কয়েক দশক ধরে চালু থাকা এক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে অভিবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার পথ সুগম করার পথে বেশ খানিকটা এগিয়েছে জার্মান সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু থাকা এই ব্যবস্থা জার্মানিতেও সবার জন্য অনেক আগেই চালু করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
জার্মান সরকার জানিয়েছে, নতুন নাগরিকত্ব আইনটির খসড়া তৈরি করা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজারের প্রস্তাবিত আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং ইইউভুক্ত নয় এমন দেশের নাগরিকদের জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হবে।
জার্মানিতে ২০২১ সালের শরতে সামাজিক গণতন্ত্রী, সবুজ আর মুক্ত গণতন্ত্রীদের জোট সরকার গঠনের পরই নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়।
‘ক্ষতিগ্রস্ত’ মার্ক ইয়াং মনে করেন, জার্মানিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ আরো ১০ বছর আগেই চালু করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘সে সময় আমি জার্মান নাগরিকত্ব পেতে খুবই আগ্রহী ছিলাম। তবে মার্কিন পাসপোর্টও ছাড়তে চাইনি।
আগের পাসপোর্ট ধরে রাখার অর্থ আনুগত্য ভাগ করা নয়, যা অনেক রক্ষণশীল জার্মান মনে করেন। এটা শুধু আপনি কে তারই প্রকাশ ঘটায়। এই পরিবর্তন অনেক আগেই করা উচিত ছিল।’
ইয়াং জানান, তিনি গত ২০ বছর ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা শুনতে শুনতে ক্লান্ত তিনি।
সামাজিক গণতন্ত্রীদের নেতৃত্বাধীন জোটের অভিবাসন আইন পরিবর্তনের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আরো দক্ষ কর্মীদের জার্মানিতে এনে দেশটির কর্মী সংকট কাটানো।
আইনে মূলত তিনটি পরিবর্তন
জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীরা পাঁচ বছর থাকার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে আট বছর পর তা করা যায়।
জার্মানিতে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর বাবা-মায়ের অন্তত একজন যদি পাঁচ বছর বা বেশি সময় ধরে জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাস করে থাকেন, তাহলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জার্মান নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত হবে। দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করা হবে।
জার্মানিতে বিরোধী দল মধ্য ডানপন্থী খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ অবশ্য অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালে এ ধরনের সংস্কার প্রস্তাব বারংবার বাতিল করে দিয়েছে। দলটির নেতা ফ্রিডরিশ মেয়ারৎস এআরডিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গত ডিসেম্বরে বলেন, ‘জার্মান নাগরিকত্ব খুবই মূল্যবান একটা কিছু, তাই এটিকে যত্ন সহকারে বিবেচনা করা উচিত।’
উল্লেখ্য, জার্মানিতে বর্তমানে কারোই দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই—বিষয়টি এমনও নয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বর্তমানেও রয়েছে, তবে তা বেশ সীমিত এবং সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। নতুন আইন এটিকে আরো অনেক সহজ করে দেবে।