সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে গাজীপুরের কালীগঞ্জে কিনেছেন শত বিঘা জমি। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হলে সেসব জমির সাইনবোর্ড থেকে লাল রং দিয়ে তাদের নাম ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর পূর্বাচল উপশহর ঘেঁষে কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নে বিপুল জমি রয়েছে বেনজীরের। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং পরিকল্পিত উপশহর পূর্বাচলের খুব কাছে হওয়ায় এখানে জমির দাম আকাশছোঁয়া। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অনুসন্ধান চালিয়ে সম্প্রতি বেনজীর, তাঁর স্ত্রী ও বড় মেয়ের নামে ৬টি দলিল পেয়েছে। তাদের স্বজনের নামেও বেশ কিছু জমি রয়েছে।
বেতুয়ারটেকের বাসিন্দা প্রভাত কস্তা ও বাবুল মল্লিক বলেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বেনজীর এ এলাকায় জমি কেনা শুরু করেন। ওই সময় এলাকায় জমির বিঘাপ্রতি দাম ছিল ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকা। বেনজীর, তাঁর স্ত্রী জীশান মির্জা এবং তাদের বড় মেয়ে ফারহিন রিশতার নামে জমিগুলো কেনা হয় বলেও জানান তারা। নাগরী ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পুইন্নারটেক গ্রামের সুশীল মণ্ডল ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। তিনি প্রথমে এ ইউনিয়নের বেতুয়ারটেক গ্রামের জমি বেনজীরের কাছে বিক্রি করেন। তিনি করোনার আগে স্থানীয় এক জমির দালালের মাধ্যমে ৯ বিঘা জমি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে বিক্রি করেছেন বলে জানান। তিনি প্রতি বিঘায় দাম পেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। সুশীল মণ্ডল বলেন, ‘আমার মতো আরও অনেকের কাছ থেকে শতাধিক বিঘা জমি কিনেছেন বেনজীর। শুনেছি পরবর্তী সময়ে তিনি অনেক জমি বিক্রি করে দিয়েছেন।’
কালীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং রাজধানীর উপশহর পূর্বাচল থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে বেতুয়ারটেক গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় বড় বড় লাল রঙের সাইনবোর্ড। অনেক এলাকায় এমন সাইনবোর্ড দেখা যায়। এক সময় সেসব সাইনবোর্ডে বেনজীরের নাম লেখা থাকলেও বর্তমানে লাল রং দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে কেনা বিভিন্ন দলিলের মধ্যে ৬টি দলিল ঘেটে দেখা গেছে, তাতে জমি খুব বেশি নয়। সব মিলিয়ে ২০১৬ -১৭ সালের দিকে প্রায় ৩০ লাখ টাকায় ১০০ শতাংশের মত জমি কেনা হয়েছে। ওই সময় এসব জমির দাম ৪-৫ গুণ বেশি থাকলেও দলিলে কম মূল্য দেখান বেনজীর।
কালীগঞ্জর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বেনজীর, তাঁর স্ত্রী এবং বড় মেয়ের নামে মোট ৯টি জমির নামজারি করা হয়। এতে জমি রয়েছে ২০০ শতাংশের কিছুটা বেশি। এ ছাড়া একই সময়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনের নামে আরও ১৯টি নামজারি করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমান বলেন, ‘দুদক বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে কেনা সম্পদের তথ্য চেয়েছিল। এখন পর্যন্ত পাওয়া ৬টি দলিল দুদক অফিসে দিয়ে এসেছি।’