শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন

জেলেপাড়া থেকে তারকাদের স্বর্গ যে শহর

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

কান, ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বের একটি সুন্দর বন্দরনগর। প্যারিস থেকে এ শহরের দূরত্ব স্থলপথে প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার বা ৫৮০ মাইল। আর খুব কাছের বড় নগরী নিস মাত্র ৩৬ কিলোমিটার বা ২২ মাইল দূরে। নিয়মিত বিমান ও ট্রেন যোগাযোগে কান পর্যটকদের পছন্দের একটি গন্তব্য।

কান শহরে দেখা পাওয়া যাবে সমুদ্রতীরের নৈসর্গিক দৃশ্যের বৈচিত্র্য। জলবায়ুর জাদুকরী ছোঁয়ায় প্রকৃতিও উদার এখানে। পাহাড়ের ঢালজুড়ে নানান রঙের, ঘ্রাণের ফুল, লেবু, কমলা, আঙুর আর জলপাইয়ের বাগান মন কাড়ে। তারপরও পর্যটকেরা এখানে আসেন অন্য কারণে, ভিন্ন টানে। সেই টান হলো, এ শহরে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় জাঁকজমকপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব।

সেই ১৯৪৬ সাল থেকে চলচ্চিত্র উৎসবে মেতে ওঠে ফ্রান্সের এই ছোট্ট শহর। প্রথমে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হলেও পরে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হয়ে মোট ১২ দিন ধরে চলে এই উৎসব। একে উপলক্ষ করে বিশ্বখ্যাত তারকাদের জমজমাট মেলা বসে কান শহরে।

শহরের কেন্দ্রে ঝরনাসহ লর্ড ব্রুঘামের ভাস্কর্য

শহরের কেন্দ্রে ঝরনাসহ লর্ড ব্রুঘামের ভাস্কর্য

বিশ্বজুড়ে ভক্তরা দেখেন তাঁদের প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা লালগালিচায় পা ফেলে হাজার ক্যামেরার ঝলসানি গায়ে মেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বিশাল এবং সুসজ্জিত প্রেক্ষাগৃহের প্রধান ফটকের দিকে।

এমন আয়োজন ঘিরে জড়ো হন নামকরা সব পরিচালক, প্রযোজক ও কাহিনিকার। দেখা পাওয়া যায় খ্যাতনামা স্টাইলিস্ট, সৌগন্ধিক, এমনকি তারকা শেফদের।

নব্যপ্রস্তর যুগ থেকে সমুদ্রতীরে পাহাড়ের অববাহিকায় মানুষের নিবাস গড়ে ওঠে। তবে এ শহর প্রাণ পায় উনিশ শতকে। ১৮৩৪ সালে লর্ড ব্রুঘাম নামে এক ইংরেজ অনেকটা উদ্দেশ্যবিহীন ঘুরতে আসেন কানে। তিনি এই ছোট গ্রাম খুব পছন্দ করেন। এখানেই জমি কিনে প্রাসাদসম এক শীতকালীন নিবাস নির্মাণ করেন। তাঁর দেখাদেখি, এক কান, দুই কান করে কানের খবর পৌঁছে যায় বহু ধনাঢ্য ইংরেজের কাছে। অনেকেই এ শহরে এসে দৃষ্টিনন্দন সব ইমারত নির্মাণ করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আজ এই শহরে দেখা পাওয়া যাবে বহু কোটিপতির বাড়ি আর বন্দরে বিলাসবহুল প্রমোদতরি।

কানের পুরোনো শহরের বাড়িতে বোগেনভেলিয়ার ঝাড়

কানের পুরোনো শহরের বাড়িতে বোগেনভেলিয়ার ঝাড়

কানের প্রায় সব রাস্তায় তালজাতীয় একধরনের সারিবদ্ধ গাছ চোখে পড়বে। রাস্তার মাঝখানে অপরূপ ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে নানান প্রজাতির ফুলগাছ। এখানে আছে বিস্তীর্ণ সাগরসৈকত। সৈকত থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার বা এক মাইলের কম দূরত্বে আছে মোট ৫টি ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি লারিনস দ্বীপপুঞ্জ। সেখানে পানির গভীরে আছে একটি অদ্ভুত জাদুঘর।

আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে সেই জাদুঘর পরিদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কান থেকে খুব বেশি দূরে নয় আনতিব, গ্রাস, নিস শহর এবং মোনাকো। পর্যটকদের জন্য অনেক আকর্ষণীয় এসব জায়গা।

কান শহরের প্রাণকেন্দ্রের রেস্তোরাঁগুলোতে বেশ ভিড় থাকে। দুপুর বা রাতের খাবারের জন্য খরচ করতে হবে ৩০ থেকে ৫০ ইউরো।একটু দূরে গেলেই ২০ থেকে ২৫ ইউরোতে এক বেলা ভালো খাবার পাওয়া যায়। রেস্তোরাঁয় বকশিশ না দিলে, মোটেও তা খারাপ চোখে দেখা হয় না। এ শহরে রয়েছে বিনোদনের নানান আয়োজন। আছে পর্যটকদের সব রকমের সুযোগ-সুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষের কড়া নজর। কান বহু স্থাপনায় জমজমাট পর্যটকবান্ধব, নিরাপদ একটি আধুনিক শহর। একসময়ের জেলেপাড়া কান এখন তারকাদের স্বর্গ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com