শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

জাফলং সিলেটের এক নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩

সৌন্দর্যের সংজ্ঞাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সুন্দর, অপরূপ এইতো। আমাদের এই পৃথিবীতে হাজারো সৌন্দর্য রয়েছে। রয়েছে শত শত সুন্দর যায়গা। আমরা সেইসব সৌন্দর্য উপভোগ করি। কখনো আমাদের কাছেই সেইসব প্রকৃতির অপার রূপ ধরা দেয় আবার কখনো আমাদের এই প্রকৃতির কাছে যেতে হয়।

বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত একটি এলাকা নাম হলো জাফলং। সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এর অবস্থান। বর্তমানে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত। জাফলং কে প্রকৃতি কন্যা বলা হয়।

ঐতিহাসিকদের মতে বহু হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীনে থাকা এক নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে খাসিয়া-জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটলেও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিতও পড়েছিল। পরবর্তিতে ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন, আর পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে একসময় গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি।

ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী হওয়ার কারনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ও জাফলং এলাকা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে নৌ-যোগে সহজে ভারতে প্রবেশ বা সেখান থেকে এদেশে আশার জন্য। আশির দশকে সিলেটের সাথে জাফলং এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে জাফলংয়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীরাও ভিড় করতে থাকেন জাফলংয়ে।

ব্যবসায়ীকভাবেও জাফলং অনেক বিখ্যাত। বিশেষ করে পাথরের জন্য। বাংলাদেশে চার ধরণের কঠিন শিলা পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ভোলাগঞ্জ-জাফলং-এ পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি। এছাড়া বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে ঐসব পাহাড় থেকে ডাওকি নদীর প্রবল স্রোত বয়ে আনে বড় বড় গণ্ডশিলাও। একারণে সিলেট এলাকার জাফলং-এর নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। আর এই এলাকার মানুষের এক বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই পাথর উত্তোলন ও তা প্রক্রিয়াজাতকরণকে ঘিরে।

প্রকৃতি কন্যা জাফলং

এখানে বাঙালিরা যেমন বসবাস করেন, তেমনি বাস করেন উপজাতিরাও। জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জী। জাফলং এ দাঁড়িয়ে ভারতের যে জায়গাগুলো দেখা যায় তা হলো মেঘালয়। মাঘালয়ে উঁচু উঁচু পাহাড় দেখলে সবারই সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে যাগে। আপনি সব থেকে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন কোণ এক বৃষ্টির পর যদি জাফলং এ যেতে পারেন। মেঘলা আকাশে জাগলং সে এক অন্য জগৎ। জাফলং-এর পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরণা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

এছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণ করে অনেককে। এছাড়া সর্পিলাকারে বয়ে চলা ডাওকি নদীও টানে পর্যটকদের। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলং-এর অন্যতম আকর্ষণ। নদীর গভীরে কি আছে সব দেখা যায়। যেনো স্বচ্ছ কাচের মতন পানি। পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে জাফলং-এ আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা।

কিন্তু প্রকৃতি শুধু সৌন্দর্য দেয় না। সেই সৌন্দর্যের মাঝে ক্ষতি করার ও ক্ষমতা দিয়ে দেয়। উজান থেকে নেমে আসা পাথর আর বালুতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় পিয়াইন নদীর নাব্যতা কমে গেছে। ফলে হঠাৎই উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় নিকটবর্তি অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা; যেমন: ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ডাউকি সীমান্তে এরকমই উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বিডিআর ক্যাম্পসহ বেশ কিছু এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে তারিখেও অনুরূপ ঢলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় চা-বাগানসহ বস্তি। এছাড়া নিষিদ্ধ “বোমা মেশিন” (স্থানীয় নাম) দিয়ে নদী থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে স্থানীয় পিয়াইন নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিপুল সম্পদের অপচয়ও পরিবেশ বিপর্যয় হয়।

যাতায়াত ব্যবস্থা: ঢাকা থেকে অনেকে বাস আসে সিলেটের উদ্দেশ্যে। সকাল থেকে রাত ১২:৩০ অবধি বাস আছে। শ্যামলী, সোহাগ, হানিফ, গ্রিন লাইন সহো অনেক বাস আছে। ভাড়া ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা (নন-এসি)। আর ৮০০-১২০০ টাকা (এসি বাস)।

যদি কেও ট্রেনে যাতায়াত করতে চান তাহলে প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন ট্রেন ছেড়ে যায়। জয়ন্তিকা, কালনী, উপবন আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ছেড়ে যায় সিলেটের উদ্দেশ্যে। ভাড়া ২৫০ থেকে শুরু প্রায় ১৫০০ অবধি রয়েছে আপনার ট্রেনের শ্রেনী অনুযায়ী। ট্রেনে প্রায় ৭-৮ ঘন্টা লাগে কমলাপুর রেল ষ্টেশন থেকে সিলেট রেল ষ্টেশন পৌঁছুতে

যদি কেও বিমানে যেতে চান তাহলে ও যেতে পারবেন। Us-bangla, Novo Air, Biman Bangladesh এর অনেক ফ্লাইট আছে সিলেটের জন্য। ভাড়া ২৮০০ থেকে শুরু।

আপনি জাফলং এর তামাবিল বা জিরোপয়েন্ট ঘুরতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে সিলেট যেভাবেই আসুন না কেনো আপনাকে সিএনজি বা লোকাল বাসে আসতে হবে। লোকাল বাসে ভাড়া হবে ৬০ টাকা। আর সারাদিনের সিএনজি নিলে ভাড়া পড়বে ১৮০০ টাকা কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনি বিছানাকান্দিও ঘুরতে আসতে পারবেন। আর যদি আপনি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যান সেক্ষেত্রে আপনি নিজেই ঘুরতে পারবেন।

জাফলং এ থাকার যায়গা: থাকার জন্য কোন চিন্তা করতে হবে না আপনাকে। সিলেট বেশ কিছু থাকার যায়গা রয়েছে। তবে জাফলং এ তেমন যায়গা নেই থাকার, তাই আপনাকে সিলেট শহরেই থাকতে হবে এবং সেখানে থাকাটাই সেইফ। স্টার প্যাসিফিক (Hotel Star Pacific), রোজ ভিউ (Rose View Hotel), হোটেল গার্ডেন ইন (Hotel Garden Inn), হোটেল পলাশ, গ্রান্ড সুলতান (Grand Sultan Tea Resort & Golf), হোটেল ভ্যালি গার্ডেন (Hotel Valley Garden) সহ আরো অনেক ভালো মানের হোটেল হয়েছে থাকার জন্য।

তাহলে সময় সুযোগ করে বেড়িয়ে পড়ুন প্রাকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ এর জন্য। পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে জাফলং খুব ভালো একটা যায়গা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com