সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০১ অপরাহ্ন

জাপানে সস্তায় মিলছে বিলাস পণ্য, বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪

জাপানে সস্তায় বিলাস পণ্য কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য পর্যটক। জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দাম হ্রাসের প্রভাব পড়ছে দামি ব্র্যান্ডের পণ্যেও। জুলাই মাসে গত ৩৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দাম হয়েছে ইয়েনের। এর ফলে জাপানে এসে ভিড় করছেন সারা বিশ্বের বিলাস পণ্যপ্রেমী মানুষ।

বিলাস পণ্যের ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো এতে অখুশি। কারণ তাদের কেতাদুরস্ত জুতো, দামী হুইস্কি সবই এখন বিশ্বের অন্যান্য জায়গার তুলনায় জাপানে সস্তা। এতে তাদের লাভের পরিমাণও কমছে।

কিছু পর্যটক, যেমন চীনের পর্যটকরা, নিজের দেশে এমন পণ্য না কিনে জাপানে গিয়ে তা কিনছেন। ইয়েনের দামের পরিবর্তনশীলতার কারণে সংস্থাগুলো চাইলেই দাম বাড়াতে পারছে না। ফলে যত দিন ইয়েন দুর্বল থাকবে, তত দিন লাভও বাড়বে না।

২৯ বছর বয়সি ঝাং লেই চীনের দক্ষিণের রাজ্য হুনান থেকে এসেছেন। পেশায় ডিজে ঝাং জাপানে প্রথমবারের মতো এলেও আবার আসতে চান। শনিবারে টোকিয়োর গিনজা অঞ্চলে তাকে দেখা যায় কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকতে।

দুটো লুই ভুটন ব্র্যান্ডের ব্যাগ ও স্পোর্টসের পোশাকের ব্র্যান্ড ওনিটসুকা টাইগারের ব্যাগ হাতে ঝাং বলেন, ‘‘এখানে এসব আরো সস্তা।’’ গরম থেকে বাঁচতে হাতপাখা নিয়ে লুই ভুটন দোকানের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আরো ১৫ জন ক্রেতা। ততক্ষণে ঝাং হাতের দিকে দেখিয়ে বলেন, তিনি ঘড়ি কিনতে চান। কোন ব্র্যান্ড? ‘‘রোলেক্স’’, তার জবাব।

এই ধারা লুই ভুটনকে অবাক করেছে। সংস্থাটির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জাঁ-জাঁক গুইয়োনি বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা দিক বদল করে এশিয়া থেকে জাপানের দিকে ঘুরেছে।’’

এমন ধারা চীনে এই সংস্থার লাভ ব্যাপকভাবে কমাচ্ছে, জানান তিনি। গুইয়োনি বলেন, মুদ্রার দামের দ্রুত বদল এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চলতি সপ্তাহে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন তারা কারণ ব্যাংক অফ জাপান সুদের হার বাড়িয়েছে বুধবারে।

ডিওর, শানেল, মাউন্ট ফুজি

চীনে লুই ভুটনের জনপ্রিয় আলমা বিবি হ্যান্ডব্যাগের দাম দুহাজার মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। জাপানে তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮৭৫ ডলারের কাছাকাছি দামে। এর আগের মাসে, আরো ১০০ ডলার কম দাম ছিল এই ব্যাগের।

চীনে এই ব্যাগের দামের সমমানে পৌঁছাতে জাপানের ইয়েনকে ডলারপিছু ১৩৬ ইয়েন ছুঁতে হবে। গত বৃহস্পতিবার সাড়ে চার মাসে সবচেয়ে ভালো দাম ছিল ইয়েনের। এক ডলারে মিলেছে ১৪৯ ইয়েন।

শুধু ব্যাগ নয়, দামী মদ কেনাতেও ঝুঁকছেন চীনা পর্যটকরা বলে জানিয়েছে পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থা রেমি কনত্রো। কারটিয়ের ব্র্যান্ডের মালিক সুইস সংস্থা রিশেমঁ জাপানে বছরের প্রথমার্ধ্বে তার বিক্রি বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন চীনা, আমেরিকান ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা দেশ থেকে আসা পর্যটকরা।

ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা ফুমিকো আনিসাকে জিজ্ঞেস করা হয় জাপানে তার পরিকল্পনা কী। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শপিং, শপিং, শপিং! দামী ব্র্যান্ড এখানে সস্তা। আমরা ডিওর ব্র্যান্ডের জিনিস কিনব। কিন্তু তার আগে শানেল ঘুরে আসব।’’

টোকিও ছাড়াও পশ্চিমের শহর ওসাকায় যাবেন তিনি, মাউন্ট ফুজির কাছে। সেখানে একটি বিশাল শপিং মল আছে, যেখানে বিশ্বের নামী ব্র্যান্ডের সমাহার। জুন মাসে রেকর্ডসংখ্যক ৩১ লাখ পর্যটক আসেন জাপানে। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে জাপানে বেড়াতে আসেন ৩২ লাখ পর্যটক।

সরকারের মতে, এবছর পর্যটকরা জাপানে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করবেন। বার্ধক্যে জর্জরিত জনসংখ্যার দেশ জাপানে পর্যটন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আয়ের উৎস।

নিউইয়র্ক থেকে আসা পর্যটক ইয়াদভিন্দর সিং বলেন, তিনি সেভাবে কেনাকাটার পরিকল্পনা নিয়ে না আসলেও জারা ও অন্যান্য দোকানে কম দাম দেখে তার সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন। ২৬ বছর বয়সী এই পর্যটক বলেন, ইতিমধ্যেই অনেক কেনাকাটা হয়ে গেছে তার। জামাকাপড়, গয়না, জুতো…গোটা আউটফিটই কিনেছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com