ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক বক্তব্যে শরণার্থী ও উদ্বাস্তু বিষয়ক জেনেভা কনভেনশনের নজিরবিহীন সমালোচনা করেছেন। তার এই বক্তব্যে উদ্বেগ জানিয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী শিবির, এনজিও, অধিকার সংস্থা ও অভিবাসন সংগঠনগুলো।
ব্রিটিশ সরকার কয়েক বছর ধরে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। দেশটির জাতীয় নির্বাচনে বাকি আছে বছরের বেশি কিছু সময়। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সরকার অভিবাসন সমস্যার সমধান ও এটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বক্তব্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মধ্য-ডানপন্থি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সামনে এক বক্তব্যে সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান জেনেভা কনভেনশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ১৯৫১ সালের ২৮ জুলাই প্রণীত জেনেভা কনভেনশনে মূলত ‘শরণার্থী’ শব্দটিকে আইনি মর্যাদায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। জাতিসংঘের ১৪৫টি সদস্য দেশে এটি অনুমোদিত।
কনভেনশন অনুযায়ী, সশস্ত্র সংঘাত, গৃহযুদ্ধ, জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, অধিকার গোষ্ঠীর সদস্য কিংবা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নিজের দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তি ‘শরণার্থী’ হিসেবে স্বীকৃত। শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্তরা আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষিত এবং তাদেরকে নিজ দেশে জোর করে ফেরত পাঠানো যায় না।
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান বলেন, ‘এটি ওই সময়ের জন্য একটি অবিশ্বাস্য অর্জন ছিল। তবে আমরা এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন যুগে বাস করছি। জেনেভা কনভেনশন বিশ্বজুড়ে অন্তত ৭৮ কোটি মিলিয়ন মানুষকে অন্য দেশে বসতি স্থাপনের তাত্ত্বিক অধিকার দেয়।’
তিনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শরণার্থী কনভেনশন এবং আমাদের আদালত যেভাবে এই কনভেনশনকে ব্যাখ্যা করেছে, তা আমাদের আধুনিক সময়ের জন্য উপযুক্ত কিনা অথবা এর সংস্কার প্রয়োজন আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।’
তিনি আরও যোগ করেন, শুধু একজন নারী অথবা সমকামী হিসেবে নিজের দেশে বৈষম্যের ভয়ে অন্য দেশে সহজে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পেলে আমরা আশ্রয় ব্যবস্থাকে ধরে রাখত পারব না।
তিনি দাবি করেন, ‘ফরাসি উপকূল থেকে নৌকায় চড়ে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থীরা কোন বিপদ থেকে পালিয়ে এখানে আসেন না।’
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি বলেছে, ‘জেনেভা কনভেনশন বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু সুরক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর এবং এটি একটি জীবন রক্ষাকারী হাতিয়ার।’
ইউএনএইএইচসিআর-এর মতে, ‘যখন এটি গৃহীত হয়েছিল ওই সময়ের মতো আজও ততোটাই প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে। এই কনেভনশন শরণার্থী আগমনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কাঠামো স্থাপন করে।’
ব্রিটিশ সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্স থেকে চ্যানেল পাড়ি দেয়া অভিবাসী নৌকা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। কিন্তু ২০২৩ সালে অন্তত ২৪ হাজার অভিবাসী ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন।
অনিয়মিতভাবে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন নিষিদ্ধ করা এবং তাদেরকে রুয়ান্ডার মতো তৃতীয় দেশে নির্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনা করে একটি বিতর্কিত আইন পাস করেছে ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু নানা আইনি কাঠামোর ফলে বারবার এই পরিকল্পনা থমকে আছে।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস