শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন

জার্মানিতে উচ্চ শিক্ষা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
জার্মানিতে আসার ক্ষেত্রে বর্তমানে আপনার সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে বিশাল অংকের ব্লক এমাউন্ট। এছাড়াও রয়েছে দীর্ঘ ওয়েটিং পিরিয়ড। এসব দেখে অনেকে আশাহত হয়ে পড়েন, হাল ছেড়ে দেন, আবার অনেকে লেগে থাকেন দীর্ঘ সময় ধরে। কেমন হতো যদি আপনাকে ব্লক এমাউন্ট কিংবা দীর্ঘ ওয়েটিং পিরিয়ড নিয়ে ভাবতে না হতো?
আমি জার্মানিতে এসেছি গত বছরের ১লা আগস্ট। জার্মানির ওয়েটিং পিরিয়ডের জন্য আমার আবেদন থেকে ভিসা পাওয়া পর্যন্ত সময় লেগেছে মাত্র ১৯ দিন। আর ব্লক এমাউন্টের কোনো প্রয়োজন হয়নি। বরং বর্তমানে আমার এবং জার্মানিতে আমার পরিবার আসলে তার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে জার্মান সরকার।
আমার জার্নির কথা নিয়েই এই পোস্টে লিখবো। হয়তো আপনারও কাজে আসতে পারে।
আমার দেশের বাইরে পড়তে আসার ইচ্ছেটা অনেকদিনের। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্লাস করার সময় এক শিক্ষক ক্লাসে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কার কী হবার ইচ্ছে। আমি সবে ভর্তি হয়েছি প্রথম বর্ষে। প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আমি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, আমি গবেষণা সেক্টরে কাজ করতে চাই। মুহূর্তেই আমাকে ভীষণ তাচ্ছিল্যের মুখে পড়তে হয়। এরপর অনেকটা জেদ করেই গবেষণা কাজে যুক্ত হয়ে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ল্যাবে আমি ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে নানা গবেষণা প্রজেক্টের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষ করেও আমি ল্যাবটিতে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
এভাবেই চলছিল দিনকাল। এর মধ্যেই আমি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা দলের সাথে কাজ করার সুযোগ পাই। সবকিছুই যেন আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করছিলো, যাতে দেশের বাইরে পড়তে যাই। আমিও আমার সাবজেক্ট-সংক্রান্ত বিভিন্ন সুযোগ খুঁজতে থাকি। এভাবেই আমি জার্মানির DAAD স্কলারশিপ সম্পর্কে জানতে পারি।
কিন্তু সত্যি বলতে, অন্যান্য স্কলারশিপের তুলনায় DAAD স্কলারশিপ নেভিগেট করা আমার কাছে অনেক বেশি ঝামেলার মনে হয়েছে। আজকের পোস্টে আমি কিছু লিংক ও দিকনির্দেশনা দেব, যা অনেকের জন্য পুরো জার্নিটা সহজ করে দিতে পারে। আর আমার এতটুকু আলোচনা শুনে যদি মনে হয়, শুধু গবেষণার প্রোফাইল থাকলেই এই স্কলারশিপ পাওয়া যায়, তবে এটি নিতান্তই ভুল ধারণা। সাহস করে আবেদন করে দেখুন, ক্ষতি তো কিছুই নেই! আর তাছাড়া একদম শেষে আমি এমন কিছু কথা বলবো যা DAAD স্কলারশিপ নিয়ে অনেকের মিথ ভেঙ্গে দিবে।
আপনারা যারা জার্মানি নিয়ে আগ্রহী, তারা ইতোমধ্যে DAAD সম্পর্কে জানেন। তবু সংক্ষেপে বলি, ডয়চার অ্যাকাডেমিশার আউস্টাউশডিনেস্ট (DAAD) বা জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস জার্মানির সবচেয়ে বড় শিক্ষা বিনিময় সংস্থা, যা ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত জাতীয় সংস্থা, যা জার্মানির ৩৬৫টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে।
আপনি যদি জার্মানিতে আবেদন করতে চান, তবে নিশ্চয়ই তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার পছন্দের সাবজেক্টটি খুঁজে দেখেছেন। এই সংস্থাটি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য প্রতিবছর প্রচুর স্কলারশিপ প্রদান করে, যাতে জার্মানিতে পড়াশোনা বা গবেষণা করা যায়।
তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ থেকে স্কলারশিপপ্রাপ্তদের সংখ্যা এখনো খুবই কম। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরও অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
DAAD স্কলারশিপে কিভাবে আবেদন করবেন সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আপনাদের এর সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে কিছু বলি। আপনি যদি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, DAAD আপনাকে প্রতিমাসে ৯৯২ ইউরো দিয়ে থাকে। অনেকের কাছে এ সংখ্যাটি কম মনে হতে পারে, তবে DAAD কেবল এতটুকু দেয় এমন না,— DAAD আপনার ও আপনার পরিবারের ইনস্যুরেন্সের খরচও বহন করে।
আমার স্ত্রী এখনো ফ্রান্সে পড়াশোনার জন্য অবস্থান করছে, সে জার্মানিতে আসলেই তার জন্যও আলাদা করে DAAD স্টাইপেন্ড দিবে। যেহেতু সে শিগগিরই জার্মানিতে আসবে, আমি ইতোমধ্যে একটি ফ্যামিলি বাসা নিয়েছি। যেহেতু বাসাভাড়া আমার স্কলারশিপের ৩০ শতাংশের বেশি, DAAD ক্যালকুলেট করে আমাকে অতিরিক্ত প্রায় ৩০০ ইউরো বাসাভাড়ার জন্য দিচ্ছে।
মোদ্দাকথা হলো, DAAD স্কলারশিপ পেলে আপনাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব বেশি চাপ নিতে হবে না। অন্য অনেক স্কলারশিপে কাজের অনুমতি না থাকলেও, DAAD আপনাকে পার্টটাইম কাজের অনুমতি দেয়। এছাড়াও DAAD আপনাকে জার্মানিতে আসার জন্য ভাতা দেয় এবং গবেষণার জন্য প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে।
জার্মানিতে আসার পরপরই তারা আপনাকে প্রায় ৩৫০০ ইউরো মূল্যের দুই মাসের জার্মান ভাষা প্রশিক্ষণ করাবে, যাতে অন্তত A1 পর্যন্ত শেষ করতে পারেন। কারও আগে ভাষা শেখা থাকলে সে পরবর্তী স্তর থেকে শুরু করতে পারে। এছাড়া, আপনি চাইলে তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত DAAD-এর সাবসিডি নিয়ে ভালো ভাষা স্কুলে ভর্তি হয়ে ভাষা দক্ষতা আরও বাড়াতে পারবেন।
আপনার স্পাউস যাতে ভাষা শিখতে পারে, সে ব্যবস্থাও DAAD করে দেয়। DAAD স্কলারশিপের কথা বলতে গেলেই আমার এক DAAD টিউটরের একটি কথা মনে পড়ে—তার মতে, আমরা জার্মানির জন্য “সোনার হাঁসের ডিমের মতো, তাই আমাদেরকেও তারা সেভাবে বিবেচনা করে”!
যাহোক, DAAD স্কলারশিপ আপনাকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার জন্য উৎসাহিত করলেও বাধ্য করে না। আপনি চাইলে DAAD শেষ করে জার্মানিতে থেকে যেতে পারেন। এমনকি ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে আপনার সেমিস্টার বাড়ানোর প্রয়োজন হলে সেটাও করা সম্ভব। নির্দিষ্ট সময় পর DAAD স্কলারশিপ না দিলেও, এতে আপনার ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা করে না।
এখন সংক্ষেপে আমার DAAD জার্নি নিয়ে বলি। আমি প্রথমেই বলেছিলাম, DAAD স্কলারশিপ নেভিগেট করা খুবই বিভ্রান্তিকর। কারণ, এটি কেবল মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য নয়—এটি ব্যাচেলর (আমাদের দেশে নয়), মাস্টার্স, পিএইচডি, গবেষক, জার্মান এবং আন্তর্জাতিক সব প্রার্থীদের জন্য ফান্ড দেয়।
এছাড়াও, ফান্ডের সময়সীমা বিভিন্ন হতে পারে—কেউ ছয় মাস, কেউ এক বছর, কেউ দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য স্কলারশিপ পায়। এটি এক স্কিমের আওতায় ফান্ড দেয় না; বরং বিভিন্ন স্কিম রয়েছে। তাই ঠিক কোন স্কিমে আপনি ফান্ড পাবেন, সেটি খুঁজে বের করাটা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। অন্তত আমার জন্য তা ছিল চ্যালেঞ্জিং।
