ঢাকার ব্যস্ত জীবনে অফিস-বাসা, বাসা-অফিস করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন মোটামুটি সবাই। সপ্তাহের ব্যস্তদিনগুলোর শেষে যে একদিন বিরতির দেখা মেলে তাও স্বস্তির শ্বাস ফেলে উপভোগের কোনও উপায় নেই। চন্দ্রিমা উদ্যান, হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, পূর্বাচল এলাকা- ঢাকার সব বিনোদন স্পটেই একটু স্বস্তির খোঁজে নগরবাসীর ভিড়। এসব স্পটে ঘুরেফিরে কৃত্রিম সৌন্দর্যও এক সময় ফিকে হয়ে ধরা দেয়।
পাহাড় ছুঁয়ে সমুদ্রে গা ভাসিয়ে দেওয়ার লোভ জন্মায় কখনো কখনো। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চাইলে সব ভিড়ভাট্টা আর জ্যাম ঠেলে ঢাকার অদূরে সীতাকুন্ডে দেখা মিলবে পাহাড়-সমুদ্রের। অল্প খরচেই সব সম্ভব। ছুটির দিনে ব্যস্ত নগরী ছেড়ে পাহাড়-সমুদ্রে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইলে অবশ্যই আগে থেকে একটু প্ল্যান করে নিতে হবে। সঙ্গে পাঁচ-ছয়জন ভ্রমণপ্রেমী বন্ধুদের একটা দল থাকলে একদিনের ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরও প্রাণবন্ত।
এই সফরে একদিনেই ঘুরতে পারবেন সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ও পতেঙ্গা সমুদ্র বন্দর। প্ল্যান করা থাকলে একদিনেই আরও ঘুরে দেখতে পারবেন গুলিয়াখালী সৈকত, খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সুবিধামতো যেকোনও বাসে সীতাকুন্ড বাসস্টপে নামতে হবে। জনপ্রতি বাস ভাড়া ৬৮০ টাকা। বাসস্টপে নেমে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হওয়ার জন্য সঙ্গীদের সঙ্গে পরামর্শ করে অল্প টাকায় সুবিধামতো হোটেল রুম ভাড়া করতে পারেন। ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে হালকা বিশ্রাম ও ক্লান্তি দূর করার কাজ দেবে হোটেল রুম।
সীতাকুন্ড বাসস্টপ থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। সিএনজি থেকে নেমে পাহাড়ে উঠার জন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে ৩০ টাকায় পাহাড়ী লাঠি কিনতে হবে। পাহাড় থেকে নেমে অক্ষত লাঠি ফিরিয়ে দিলে তারা ফিরিয়ে দেবে ২০ টাকা।
পাহাড়ে উঠার আগে নিচের দোকান থেকে পর্যাপ্ত পানির বোতল সঙ্গে নিতে হবে। যত সকালে পাহাড়ে উঠা যায়, আরোহীর জন্য ভালো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপ অসহনীয় হয়ে পড়বে। তখন পাহাড়ে উঠা কষ্টকর হয়ে যায়।
সকালে পাহাড়ে উঠার আগেই ভারি নাস্তা না করে, পাহাড়ের নিচ থেকে হালকা নাস্তা নিয়ে পাহাড়ে উঠতে শুরু করা ভালো। পাহাড়ে উঠার পর সবাই মিলে একসঙ্গে নাস্তা করে নিতে পারেন।
পাহাড়ে উঠা-নামার সময় বিভিন্ন পাহাড়ী ফল চোখে পড়বে সবগুলোর স্বাদ নিতে পারেন চাইলে। পাহাড়ের উঠার জন্য সকালের সময়টাই বেস্ট। উঠা-নামার পথে মাঝে মাঝে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন। এতে সুবিধা হবে।
পাহাড় থেকে নেমে সিদ্ধান্ত নিন গুলিয়াখালী সৈকত, খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত দেখতে যাবেন নাকি পতেঙ্গা সৈকতে গা ভেজাবেন। আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় গুলিয়াখালী সৈকত, খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত দর্শনার্থীদের জন্য উপযোগী থাকে না। দ্বিধাদ্বন্দ্ব এড়াতে স্থানীয়দের পরামর্শ নিতে পারেন।
সীতাকুন্ড শহর থেকে পতেঙ্গা সৈকতে যেতে এক দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। কয়েকজন মিলে চাইলে উবার ভাড়া করতে পারেন। উবারে ১ হাজার থেকে ১৫’শ টাকা ভাড়া নিতে পারে। অ্যাপস দেখে অথবা ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে ভাড়া নির্ধারণ করুন। অথবা অঞ্চলিক লোকাল পরিবহনে যেতে পারেন। এতে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা।
পতেঙ্গ সৈকতে অনেক ধরনের খাবারের হোটেল আছে। বেশিরভাগ হোটেলেই বিভিন্ন প্যাকেজে খাবার বিক্রি করে। ১২০ টাকায় সামুদ্রিক মাছ, দুই পদের ভর্তা-ডাল-ভাত এমন প্যাকজও আছে। দেখে-শুনে প্যাকেজ কিনুন। পুরোটা দিন উপভোগ করুন নিজের মতো করে।