নিয়মিতভাবে থাকা অভিবাসীদের জন্য জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়ার পথকে আরও সহজ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। বুধবার এ বিষয়ক একটি আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে জার্মান মন্ত্রিসভা।
অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিকভাবে যেসব অভিবাসীরা জার্মান সমাজে একীভূত হতে পারবেন, তাদের দ্রুত সময়ে জার্মান পাসপোর্ট দিতে চায় চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন জার্মান সরকার।
নাগরিকত্ব আইনের খসড়া সম্পর্কে জেনেছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ। তারা জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা অনুমোদিত এই আইন অনুযায়ী, যারা ইহুদি বিরোধী এবং বর্ণবাদের মতো অপরাধ করেছেন, তাদের এই সুযোগ দেওয়া হবে না।
খসড়া আইনটিকে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার চাবিকাঠি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার।
বুধবার রিডাকৎসিয়নসনেৎসভের্ক নামের একটি জার্মান সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফেজার বলেন, ‘দক্ষ জনশক্তির এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মাঝখানে আছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে আমরা তখনই সেরা হয়ে ওঠতে পারব, যদি অদূর ভবিষ্যতে তারা আমাদের সমাজের সম্পূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন।’
মন্ত্রিসভায় ফেজারের নিয়ে আসা খসড়া আইনটিতে একাধিক নাগরিকত্বকেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্তটি জার্মান নীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে। জার্মানির বিদ্যমান আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ ছিল না।
এই বিলটি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন মধ্য বামপন্থি জোট সরকারের ঘোষিত পরিকল্পনার একটি অংশ। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে রক্ষণশীল সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসে মধ্য বামপন্থি এই সরকার।
২০২২ সালে বিশ্বের ১৭১টি দেশের এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৫ জন বিদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিদেশিদের সংখ্যা তার আগের বছরের অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২৮ ভাগ বেশি।
নাগিরকত্ব পাওয়া বিদেশিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন সিরীয়রা। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটি থেকে আসা যেসব ব্যক্তি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের গড় বয়স ২৪ দশমিক আট বছর। আর তাদের দুই তৃতীয়াংশ পুরুষ। নাগরিকত্ব পাওয়ার আগে তারা গড়ে ছয় দশমিক চার বছর দেশটিতে অবস্থান করেছেন।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ইউক্রেনীয়রা। রাশিয়ার হামলা শুরুর পর হাজার হাজার ইউক্রেনীয় দেশ ছাড়লে তাদের একটি অংশ জার্মানিতে আশ্রয় নেয়।
২০২২ সালে জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়াদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাক থেকে আসা অভিবাসীরা। আর চুতর্থ অবস্থানে তুর্কিরা।
ইন্টিগ্রেশন ও মাইগ্রেশন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ইয়ান শ্নাইডার জানান, নাগরিকত্ব পাওয়া সিরীয়দের অর্ধেক ছয় বছরেই জার্মানির পাসপোর্ট পেয়েছেন। এর কারণ হলো, তারা জার্মান সমাজে একীভূত হতে পারার প্রমাণ দেখাতে পেরেছে।