লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিদের ফিরে আসার সংখ্যা বাড়ছে৷ ত্রিপোলিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘‘পর্যায়ক্রমে লিবিয়ায় বিপদগ্রস্ত ও আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনের অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সহযোগিতায় বেনগাজি থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে ১৩৯ জনকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে৷’’
লিবিয়ার বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইটে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে তারা ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন৷
দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটকসহ বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপদে দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং আইওএম এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ এ প্রেক্ষাপটে দূতাবাস নিয়মিত লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শন করে আটক বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা করছে৷’’
ফেরত আসাদের বেশিরভাগ বন্দি ছিলেন ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে
বিভিন্ন উপায়ে লিবিয়াতে আসেন৷ অনেককে আটক করে মানবপাচারকারীরা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে৷ অনেকে বন্দি হন লিবিয়ার বাহিনীর হাতে৷
এমন আটক ও বিপদে পড়াদের দেশে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ তার অংশ হিসেবে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লাইটে এক হাজার ২৪৫ জনকে ফেরত আনা হয়েছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ এই সংখ্যা ২০২২ সালের সারা বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি৷ আইওএম-এর স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচির অধীনে সে বছর ফেরত এসেছিলেন এক হাজার ১০২ জন৷ আর ২০২১ সালে এসেছেন ৮১৫ জন৷
দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ জানুয়ারি ত্রিপোলির তারিক মাতার ডিটেনশন সেন্টারে আটক ১৩১ জনকে ফেরানো হয়৷ ২১ ডিসেম্বর লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে ফিরেছেন আরো ১৪০ জন৷ তাদের মধ্যে ২৭ জন বেনগাজির গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন৷ ১৪ ডিসেম্বর ফেরত আসা ১৩৬ জনের মধ্যেও ৩৩ জন এই আটক কেন্দ্রটিতে ছিলেন৷ বেনগাজিতে আটক আরো ১৪৫ জনকে একটি ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৫ ডিসেম্বর৷ এছাড়া নভেম্বরের ২৭ ও ৩০ তারিখে দুইটি ফ্লাইটে ত্রিপোলিতে বন্দি থাকা ২৫৩ জন ফেরত এসেছেন৷
বেনগাজির গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে আটকসহ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিপদগ্রস্ত ১৫১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ৪ সেপ্টেম্বর দেশে পাঠানো হয়৷ ত্রিপোলির ডিটেনশন সেন্টারে আটক ১৩১ জন মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফেরেন ৩১ জুলাই৷
দূতাবাস জানিয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের পর ত্রিপোলি ও বেনগাজির বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশিদের সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইস্যু করেন৷ পরবর্তীতে তাদেরকে আইওএম-এর কাছে নিবন্ধনের মাধ্যমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
লিবিয়ায় কত বাংলাদেশি
বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত লিবিয়ায় কাজ নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৬৮৫ জন৷ এর মধ্যে গত দুই বছরে গেছেন ৬৪৩ জন৷
তাদের হিসাবে, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে যাওয়া বাংলাদেশির মোট সংখ্যা ১২ হাজার ৪৭৬ জন৷ কিন্তু আইওএম-এর জরিপ বলছে, ২০২৩ সালে লিবিয়ায় অবস্থান করা বাংলাদেশি ২৩ হাজার ৫৬৩ জন৷
আইওএম এর আরেক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে আসা বাংলাদেশিদের এক তৃতীয়াংশ তুরস্ক থেকে প্রবেশ করেছন৷ এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর হয়ে এসেছেন অনেকে৷ এজন্য চার হাজার ১৩৬ ডলার বা প্রায় ‘‘বাংলাদেশ থেকে ইমিগ্রেশন পেরোনো পর্যন্ত হয়ত তারা আইন ঠিকমতো অনুসরণ করেই যাচ্ছেন৷ পরে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে ট্রানজিট পয়েন্ট বা ল্যান্ডিং পয়েন্ট, যেটাই থাকুক না কেন ওখানে পৌঁছানোর পর তারা যে কোনোভাবেই হোক ভিক্টিম হয়ে যাচ্ছেন৷’’
লিবিয়ায় আসা এসব অভিবাসীর মূল লক্ষ্য থাকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইটালি পৌঁছানো৷ আইওএম-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইটালিগামীদের ১৪ শতাংশের বেশি ছিল বাংলাদেশি, যা দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ৷ দেশটি থেকে ভূমধ্যসাগর পার হতে গিয়ে অনেকে মৃত্যুবরণও করেন৷ অনেককে সমুদ্র থেকে বাধা দিয়ে ফিরিয়ে আনে লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনী৷ ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল চার হাজার ৪৪৮ জন, যা দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ২০ শতাংশ প্রায়৷ সে বছর বিভিন্ন আটককেন্দ্রে বন্দি ছিলেন দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷ বিভিন্ন সময়ে মানবপাচারকারীরা তাদের আটক করে নির্যাতন করার পাশাপাশি দেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে৷ এছাড়াও দেশটির বিভিন্ন আটককেন্দ্রেও অমানবিক পরিবেশে তাদেরকে থাকতে হয়৷