আমি প্রথমে বিষয়টি বুঝতেই অনেক সময় ব্যয় করি। এক্ষেত্রে DAAD বাংলাদেশ গ্রুপ ও মাহিন ভাই আমাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
প্রথমত, আমি কোন সাবজেক্টে আবেদন করবো, তা নির্বাচন করি। এরপর নির্দিষ্ট আবেদন সময়ের মধ্যে ইউনিভার্সিটিতে আমার ডকুমেন্ট পাঠাই। কোনো কোনো সাবজেক্টের ক্ষেত্রে সরাসরি ডকে পাঠাতে হয়, আবার কোনো ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হয়। আমার সাবজেক্টের ক্ষেত্রে, আমি ইউনিভার্সিটির কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইলে ডকুমেন্ট জমা দিই।
এরপর শুরু হয় অপেক্ষার পালা—আমার স্কলারশিপ জার্নির সবচেয়ে বিরক্তিকর সময়! এই সময় যেন কাটতেই চাইছিল না। এর মধ্যে একদিন দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি জার্মানি থেকে একটি কল এসেছে। ফোন ধরতেই পরিচয় দিলেন, তিনি আমার জার্মান ইউনিভার্সিটির কো-অর্ডিনেটর। যেহেতু আমি DAAD স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছি, তিনি আমার একটি ইন্টারভিউ নিতে চান। আমি ফ্রি আছি কিনা জানতে চাইলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “হ্যাঁ, আমি ফ্রি, শুরু করতে পারেন।”
তারপর তিনি মোবাইলেই ইন্টারভিউ শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম, নেটওয়ার্ক দুর্বল হওয়ার কারণে তিনি আমার কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন না। এ সময় আমি প্রবল দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম! পরে কো-অর্ডিনেটর নিজেই বললেন, “আপনার যদি অনলাইনে কথা বলার সুযোগ থাকে, তবে অনলাইনে যুক্ত হোন।”
আমি দ্রুত অনলাইনে যুক্ত হলাম, কিন্তু সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছিল না। এবার বুঝতে পারলাম, আমার ল্যাপটপের মাইক্রোফোন কাজ করছে না! এরপর মোবাইল ও ল্যাপটপ—দুই ডিভাইস থেকেই যুক্ত হয়ে ইন্টারভিউ শেষ করলাম। ভাবতে পারেন, কী পরিমাণ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম সে সময়!
তবে ভাগ্যে যা লেখা থাকে, সেটাই হয়। এক মাস পর আমাকে জানানো হলো, আমি স্কলারশিপের জন্য নমিনেটেড হয়েছি। যদিও সবার ক্ষেত্রে এভাবে সরাসরি ফোনে ইন্টারভিউ নেওয়া হয় না, অনেকের ক্ষেত্রে আগেই মেইল করে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছিল সম্পূর্ণ আচমকা!
নমিনেশন লেটারে আমাকে জানানো হলো, আমি যদি স্কলারশিপ পেতে চাই, তবে DAAD-এর নতুন একটি ফর্ম (নীল ফর্ম) পূরণ করে ডকুমেন্ট পোর্টালে আপলোড করতে হবে। আমি দ্রুত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করলাম। এরপর আরও এক মাস কেটে গেল।
যদিও নমিনেশন লেটার পাওয়া মানেই প্রায় নিশ্চিতভাবে স্কলারশিপ হয়ে যাওয়া, তবুও ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছিল।
অবশেষে, আমি পেলাম DAAD অ্যাওয়ার্ড লেটার! এরপরের ধাপগুলো বেশ সহজ ছিল। এতদিন আমি শুধু নিজের এই জার্নি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, এখন মনে হলো—DAAD-এর অংশ হয়ে গেছি, আমার জীবনের টেনশন আপাতত ওরাই সামলাক!
এখন আসি DAAD-এর বিভিন্ন স্কিম নিয়ে। DAAD-তে অনেক ধরনের স্কিম রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি স্কলারশিপ পেতে পারেন। এসব স্কিম সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিজিট করুন: www.funding-guide.de.
DAAD স্কলারশিপ ডাটাবেস নিয়মিত আপডেট হয়, তাই আপনি নিজের উপযুক্ত স্কিম বা কোর্স খুঁজতে ফিল্টার অপশন ব্যবহার করতে পারেন। যেমন—আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আবেদন করতে চান, তবে দেশ হিসেবে Bangladesh নির্বাচন করুন। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করলে সেটিও আলাদা করে ফিল্টার করুন।
আমাদের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা Development-Related Postgraduate Courses (EPOS) স্কিমের অধীনে সবচেয়ে বেশি স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন। আমাদের সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমরা ১২ জন DAAD স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানি এসেছি, এবং সবাই এই স্কিমের আওতায় স্কলারশিপ পেয়েছি।
EPOS-এর অধীনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অনেক সাবজেক্টের একটি লিস্ট থাকে। আপনি যদি DAAD-এর জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে প্রথম কাজ হবে এই সাবজেক্ট লিস্ট থেকে আপনার উপযুক্ত বিষয়টি খুঁজে বের করা। যদি এই লিস্টে না পান অন্যান্য স্কিমগুলো খুঁজে দেখতে পারেন।
EPOS সরাসরি খুঁজে পেতে চাইলে ভিজিট করুন: https://www2.daad.de/…/en/21148-scholarship-database/…
এরপরের ধাপগুলো তো মোটামুটি আমার নিজের এক্সপেরিয়েন্স বলার সময় বলেই দিলাম।
এখন বলি আবেদন করতে চাইলে কি কি লাগবে। উপরের লিংকে গেলেই আপনি বুঝতে পারবেন, কী কী ডকুমেন্টস লাগবে। তারপরও সংক্ষেপে বলি— DAAD স্কলারশিপে আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো DAAD Green Form, যা আপনি উপরের লিংক থেকে ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করতে পারবেন। এরপর Europass Format CV, যা নিজের স্বাক্ষরসহ জমা দিতে হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো Letter of Motivation। এটি এমন কিছু নয়, যা একদিনে বসে লিখে ফেলা যায়। সময় দিতে হবে, নিজের চিন্তাগুলোকে গোছাতে হবে, যৌক্তিকভাবে সাজিয়ে লিখতে হবে। এরপর Letter of Recommendation দরকার, যেটি সাধারণত আপনি যার অধীনে কাজ করেছেন, তার কাছ থেকে নিতে হবে। আমার ক্ষেত্রে আমার ল্যাবের কো-অর্ডিনেটর এটি দিয়েছিলেন। Employment Certificate লাগবে, যেখানে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে অভিজ্ঞতা একটু কম হলেও আবেদন করতে বাধা নেই।
IELTS বা TOEFL-এর বিষয়ে যদি বলেন, তাহলে বলবো— IELTS না থাকলেও সমস্যা নেই। আমাদের সময়ে এমনও অনেকে ছিল, যারা MOI (Medium of Instruction) দিয়ে আবেদন করেছে এবং স্কলারশিপ পেয়েছে। আর একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট যদি ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় না হয়, তাহলে সেটির অনুবাদ আবশ্যক।
এখন আসি আপনাদের সাহস দেওয়ার কথায়। অনেকে মনে করেন, সায়েন্টিফিক পেপার না থাকলে বা গবেষণার অভিজ্ঞতা না থাকলে DAAD স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব নয়। এটি ভুল ধারণা। আমি নিজে এমন অনেককে জানি, যাদের কোনো প্রকার পেপার পাবলিকেশন ছিল না, তবুও তারা স্কলারশিপ পেয়েছেন।
আরেকটি ভুল ধারণা হলো, দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকলে আবেদন করা যাবে না। যদিও দুই বছরের সময়সীমা দেওয়া থাকে, তবুও আবেদন করা যেতে পারে। কারণ, DAAD হতে হতে হয়তো দুই বছর অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়ে যাবে।
এছাড়াও অনেকে মনে করেন, অভিজ্ঞতা কাটায় কাটায় সাবজেক্টের সাথে মিলতে হবে। সত্যি বলতে, এটি বাধ্যতামূলক নয়। আমি ল্যান্ডস্কেপ ইকোলজি অ্যান্ড নেচার কনজারভেশন নিয়ে পড়তে এসেছি। আমার সাথে যারা এসেছে, তাদের কেউ ফরেস্ট্রি রিলেটেড কাজ করেছে, কেউ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, কেউ মাইক্রোবায়োলজি, কেউবা বায়োলজির শিক্ষক ছিল। মাহিন ভাই, যিনি আমাকে সহযোগিতা করেছেন, তিনি আর্কিটেকচার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। আরেকজন আছেন, যিনি এগ্রিকালচারাল ব্যাংকে চাকরি করতেন, তিনিও আমার সাবজেক্টে DAAD স্কলারশিপ নিয়ে এসেছেন। আবার অনেকে ভাবেন আগের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডও একশোতে একশো মিলতে হবে। সত্যি বলতে সেটিও না। যেমন মাহিন ভাইয়া ছিলেন আর্কিটেক্ট আর আমার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো জুওলজি। আমরা দুইজনই একই সাবজেক্টে পড়তে জার্মানি এসেছি। কারণ, অধিকাংশ সাবজেক্টই ইন্টারডিসিপ্লিনারি।
সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই! আপনি জানেনই না, সামনে কোন দরজাটি আপনার জন্য খুলে যাবে। সাহস করে এপ্লাই করুন, কিছু একটা হয়েই যাবে!

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com