যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন এখন বিশ্বব্যাপী প্রধান আলোচ্য বিষয়। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বারের মতো বসার পর কী কী পরিবর্তন ও সিদ্ধান্ত আসতে পারে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। এ ক্ষেত্রে অভিবাসী ইস্যুটি অন্যতম।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার খবরটি অভিবাসী অনেক দম্পতিকে উদ্বেগে ফেলেছে। নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে গ্রিনকার্ডের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের সন্তানরাও আগামী দিনে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবে না।

অফিশিয়াল ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রচারাভিযানের সাইটে পোস্ট করা পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের এক দিনের মধ্যেই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। শুধু অবৈধ অভিবাসীদের জন্যই এটি মাথাব্যথার কারণ, তা নয়। বরং খসড়া নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকায় জন্মালেই কোনো শিশুকে আর নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। সন্তানের পিতা-মাতার মধ্যে অন্তত একজনকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে অথবা থাকতে হবে গ্রিন কার্ড। তবেই তাদের সন্তানরা আগামী দিনে আমেরিকার নাগরিক হতে পারবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধলক্ষাধিক বাংলাদেশি দম্পতি রয়েছেন, যাদের এখনো কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বৈধতার জন্য তারা আইনি লড়াই করছেন দীর্ঘদিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় এসব পরিবার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকেই ইমিগ্রেশন আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শও নিয়েছেন।

নিউইয়র্কের একজন বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন আইনজীবী জানান, বুধবার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি অসংখ্য বাংলাদেশি পরিবার থেকে ফোন পেয়ে তাদের আইনি পরামর্শ দিয়েছেন। এসব পরিবার এখন চরম আতঙ্কের মাঝে দিন কাটাচ্ছে।

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি রাজীব এস খান্না বলেন, ‘এটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর লঙ্ঘন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট রায় রয়েছে।’

পদক্ষেপের বৈধতা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে অভিবাসন অ্যাটর্নি গ্রেগ সিসকিন্ড বলেন, ‘এটি অবশ্যই ১৪তম সংশোধনীর লঙ্ঘন। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আইনত দম্পতিদের সন্তানদের বাদ দিতে এত দূর যায় কি না, তা আমাদের দেখতে হবে।’

২০২২ সালের জনগণনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮ লাখ ভারতীয় বসবাস করে। তাদের মধ্যে ১৬ লাখেরই জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ট্রাম্পের নয়া নীতি অনুযায়ী, তারা কেউই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ তাদের পিতামাতা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন বা তাদের গ্রিনকার্ড নেই।

এইচ-বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অনেকেই কয়েক দশক ধরে ব্যাকলগে আটকা পড়েছেন। কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ডের জন্য বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা আছে ১ লাখ ৪০ হাজার। অতিরিক্তভাবে কোনো দেশই কর্মসংস্থান বা পরিবারভিত্তিক বিভাগে মোট গ্রিনকার্ডের ৭ শতাংশের বেশি পেতে পারে না।

এই নিষেধাজ্ঞা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কর্মসংস্থানভিত্তিক বিভাগে ভারতীয় আবেদনকারীদের ব্যাপারে প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্যাটো ইনস্টিটিউটের অভিবাসন অধ্যয়নের পরিচালক ডেভিড জে বিয়ারের একটি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারত থেকে কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ড ব্যাকলগ ২০২৩ সালের মার্চ মাসে এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু এবং বার্ধক্যের মতো কারণ বিবেচনায় নিলেও (যাদেরকে এই ব্যাকলগ পরিসংখ্যান থেকে বাদ দেওয়া যায়) গ্রিনকার্ডের জন্য কাউকে ৫৪ বছর থেকে ১৩৪ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই বিভাগে অপেক্ষারত প্রায় ৪ লাখ ১৪ হাজার ভারতীয় নাগরিক গ্রিনকার্ড পাওয়ার আগেই মারা যাবে। এ ছাড়া ভারতীয় পরিবারের লক্ষাধিক শিশুর নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রম করে যাবে (২১ বছর বয়স) এবং তাদের ভিসা আর বৈধ থাকবে না। তারা গ্রিনকার্ডের সারি থেকে বাদ পড়ে যাবে।