তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং জে.কে রাউলিং।
একদিন সুসময় আসতে পারে ঠিক এইভাবেই। সেদিন উপহাস করা ব্যক্তিদের অবস্থা কি হতে পারে, কেউ বলতে পারে না।
টেমসের জলে কেউ ঝাঁপ দিল। গার্ড সঙ্গে সঙ্গে হুইশেল বাজালেন। জলরক্ষী বাহিনীর বোট ততক্ষণে উদ্ধার কাজে লেগে পড়েছে। উৎসাহীরা ভিড় জমিয়েছেন। কে ঝাঁপ দিল তখনও কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর উদ্ধারকারীরা যাকে তুলে আনলেন, সেই বছর তিরিশের মহিলা একটু আগেই বসে ছিলেন টেমসের তীরে। তার জ্ঞান ছিল না।
বাধ্য হয়েই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। যখন তার জ্ঞান ফিরল ডাক্তার বললেন, আপনি ঘুমের ওষুধ খেয়ে জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করলেন কেন ? কি এমন হয়েছে আপনার ? নির্বিকার মহিলা বললেন, আমার নাম জোয়ানি। আমি বাড়ি যাব। ডাক্তার বুঝলেন উনি অ্যাকিউট ডিপ্রেশনে ভূগছেন। তিনি তাই জোয়ানিকে একজন সাইকিয়াইট্রিস্টের পরামর্শ নিতে বললেন।
এর মাঝে অনেকদিন কেটে গেছে। জোয়ানির স্বামী তাকে পরিত্যাগ করেছেন। তার একটি সন্তানও আছে। জোয়ানির বাবার অমতে বিয়ে হওয়ায় জোয়ানির পৈতৃক বাড়িতেও তার ঠাঁই হলো না তার। অর্থনৈতিক অবস্থা এমন শোচনীয় হলো যে খাবার টুকু জোটাবার সামর্থ্য ছিল না জোয়ানির কাছে। এক সময় বাধ্য হলেন সন্তানকে সরকারি হোমের আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিতে। আরো একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু বন্ধুরা ঠিক সময় এসে পড়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান।
পেট চালাবার তাগিদে ক্যাফেতে কাজ নেন। কিন্তু তাতেও দেনার টাকা শোধ করা যাচ্ছিল না। এমনি একদিন ম্যাঞ্চেস্টার থেকে লন্ডনে যাবার ট্রেনে চাপলেন। যাত্রাপথে এক বিস্ময় বালককে নিয়ে একটা গল্পের প্লট হঠাৎই মাথায় এলো জোয়ানির। হাতের কাছে কিছু না থাকায় টিস্যু পেপারের ওপরেই লিখে ফেললেন গল্পটি। লন্ডনে পৌঁছে আবার ক্যাফেতে কাজ শুরু করলেন তিনি।
একদিন অপরাহ্নের বিরতিতে তার বন্ধু রবার্ট ঐ টিস্যু পেপারগুলি আবিষ্কার করলেন। এবং আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ লেখা কি তোমার জোয়ানি। নির্বিকার জোয়ানি শুধু ঘাড় নাড়লেন। রবার্ট বললেন, এক্ষুনি তার উচিত কোনো প্রকাশকের সঙ্গে দেখা করা।
কি মনে করলেন জানা নেই, তবে সেদিন কাজ সেরে এক প্রকাশকের কাছে তিনি ঐ পেপারগুলি দিয়ে এলেন।
এক সপ্তাহ পর সেই ক্যাফের ম্যানেজারের কাছে জোয়ানির জন্য একটা ফোন এলো। ফোনের ওপারে ছিলেন ব্লুমস্ বিউরি প্রকাশনা সংস্থার প্রধান সম্পাদক বেরি ক্যানিংহাম। উনি জোয়ানিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ঐ আশ্চর্য বালকের কাহিনীকে আরো বিস্তৃত আকারে লিখতে পারবেন কি ? জোয়ানি বললেন, হ্যাঁ পারব। কিন্তু আমার তো উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে তাহলে। বেরি বললেন, আপনাকে আমরা দৈনিক পারিশ্রমিক দেব। দয়া করে আপনি লিখুন। ক্যাফে ছাড়লেন জোয়ানি। মন দিলেন লেখায়। বাকিটা ইতিহাস।
সৃষ্টি হলো জগত বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ সিরিজ।
বিশ্ব জুড়ে চল্লিশ কোটি বই বিক্রি হলো রাতারাতি।
লেখিকা হলেন ৫৬০ কোটি ইউরোর মালকিন।
তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং জে.কে রাউলিং।
এই পৃথিবীতে প্রতিদিন অলৌকিক কিছু হচ্ছে। কে বলতে পারে কালকের দিনটা আপনার নয় !