একজন মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরনের চাপ থাকে। কাজের চাপ, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত চাপ তো রয়েছেই; সেই সঙ্গে রয়েছে মানসিক চাপ। এসব চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে জীবন বা আনন্দ উদ্যাপন করার মতো সঙ্গী ও সময় সব সময় হয়তো পাওয়া যায় না। এ জন্য নিজেই নিজেকে সেলিব্রেট করুন। যাঁরা নিজেই নিজের জীবন ও মুহূর্ত উদ্যাপন করতে জানে, তারা সব ধরনের চাপ ঝেড়ে ফেলে নতুন করে পরদিন শুরু করতে পারে। এই সেলফ সেলিব্রেশন বা নিজের মতো করে আনন্দ উদ্যাপনের জন্য ছুটির দিনের বিকল্প নেই।
সেলফ প্যাম্পারিং
ছুটির দিন বাড়িতে যত কাজই থাকুক, অবশ্যই নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় রাখতে হবে। আর এই যত্ন নেওয়ায় থাকা চাই বাড়তি যত্ন। বাথটাব থাকলে পছন্দের শাওয়ার জেল মেশানো কুসুম গরম পানিতে ২০ মিনিট গা এলিয়ে বসে থাকুন। এ সময়টায় শুনতে পারেন প্রিয় কোনো গান, পড়তে পারেন জোকস বা রোমান্টিক কোনো বই, চেখে দেখতে পারেন প্রিয় কোনো খাবার। এরপর সুন্দর করে ঘষে ঘষে স্নান সেরে নিন। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি ও মানসিক চাপ কেটে যাবে অনেকটাই।
একা একাই বেরিয়ে পড়ুন
আপনার বড্ড বাইরে যেতে মন চাইছে। কিন্তু বর, বন্ধু বা পরিবারের কেউ রাজি হচ্ছে না। তোয়াক্কা না করে বেরিয়ে পড়ুন। পছন্দের পোশাক পরে বেরিয়ে পড়ুন। জুয়েলারি ও অনুষঙ্গও বাছাই করুন মনের মতো। এরপর ঠিক করুন এক ঘণ্টা রিকশায় ঘুরবেন, নাকি পার্কে হেঁটে বেড়াবেন? ক্যাফে বা লাইব্রেরিতেও যেতে পারেন। কিংবা এমন কোনো গন্তব্য যে থাকতেই হবে, সেটাও জরুরি নয়। যেসব পথের ধারে সারি সারি খাবারের দোকান বসে, সেসব দোকানে গিয়েও একে একে চেখে দেখতে পারেন সুস্বাদু সব খাবার। কিংবা আপনার বাসার পাশে যে রাস্তাটায় কোনো দিন যাওয়াই হয়নি, সেটার শেষ মাথা পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারেন।
ড্রাফটিং ক্র্যাফটিং
ক্র্যাফটিংয়ে সিদ্ধহস্ত হলে আপনাকে আর বলে দেওয়ার কিছু নেই, কী করে সুন্দর সময় কাটাতে হয়। নিজের সঙ্গে সুসময় কাটানোর সূত্র আপনার চেয়ে আর কে ভালো জানে, বলুন তো! সামনে কি পরিবার বা বন্ধুদের মধ্য়ে কারও জন্মদিন আছে? তাহলে তাদের গিফট বক্সটা প্যাক করে ফেলুন সুন্দর করে। ঘরের জন্য ডেকোরেটিভ আইটেম, যা যা বানাতে চেয়েও বানানো হয়নি, সেগুলোর দু-একটা বানিয়ে ফেলতে পারেন।
সৃজনশীলতায় শান দিন
সেলফ সেলিব্রেশন বা নিজের মতো করে আনন্দ করার ব্যাপারটা কিন্তু বেশ বড়। নিজের ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভাগুলোকে একটু একটু করে আলোর পথ দেখানোর দায়িত্বটা একেবারে নিজের। কারণ, নিজের জীবন নিজেরই সৃষ্টি করে নিতে হয়। পেইন্টিং, রান্না, বেকিং, সেলাই, নাচ বা গান—যেটাই ভালো লাগে সেটাই শিখুন। ছুটির দিনগুলোয় ক্লাস করতে পারলে ভালো। এখন ইউটিউব দেখেও অনেকে অনেক কিছু শিখছেন। আবার অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগও রয়েছে। শরীর ও মন ভালো রাখতে অনলাইনে যোগব্যায়ামের ক্লাসেও ভর্তি হয়ে যেতে পারেন।
নিজের ডিনার বা লাঞ্চ ট্রিট দিন
ছুটির দিন ভালোমন্দ খেতে মন চাইছে? তাহলে বাসার এলাকায় খোঁজ করুন ভালো কোনো রেস্তোরাঁ আছে কি না, যেখানে এখনো যাননি। দুপুর বা রাতে নিজেই নিজেকে জম্পেশ ট্রিট দিন। আর হ্যাঁ, খাওয়ার পর পছন্দের ডেজার্ট খেতে ভুলবেন না যেন! ফিটনেস সচেতন হলে ট্রেডমিলে একটু বাড়তি সময় দিলেই আর চিন্তা থাকবে না।
ঘরেও কাটতে পারে সুন্দর সময়
ছুটির দিনে যদি ঘর থেকে বের হতে মন না চায়, তাহলেও ক্ষতি নেই। সন্ধ্যায় ঘরেই উষ্ণ আলোয় বসে পছন্দর স্ন্যাকসসহ দেখতে পারেন নতুন কোনো সিরিজ বা সিনেমা। শুনতে পারেন গান। প্রিয় প্রাণীটির সঙ্গে কাটাতে পারেন সুন্দর সময়। নয়তো আধখানি পড়ে রাখা বইটাও শেষ করতে পারেন।
মন ভালো নেই? শখের চর্চা করুন
কোনো কিছুতেই মন ভালো লাগছে না? একা একা অবসাদে ভুগছেন? শখের চর্চা করুন। বাড়ির উঠোন, বারান্দা বা ছাদের বাগানের যত্ন নিন। মরা পাতা ও ডাল ছেঁটে দিন, পানি দিন, সার দেওয়ার প্রয়োজন হলে দিন। বাগান সাজানোর জন্য যা যা করা দরকার, করুন। সেলাই বা কুশিকাঁটার কাজ জানা থাকলে করতে পারেন। এসবের কিছুই ভালো না লাগলে সেজেগুজে এত দিন দেখব দেখব করে যে সিনেমাটা দেখা হয়নি, তা দেখতে চলে যেতে পারেন নিকটবর্তী কোনো সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্সে।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে