1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ছুটি হোক কর্মক্ষমতা বাড়ানোর চাবিকাঠি
মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

ছুটি হোক কর্মক্ষমতা বাড়ানোর চাবিকাঠি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ছুটি মানেই স্বস্তি। একঘেয়ে রুটিন থেকে একটু নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ। তবে বিজ্ঞান এখন বলছে, ছুটি শুধু মানসিক ফুর্তির বিষয় নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা ও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার ফ্রাঙ্কলিন কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের একদল গবেষক এই বিষয়ে বিস্তৃত একটি মেটা-অ্যানালাইসিস চালিয়েছেন। এর ফল প্রকাশ করা হয়েছে ‘জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড সাইকোলজি’তে।

এই গবেষণায় উঠে এসেছে, যাঁরা ছুটি কাটান এবং সেই ছুটিতে সত্যিকার অর্থে কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন, তাঁরা শুধু বেশি উৎফুল্লই হন না, বরং তাঁদের কাজে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও বাড়ে। এই মেটা-অ্যানালাইসিসে ২৫৬টি ‘ইফেক্ট সাইজ’ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ছুটির সময় কর্মীরা নতুন করে পুনরুজ্জীবিত হন। সে সময় তাঁদের মানসিক চাপ কমে, ঘুমের মান উন্নত হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে। গবেষণাটি থেকে জানা যায়, ছুটির সময় যাঁরা পুরোপুরি কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে এই সুফল সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।

আজকের করপোরেট দুনিয়ায় ‘ব্যস্ত থাকা’ যেন একধরনের সম্মানজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ যদি বলেন, তিনি অবসর নিচ্ছেন বা ছুটিতে যাচ্ছেন, অনেকে সেটি বিলাসিতা ভেবে বসে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে একদম উল্টো কথা। গবেষণা বলছে, সঠিকভাবে নেওয়া ছুটি কেবল মানসিক শান্তি নয়, কর্মক্ষমতা, উদ্ভাবনী শক্তি, এমনকি দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছুটি কেমন হবে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। ছুটির সময় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, নতুন পরিবেশে যাওয়া, মানসিক বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা এবং আগেভাগে পরিকল্পনা করা—সবকিছু মিলিয়েই গড়ে তোলে একটি ‘রিস্টোরেটিভ’ বা পুনরুদ্ধারমূলক ছুটি। তাই ছুটি মানে অলসতা নয়; কর্মক্ষমতা বাড়ানোর চাবিকাঠি।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় বিশ্রামের গুরুত্ব

বর্তমান সময়ে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের চিত্র বেশ উদ্বেগজনক। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৪ সালের জরিপ বলছে, ৪৩ শতাংশ মার্কিন আগের বছরের তুলনায় বেশি উদ্বিগ্নতা বোধ করছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে মানসিক চাপ। সেখানে ৫৩ শতাংশ মানুষ স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। এরপরেই আছে ঘুমের সমস্যা। ৪০ শতাংশ মানুষের জীবনের মূল সমস্যা ঘুম ভালো না হওয়া। এমন বাস্তবতায় গবেষণা জানাচ্ছে, ছুটি নেওয়া শুধু মানসিক স্বস্তি নয়, বরং একধরনের প্রয়োজনীয় থেরাপি। শুধু সময় কাটানো নয়; গবেষকেরা বলছেন, ‘গুণগতভাবে উন্নত’ ছুটি উপভোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং নতুন অভিজ্ঞতায় নিজেকে নিমগ্ন রাখাই মূল উদ্দেশ্য।

ছুটি মানে গিল্টি প্লেজার নয়

ট্রাভেল টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান এক্সপেডিয়া ২০২৪ সালে ‘ভ্যাকেশন ডিপ্রিভেশন রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, মার্কিন কর্মীরা গড়ে বছরে মাত্র ১১ দিন ছুটি নেন। সেই তুলনায় ফরাসিরা ছুটিকে মৌলিক অধিকার মনে করেন। তাঁরা মানেন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও কর্মদক্ষতা বাড়ানো সম্ভব নয়। ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার ফ্রাঙ্কলিন কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের গবেষক রায়ান গ্রান্ট বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, ছুটি নিলে কর্তৃপক্ষ তাঁদের ঠিকমতো মূল্যায়ন করবে না এবং তাঁরা প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হবেন। বাস্তবে ঠিক উল্টোটা ঘটে। নিজেকে যত ভালোভাবে রিচার্জ করা যায়, কর্মজীবনে তত বেশি দক্ষতা নিয়ে ফেরা সম্ভব।’

কার্যকর ছুটি কেমন হওয়া উচিত

ছুটিতে থাকার সময় নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন। এতে মানসিক চাপ কমবে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
ছুটিতে থাকার সময় নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন। এতে মানসিক চাপ কমবে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

গবেষণায় ছুটির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সেগুলো কর্মীদের সুস্থতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। ছুটির প্রথম শর্ত হলো, নিজেকে কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখা। ছুটির সময় ই-মেইল, ফোন, মিটিং—সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখা মানসিক চাপ পুনরুদ্ধারে কার্যকর উপায়। ছুটি মানেই যে শুয়ে-বসে থাকা, এমন নয়। ছুটির সময়টাতে শারীরিকভাবে নিজেকে সক্রিয় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা ব্যায়াম, সাঁতার, সাইক্লিং বা ট্রেকিংয়ের মতো যেকোনো শরীরচর্চা ছুটির মান বাড়িয়ে তোলে। এগুলো শুধু শরীর নয়, মনকেও চাঙা করে। ভ্রমণ মানেই নতুন অভিজ্ঞতা। ভিন্ন পরিবেশ, নতুন জায়গা, অপরিচিত সংস্কৃতি—সবকিছু মিলে মানুষের মস্তিষ্কে একধরনের সৃষ্টিশীলতা ও প্রশান্তি তৈরি করে। তবে ছুটির আগে-পরে কিছুটা সময় রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন। ছুটির প্রস্তুতি এবং ফিরে এসে কাজের মধ্যে ফেরার জন্য এক-দুই দিনের ‘বাফার টাইম’ রাখলে ছুটির উপকারিতা আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

করপোরেট কালচারে পরিবর্তন জরুরি

বলা হয়, ‘ব্যস্ত থাকা সফলতার চিহ্ন’। কিন্তু আজকের বিজ্ঞান বলছে, ‘স্বাস্থ্যবান থাকাই সফলতার ভিত্তি’। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝতে হবে, দীর্ঘ সময় কাজ করানো ভালো ফল বয়ে আনে না; বরং ছুটি, কাজের পরিবেশে খানিক ছাড় দেওয়া এবং মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ কর্মীদের সফল করে। ছুটি মানে নিজের প্রতি বিনিয়োগ। কাজের চাপে পিষ্ট হয়ে যাওয়া নয়, বরং মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে নতুন উদ্যমে ফিরেই আমরা সত্যিকারের সেরা পারফর্ম করতে পারি।

তাই পরেরবার যখন ছুটি নিতে যাবেন, মনে রাখবেন বিজ্ঞান এখন আপনার পাশে।

সূত্র: সায়েন্স ডেইলি, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com