বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

জাপানে উচ্চশিক্ষা: মনবুশো বৃত্তি নিয়ে পড়তে চান

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

প্রাকৃতিক নিসর্গ, প্রযুক্তির শিল্প বিল্পব এবং সভ্য জাতি হিসেবে একনামে পরিচিত জাপান। আর উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা উন্নত দেশগুলোর ভেতরে রয়েছে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা। এ ছাড়া বিশ্বের যত ধরনের উচ্চশিক্ষার বৃত্তি রয়েছে, এর অন্যতম সেরা বৃত্তি হচ্ছে জাপান সরকারের মনবুকাগাকুশো বা মেক্সট স্কলারশিপ। জিমি মজুমদার বর্তমানে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গ্লোবাল অ্যাডভান্সড এসসিসটিভ রোবটিকস প্রোগ্রামে মেক্সট বা মনবুশো বৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর গবেষণায় ‘এক্সিলেন্ট মাস্টারস থিসিস’ পুরস্কারে মনোনীত হয়ছেন। ইতিপূর্বে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাস করে নাসা ও জাতিসংঘের প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন এবং পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিকস রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা।

মনবুশো বৃত্তি কী?
জাপান সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাপানের বিশ্বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য একটি বিশেষ বৃত্তির প্রকল্প। ১৯৫৪ সাল থেকে এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামের যাত্রা শুরু করে জাপান সরকার। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের প্রায় ১৬০টির মতো দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এই বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেহেতু জাপানের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক, তাই এটি মেক্সট বা মনবুকাগাকুশো স্কলারশিপ নামেই পরিচিত। তবে আবার অনেকেই এই বৃত্তিকে মনবুশো বৃত্তি বলে থাকে।

সুযোগ-সুবিধা:
১) কোনো ধরনের টিউশন ফি নেই এবং সম্পূর্ণ ফ্রিতে পড়াশোনা করতে পারবেন।
২) মাসে ১,৪৩,০০০-১,৪৮,০০০ ইয়েন পাবেন।
৩) বাংলাদেশ থেকে জাপানে আসা এবং যাওয়ার বিমান টিকিট পাবেন।

কারা আবেদন করতে পারবেন এবং কোন কোন প্রোগ্রামে আবেদন করা যাবে?
স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল এই তিন ধরনের অধ্যয়নের জন্য মনবুশো বৃত্তি বা মেক্সট স্কলারশিপ রয়েছে। স্নাতকোত্তর বা ডক্টরাল পর্যায়ে যোগ দেওয়ার জন্য সাধারণত বয়স ২৫-৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে। আর স্নাতক পর্যায়ের জন্য বয়স হতে হবে ১৭ থেকে ২৫-এর মধ্যে।

স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করার জন্য সাধারণত দুই ধরনের ছাত্রত্ব আছে:

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের জন্য—রিসার্চ স্টুডেন্টশিপ
স্কুল বা কলেজশিক্ষকদের জন্য—টিচার ট্রেনিং স্টুডেন্টশিপ

স্নাতক পর্যায়ে সাধারণত চার ধরনের ছাত্রত্ব আছে:
ইন্টারমিডিয়েট পাস হতে হবে—আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টশিপ
স্নাতক পাস হতে হবে—জাপানিজ স্টাডিজ স্টুডেন্টশিপ
ইন্টারমিডিয়েট পাস হতে হবে–কলেজ অব টেকনোলজি স্টুডেন্ট
ইন্টারমিডিয়েট পাস হতে হবে–স্পেশাল ট্রেনিং কলেজ স্টুডেন্ট

আবেদন কীভাবে?
মনবুশো বৃত্তি বা মেক্সট স্কলারশিপ দুভাবে আবেদন করা যায়

১) ঢাকায় অবস্থিত জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে (অ্যাম্বাসি রিকমেন্ডেশন): সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝির দিকে এর সার্কুলার প্রকাশিত হয়। দূতাবাসের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে মেক্সট পাওয়াটা অপেক্ষাকৃত কঠিন। কারণ এর জন্য আপনাকে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হতে হবে। সেখানে বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের নির্বাচন করা হয় এবং দূতাবাস তাদের পরবর্তী সব ধরনের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
২) জাপানে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে (বিশ্ববিদ্যালয় রিকমেন্ডেশন): জাপানে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে সরাসরি আপনার প্রত্যাশিত জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে মেক্সট পাওয়ার প্রক্রিয়াটা দূতাবাসের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন শুরু হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। তবে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন-প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। সাধারণত প্রতিবছর অক্টোবর সেশন থেকে ভর্তি শুরু হয়, তবে যথারীতি আগের বছরের অক্টোবরে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে। এই যেমন ধরেন, আমি ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে স্নাতকোত্তর শুরু করেছি, কিন্তু ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ, আবেদন ও বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করেছিলাম। সব থেকে মজার বিষয় হলো আপনি যদি প্রফেসরকে রাজি করাতে পারেন, তাহলে তিনিই আপনাকে মনবুশো বৃত্তি বা মেক্সট স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা দেবেন।
পরামর্শ:
যেহেতু মনবুশো বা মেক্সট স্কলারশিপ বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি বৃত্তি এবং শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, সারা বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভেতর এই বৃত্তি নিয়ে জাপানে আসার একটি কঠিন প্রতিযোগিতা হয়, সুতরাং নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। যাঁরা এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা টেকনিক্যাল কলেজে আন্ডারগ্র্যাড বা গ্র্যাজুয়েশন করছেন, তাঁদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকে নিজের সুন্দর রিসার্চ প্রোফাইল তৈরি করা। এ ব্যাপারে আমার একটি প্রোফাইল উদাহরণস্বরূপ দেওয়া হলো- (https://sites.google.com/view/jimmy-majumder/)
এ ছাড়া যাঁরা স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল প্রোগ্রামে আসবেন, তাঁদের অবশ্যই উচিত কিছু ভালোমানের পাবলিকেশন থাকা এবং জাপানে যে বিষয় ভবিষ্যতে গবেষণা করবেন, সেই বিষয়ে আসার আগে কিছু দক্ষতা অর্জন করে আসা। জাপানের মনবুশো বা মেক্সট স্কলারশিপ নিয়ে এসে ভালো রেজাল্ট ও গবেষণা করতে পারলে এখানে নিজের ফিল্ডে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে। যেমন আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই বেশ কিছু চাকরির অফার পেয়েছি। বর্তমানে জাপানের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় মনবুশো বা মেক্সট স্কলারশিপ পাওয়ার এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক ধরনের প্রোগ্রাম চালু করেছে। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই, লেগে থাকুন। একজন মনবুশো বা মেক্সট স্কলার বিজয়ী হিসেবে পরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা।
লেখক:  জিমি মজুমদার
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, গ্লোবাল অ্যাডভান্সড এসসিসটিভ রোবটিকস প্রোগ্রাম, কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com