জাপানে জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। আগামী এপ্রিল থেকে এই নীতি কার্যকর হবে, যেখানে কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ছুটি পাবেন।
এ ছাড়া আরেকটি নতুন নীতি চালু করা হচ্ছে, যার আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পিতা-মাতারা আংশিক বেতন কাটছাঁটের মাধ্যমে দ্রুত অফিস ত্যাগ করার সুযোগ পাবেন।
কর্মজীবী মায়েদের সহায়তা এবং রেকর্ড-নিম্ন জন্মহার বৃদ্ধি করতেই দেশটি নতুন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে এক নীতিনির্ধারণী বক্তৃতায় বলেন, আমরা কাজের ধরন পর্যালোচনা করবো এবং এমন ব্যবস্থা নেবো যাতে কেউ তাদের ক্যারিয়ার ত্যাগ করতে বাধ্য না হন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সন্তান প্রসব বা যত্ন নেওয়ার কারণে কাজ ছাড়ার প্রয়োজন যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটিতে মাত্র ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ শিশুর জন্ম হয়েছে। এর ফলে প্রজনন হার ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন ২ দশমিক ১ শতাংশ।
জাপানের সরকার জন্মহার বাড়াতে পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটির মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।
তবে অনেক সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন, জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় জন্মহারের নিম্নগতির জন্য দায়ী।
অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা দীর্ঘদিন ধরে জাপানের কর্পোরেট সংস্কৃতির একটি সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে কর্মীরা প্রায়ই স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হন এবং চরম ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হয়—অতিরিক্ত পরিশ্রমে এ মৃত্যুকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘কারোশি’।
এছাড়া, নারীরাও প্রায়ই ক্যারিয়ার এবং পরিবারের মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য হন, আর জাপানের ওভারটাইম কাজের সংস্কৃতি এই পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, জাপানে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও প্রবল। গত বছর দেশটির শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার ছিল ৫৫ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ছিল ৭২ শতাংশ।
পশ্চিমা দেশগুলোতে চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তবে জাপানের জন্য এটি এখনো মৌলিক একটি ধারণা। দেশটির অনেক কোম্পানি কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করা সময়কে আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে দেখে।