1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ পরিধি
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ পরিধি

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫

বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক দেশ ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, কেউ কেউ আবেদন ফিরিয়ে দিচ্ছে বা অতিরিক্ত কড়াকড়ি করছে। ফলে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।

আগে প্রতিবেশী দেশ ভারত ছিল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। কিন্তু এখন রাজনীতির পটপরিবর্তনের কারণে ভারতের ভিসা পাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর পর বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় ছিল থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা-কিন্তু এখন এসব দেশেও ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও জনপ্রিয় দূর গন্তব্য মিশর বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ‘ওকে-টু বোর্ড’ অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা স্থগিত করেছে। অন্যদিকে, ইউরোপের শেনজেনভুক্ত দেশগুলোয় ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান তালিকায় (২০২৪) শীর্ষ ৩-এ রয়েছে বাংলাদেশ।

ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপরারেটরগুলোর মতে, আগের সরকারের সময়ে অনেক সুবিধাভোগী নিয়মিত বিদেশ যেতেন। অনেকেই এখন দেশের বাইরে চলে গেছেন বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গা ঢাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ ভ্রমণপ্রেমীরাও এখন ট্যুরিস্ট ভিসা পাচ্ছেন না। এতে করে বিদেশ ভ্রমণ খাতে ধস নেমেছে, যার প্রভাব পড়েছে এভিয়েশন খাতসহ দেশের অর্থনীতিতে।

ট্রেফেল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ম্যানেজার মোহাম্মদ মামুন বলেন,”অনেক বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশ গিয়ে আর ফেরত আসেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ভিসা পেতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর কূটনৈতিক সম্পর্কেও পরিবর্তন এসেছে, যা ভিসা প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করেছে।”

ট্রাভেল পেশায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ মোহাম্মদ মামুন মনে করেন, এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি এবং ভিসা জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ আরও সংকুচিত হবে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি পর্যটকদের ৪০-৪৫ শতাংশ প্রতিবছর ভারত ভ্রমণ করতেন, বিশেষ করে চিকিৎসা, ভ্রমণ ও কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। এরপর ছিল থাইল্যান্ড, যেখানে ১৫-২০ শতাংশ পর্যটক যেতেন। এছাড়া মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ১০-১৫ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে (যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান) ১০-১৫ শতাংশ, ইউরোপে ৫-৮ শতাংশ এবং নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও চীনে ৫-৮ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটক যেতেন।

সংকুচিত হয়ে আসছে বহু পথ
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারতে ৪৭ লাখ ৮০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসেছে প্রায় ১০ লাখ, যা মোট পর্যটকের ২১.৫ শতাংশ—সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর ভারত বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ করে দেয়। কেবলমাত্র গুরুতর রোগী, শিক্ষার্থী এবং যাদের দিল্লিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, শুধু তাদেরকেই ভিসা দেওয়া হচ্ছে।

কোরাল আইল্যান্ড, পাতায়া, থাইল্যান্ড। ছবি আকাশযাত্রা
কোরাল আইল্যান্ড, পাতায়া, থাইল্যান্ড।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ভারতের ভিসা বন্ধের পর অনেকেই থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আগে থাইল্যান্ড প্রতিদিন ৮০০টি ভিসা দিত। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আবেদনের নিয়ম চালু হওয়ার পর সেই সংখ্যা কমে ৩৫০-এ নেমে এসেছে। এখন কেউই ৪৫ কার্যদিবসের আগে ভিসা পাচ্ছেন না।

থাইল্যান্ড দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “বাংলাদেশিদের ভিসা সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন দিনে মাত্র ৩০০টি ভিসা দেওয়া হয়। কারণ থাইল্যান্ড মনে করছে, অনেকে সেখান থেকে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন।”

ট্রেফেল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমাদে রাব্বানি জানান, “ভারতের ভিসা বন্ধের পর থাইল্যান্ডের জন্য ভিসার আবেদন বেড়ে যায়। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো, আবেদনের অনুপাতে ভিসা ইস্যুর হার খুবই কম। এমনকি অনেক বড় প্রোফাইলধারীও রিফিউজ হয়েছেন। এতে বাংলাদেশিরা থাইল্যান্ডের বদলে বিকল্প গন্তব্য খুঁজছেন।”

একসময় থাইল্যান্ডের পর ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস সফর করতেন অনেক বাংলাদেশি। মূলত ট্রাভেল হিস্ট্রি বাড়াতে একসঙ্গে তিন দেশ ভ্রমণ করতেন তারা। কিন্তু আগস্টের পর অনেকে ফিরে না আসায় ভিয়েতনাম ভিসা বন্ধ করেছে, কম্বোডিয়া কড়াকড়ি ও ভিসা ফি বাড়িয়েছে, আর লাওস ভিসা দিচ্ছে না।

কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া। ছবি সংগৃহীত
কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া। ছবি সংগৃহীত

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়াও ছিল মধ্যবিত্তদের জনপ্রিয় গন্তব্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসব দেশের ভিসা নীতিও কঠোর হয়েছে। একাধিকবার ভ্রমণ করলেও এখন অনেক আবেদনকারী ভিসা পাচ্ছেন না। মালয়েশিয়ায় ই-ভিসা থাকলেও সিঙ্গাপুরে জটিলতা, ইন্দোনেশিয়ায় ভিসা পেতে তিন মাস সময় লাগছে। ফলে একাধিক দেশ ঘোরার সুযোগ সংকুচিত হয়েছে।

ঢাকা-কায়রো সরাসরি ফ্লাইট চালুর পর বাংলাদেশিদের জন্য মিশর ‘ওকে-টু বোর্ড’ সুবিধার অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু করেছিল। তবে সম্প্রতি এই সুযোগের অপব্যবহার এবং দালাল চক্রের প্রতারণার অভিযোগে তা স্থগিত করা হয়।দেশটির জাতীয় বিমান সংস্থা ইজিপ্ট এয়ার পরিপত্র দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে ‘ওকে-টু বোর্ড’ সুবিধায় আর কোনো যাত্রীকে বোর্ডিং দেওয়া হবে না। ফলে মিশর ভ্রমণে আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের এখন থেকে ঢাকাস্থ মিশর দূতাবাস থেকে আগের মতো স্টিকার ভিসা নিতে হবে।

শেনজেন ভিসা ইনফোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ থেকে শেনজেন ভিসার আবেদন করা হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩৪৫টি। যার মধ্যে ২০ হাজার ৯৫৭টি আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। যা মোট আবেদনের ৫৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।

দক্ষিণ এশিয়ায় আশার আলো ও নতুন বাধা
বাজেট ভ্রমণের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলো সবসময়ই জনপ্রিয় ছিল। ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় অনেকে পাড়ি জমাচ্ছেন নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপে। এদেশগুলো এখনও বাংলাদেশিদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু রেখেছে। তবে শ্রীলংকায় ভিসা পেতে সময় লাগছে এক দিন। পাকিস্তান ভিসা সহজ করলেও সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় আগ্রহ কম। করাচি যেতে ইউএই হয়ে যেতে হয়, খরচও বেশি। তাছাড়া, সাম্প্রতিক পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনাও আগ্রহ কমেছে।

ঢাকা-মালে-ঢাকা রুটে ইউএস বাংলার সরাসরি ফ্লাইট
ঢাকা-মালে-ঢাকা রুটে ইউএস বাংলার সরাসরি ফ্লাইট

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ভুটানে কর (SDF) কমানো হয়েছে, বড় ফ্লাইট চালু হচ্ছে জুলাই থেকে। তবু বিমানভাড়া (৪৮ হাজার টাকা) বেশি হওয়ায় আগ্রহ কম। নেপালের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা, বিমানের ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। আগে ভারত হয়ে স্থলপথে অনেকে নেপাল-ভুটান ঘুরে আসতেন, এখন ভারত ভিসা না পাওয়ায় সেই পথও বন্ধ।এ দুই দেশে আগ্রহ মূলত প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে সীমিত।

মালদ্বীপে ভিসা সহজ হলেও খরচ বেশি। নতুন দম্পতিদের জন্য এটি আদর্শ গন্তব্য হলেও সেখানে নেই কেনাকাটার সুবিধা কিংবা বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা। শ্রীলংকা তুলনামূলক সহজ গন্তব্য, সময় ও খরচ দুটোই সহনীয়।

মধ্যপ্রাচ্যে আরও কঠোরতা, চীনে নতুন সম্ভাবনা
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও ভ্রমণ কঠিন হয়ে পড়েছে। ইউএই জুলাইয়ে ভিসা বন্ধ করেছিল, এখন সীমিত সংখ্যায় (৩০–৫০টি) চুক্তিভিত্তিক ট্যুরিস্ট ভিসা দিচ্ছে, যার ফি প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তবে চীন ভ্রমণ সহজ হয়েছে। ট্যুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসা সহজে মিলছে, এজন্য অনেকে বিকল্প গন্তব্য হিসেবে চীন বেছে নিচ্ছেন। ঢাকাভিত্তিক ‘ভিনদেশি লিমিটেড’-এর জান্নাতুল ফেরদৌসী জানান, “চীনের ভিসা সহজ করায় প্রচুর সাড়া পাচ্ছি, গ্রুপ ট্যুরও হচ্ছে।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com