকাতে ৮টি ভিন্ন প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়। এবং এগুলি কেবলমাত্র জ্যামাইকাতেই পাওয়া যায়।
১১। জ্যামাইকা ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত বৃহত্তম ইংরেজিভাষী দ্বীপ।
১২। জ্যামাইকানরা সাধারণত সকালে ভারি নাস্তা, দুপুরে হালকা খাবার এবং রাতে পুনরায় ভারি খাবার খেয়ে থাকেন। তাদের খাবার মেনুতে থাকে কলা, সিফুড, কফি এবং ছাগলের মাংস।
১৩। বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় জ্যামাইকাতে প্রতি বর্গ মাইলে সবচেয়ে বেশি গীর্জা অবস্থিত।
১৪। জ্যামাইকা স্বাধীন একটি দেশ হলেও এটি ব্রিটিশ কমনওয়েলথ এর একটি সদস্য দেশ। যার অর্থ দেশটির আনুষ্ঠানিক শাসনকর্তা হচ্ছেন ২য় কুইন এলিজাবেথ। যদিও জ্যামাইকার একটি স্বাধীন সরকার ব্যবস্থা আছে এবং মূলত তারাই দেশ পরিচালনা করেন। রানী শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির প্রধান।
১৫। দেশটিতে বেশিরভাগ পরিবারের প্রধান হচ্ছেন নারীরা। বাচ্চাদের বড় করা এবং পরিবারকে সমর্থন করার জন্য মা হচ্ছেন প্রধান ব্যাক্তি।
১৬। দেশটিতে মেয়েশিশু জন্মের পর প্ল্যাছেন্টা অর্থাৎ গর্ভফুল সমাহিত করা একটি ঐতিহ্য। পরবর্তীতে মেয়েশিশুটির পরিবার ঐ একই স্থানে চারাগাছ রোপণ করে, যা পরবর্তীতে ঐ শিশুর গাছ হিসাবে পরিচিত হয়।
১৭। জ্যামাইকাতে পরিবারের কোন সদস্য মারা গেলে পরিবারটির অন্যান্য সদস্যরা ৯ দিন জেগে থাকেন শোক প্রকাশ করার জন্য। এই ৯ দিন প্রত্যেক রাত্রে পরিবারের সদস্যরা একসাথে শোকের গান গায়, মৃত ব্যাক্তির সৃতিচারন করেন এবং একে অপরের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে থাকেন।
১৮। বেশিরভাগ জ্যামাইকান তাদের অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যবহার করে না। এর পরিবর্তে, তারা খাদ্য এবং প্রকৃতির নিরাময় ক্ষমতার উপর বেশি নির্ভরশীল।
১৯। আবহাওয়া এবং জলবায়ু নিখুঁত থাকলে জ্যামাইকাতে “ব্লু মুন” দেখতে পাওয়া যায়। গত ৪০ বছরে দেশটিতে ১২ বার এই ঘটনাটি ঘটেছে।
২০। দেশটি ছাড়ার সময় পর্যটকদের $২২ মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১,৮০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়।
২১। প্রায় ৯০ শতাংশ জ্যামাইকার অধিবাসী আফ্রিকান বংশধর।
২২। “ব্লু মাউন্টেন কফি” বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত দামি কফি ব্র্যান্ড হিসাবে পরিচিত। এটি এই জ্যামাইকাতেই উৎপাদিত হয়।
২৩। জ্যামাইকা প্রথম ক্যারিবিয়ান দেশ ছিল যারা সেই ১৯৯৪ সালে তাদের দেশের প্রথম অফিসিয়াল ওয়েসাইট তৈরি করে।
২৪। জ্যামাইকান স্প্রিটার উসাইন বোল্টকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২৫। ক্রিকেট খেলোয়াড় ক্রিস গেইলকে তো অবশ্যয় চিনেন আপনারা। ক্রিস গেইল এর জন্মস্থানও কিন্তু এই জ্যামাইকা।
২৬। জ্যামাইকাতে রয়েছে প্রায় ৫০ টি উন্মুক্ত সমুদ্র সৈকত, যা পর্যটকদের জন্য সবসময়য়ের জন্য উন্মুক্ত। যা দেশটিকে পর্যটনের জন্য খুবই জনপ্রিয় করে তুলেছে।
২৭। জ্যামাইকা অনেক বছর ধরেই পর্যটনের জন্য বিশ্বের সেরা ৫ দেশের তালিকায় অবস্থান করছে।
২৮। জ্যামাইকার ম্যানচেস্টার গল্ফ ক্লাব পশ্চিম গোলার্ধের প্রাচীনতম গল্ফ ক্লাব।
২৯। দ্বীপটির প্রায় অর্ধেক অংশ সমুদ্রতল থেকে ১০০০ ফুট ওপরে অবস্থিত।
৩০। দ্বীপটির অর্ধেকেরও বেশি অংশ সাদা চুনাপাথর দিয়ে আচ্ছাদিত এবং এর নীচের স্তরে রয়েছে হলুদ চুনাপাথর।
৩১। রাম জ্যামাইকার জাতীয় পানীয়, এবং এটি আরো বিভিন্ন ধরনের পানীয় তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
৩২। জেমস বন্ডের লেখক, ইয়ান ফ্লেমিং, তার স্বপ্নের বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন এই জ্যামাইকাতেই। বাড়িটির নাম হচ্ছে “গোল্ডেন আই”।
৩৩। “আকি” এবং “সল্টফিশ” দেশটির জাতীয় খাবার।
৩৪। পশ্চিমা বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে জ্যামাইকাতেই সর্বপ্রথম রেলপথ তৈরি করা হয়।
৩৫। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাপতি “জায়ান্ট স্যালোটেইল” এই দেশেই পাওয়া যায়।
৩৬। জ্যামাইকার অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি, যা প্রধানত কৃষি, পর্যটন, খনি এবং উৎপাদন নির্ভর। জ্যামাইকার মোট বার্ষিক আয়ের অর্ধেকেরও বেশি পর্যটন থেকে আসে।
৩৭। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার।