সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০:০৭ অপরাহ্ন

জাপানে স্টুডেন্ট ভিসা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫
জাপানগামী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ
আপনি জাপানে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কেন যাচ্ছেন? শুধুই অর্থ উপার্জনের জন্য, নাকি একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে? মনে রাখবেন, টাকা উপার্জন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি—এই দুটি ভিন্ন বিষয়। টাকা অনেকভাবে উপার্জন করা যায়, কিন্তু একটি সুসংগঠিত ভবিষ্যৎ গড়তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকে মনে করেন, “ভিসা পেয়ে গেছি, এখন জীবন সেটেলড!”—এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভিসা পাওয়ার অর্থ হলো, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে একটি নতুন সুযোগ দিয়েছেন। এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—এই সুযোগকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাবেন, নাকি ভুল পথে পরিচালিত হবেন?
জাপানে গিয়ে আপনি কি ভালোভাবে পড়াশোনা করে নিজেকে যোগ্য ও স্বাবলম্বী করে তুলবেন, নাকি শুধুই অর্থ উপার্জনের পেছনে ছুটে অনৈতিক কাজে জড়াবেন? আপনার সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আপনার ভবিষ্যৎ। মনে রাখবেন, যার শুরু সুন্দর, তার শেষও সুন্দর হয়। আর আল্লাহও সুন্দর ও উত্তমকেই পছন্দ করেন।
ভুল পথে পা বাড়ানোর প্রথম ধাপ
একজন মানুষ খারাপ পথে যাওয়ার প্রথম ধাপ হলো—অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে মেলামেশা শুরু করা। যেমন, আমাদের সমাজে বলা হয়, “মোহল্লার টং দোকানে আড্ডা খারাপ অভ্যাসের শুরু।” আপনি কি কখনও দেখেছেন কোনো মেধাবী ছাত্র, সম্মানিত ব্যক্তি বা সফল মানুষ টং দোকানে বসে সময় নষ্ট করছে? ঠিক তেমনিভাবে, জাপানে শিক্ষার্থীদের জন্য হালাল খাবারের দোকানগুলো হয়ে উঠতে পারে সেই “টং দোকান”।
আপনি সেখানে এমন সব মানুষের সংস্পর্শে যাবেন, যারা মূলত আপনার পথের যাত্রী নয়। সেখানে আপনার স্কুলের কোনো সম্মানিত শিক্ষককে পাবেন না, কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীকে পাবেন না, বরং পাবেন এমন কিছু মানুষ, যাদের চিন্তা-ভাবনা আপনার লক্ষ্যের সঙ্গে মেলে না। ভালো পরিবেশে সময় কাটানো মানেই নিজেকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেওয়া।
একজন শিক্ষার্থীর কাজ হলো—পড়াশোনা, ক্যারিয়ার গঠন, ইনোভেশন, ফ্রিল্যান্সিং, বা উপযুক্ত পার্ট-টাইম জব করা। কিন্তু অনেকেই এসব বাদ দিয়ে রেস্টুরেন্টের ডিশ ওয়াশার, কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার, ফ্যাক্টরির ডে-লেবার, হোটেল বেড-মেকার, কিংবা হ্যান্ড ক্যাশ ওয়ার্কের মতো চাকরিতে আটকে যান। এতে তারা যে পরিবেশে পড়েন, তা তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে পারে।
আপনার পরিবার ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবুন
আপনার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আপনাকে জাপানে পাঠিয়েছেন পড়াশোনার জন্য। কিন্তু আপনি যদি ভুল পথে গিয়ে শুধুই অর্থ উপার্জনে মনোযোগী হন, তাহলে একসময় তাদের কাছেও টাকা পাঠাতে পারবেন না, নিজেও বিপদে পড়বেন। তখন আপনি পরিবারকেও দোষারোপ করবেন, সমাজকেও দায়ী করবেন।
অন্যদিকে, যদি আপনি পড়াশোনায় মনোযোগ দেন, ভালো জায়গায় পার্ট-টাইম কাজ করেন, দক্ষতা অর্জন করেন—তাহলে যখন পড়াশোনা শেষ হবে, তখনই আপনি ভালো কোম্পানিতে চাকরি পাবেন। তখন আপনি শুধু নিজের নয়, পরিবারেরও গর্বের কারণ হবেন।
জাপান সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রেখেছে। ভালো জায়গায় পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেকেই সেসব না খুঁজে ভুল জায়গায় নিজেদের সময় নষ্ট করি এবং অবশেষে সেই অন্ধকার জগতে আটকে যাই, যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন।
পার্মানেন্ট রেসিডেন্স ও নাগরিকত্ব নিয়ে ভাবনা
অনেকে শুরু থেকেই পার্মানেন্ট রেসিডেন্স (PR) ও নাগরিকত্ব পাওয়ার চিন্তায় ডুবে থাকেন এবং সেই লক্ষ্যেই ভুল পথে চলতে থাকেন। কিন্তু আপনার উচিত হবে—নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলা, যাতে জাপান সরকারই আপনাকে তাদের দেশে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পড়াশোনা শেষে নিজ দেশে ফিরে যান, ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন। বাংলাদেশে এখন অনেক জাপানি কোম্পানি কাজ করছে, যেখানে দক্ষ কর্মীদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
শেষ কথা
জাপানে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় শ্রমিক হয়ে নিজের, পরিবারের এবং দেশের ক্ষতি করবেন না। বরং নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে যোগ্যতা অর্জন করুন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিন, এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন।
সঠিক পথ বেছে নিন, সফল হোন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com