সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রধান আকর্ষণীয় রাজ্যের নাম দুবাই। বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ নানা কারণে দুবাই ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
বুর্জ আল খলিফা, বুর্জ আল আরব, দুবাই মল, পাম আইল্যান্ড, স্কাইডাইভিং, মরুভূমিতে সাফারি, মিরাকল গার্ডেন, কোরআন পার্ক, প্রমিজ ব্রিজসহ অনেক আকর্ষণীয় জায়গা ও অ্যাডভেঞ্চারের জন্য বিখ্যাত এ শহরটি। অতীতে দুবাইয়ে ভ্রমণ ভিসার অপব্যবহারের জন্য সবধরনের ভিসা বন্ধ করে রেখেছিল আরব আমিরাত। ২০১২ সালে বন্ধ হওয়ার পর এ বছর আবার ভিজিট ভিসা দেয়া শুরু করেছে তারা।
দুবাই শহরের উত্তরে অবস্থিত শারজাহ আমিরাতের শিল্প ও স্থাপত্যের কেন্দ্রস্থল। এছাড়াও দুবাইয়ের পূর্বদিকে রয়েছে ‘হাজার পর্বত’, যেখান থেকে আমিরাতের প্রধান শহরগুলির চাকচিক্যের বাইরে গিয়ে একটু প্রাকৃতিক মেজাজে সময় কাটাতে পারবেন।
স্কাইড্রাইভ : পৃথিবীর অনেক দেশেই স্কাইড্রাইভ রয়েছে। কিন্তু ‘দুবাই স্কাইড্রাইভ’ অন্যদের তুলনায় ব্যতিক্রম। দুবাইতে স্কাইড্রাইভ করতে হলে অনলাইনে ২-৩ দিন আগে বুকিং দিতে হয়। স্কাইড্রাইভ করা মানে আপনি পৃথিবীর এক অন্যরকম সুন্দর্য উপভোগ করার সাক্ষী হলেন। প্লেন থেকে জাম্প দেওয়ার পর ‘পাম জুমাইরাহর’ উপর থেমে দুবাই শহরের যে ভিউ আপনি দেখতে পাবেন তা এক কথায় অসাধারণ।
মুভি থিয়েটার : দুবাইতে বিভিন্ন সমুদ্র বিচের পাশেই এবং সুন্দর পরিবেশে সাজানো গোছানো অনেক মুভি থিয়েটার রয়েছে। সে দেশের মুভি থিয়েটারগুলো এতবেশি সুন্দর, ছবি উপভোগ করার থেকেও সিনেমা হলটি বেশি উপভোগ্য লাগবে আপনার কাছে। অবশ্যই দুবাই গেলে এই মুভি থিয়েটারগুলোতে ছবি দেখবেন।
সমুদ্র বিচ: দুবাইতে অনেক সুন্দর কিছু সমুদ্র বিচ রয়েছে। যা একেকটি দেখতে আমাদের স্বপ্নের মতো। একটি বিচ থেকে দেখা যায়, ‘পাম জুমাইরাহ’, আরেকটি থেকে দেখা যায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্টার সমৃদ্ধ ও বিলাসবহুল হোটেল ‘বুর্জ আল আরব জুমাইরাহ’। এছাড়াও রয়েছে দেখার মতো অরো অনেক সমুদ্র বিচ।
দুবাই শহরে ‘দুবাই মেরিনা’ নামে একটি সমুদ্র বিচ রয়েছে; যা দেশটির সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র বিচ এবং এটি ‘পাম জুমাইরাহ’ এর পাশেই। এখানে প্রতিদিন অনেক পর্যটক ভিড় করে এই অপরূপ সুন্দর্য দেখার জন্য। এই এলাকার বড় ও অকর্ষণীয় সব ভবন, মেরিনার পাশের লেক এবং লেকের উপর চলমান নৌকা গুলো আপনার মন কেড়ে নিতে বাধ্য।
মেরিনা লেকের পাশ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারেন দুবাইয়ের ‘মেরিনা মল’। মেরিনা মল ভবনের তৃতীয় তলায় রয়েছে অনেক ফুড কোর্ট। কম টাকায় পছন্দের সব মজাদার খাবারের পাশাপাশি উপভোগ করুন চারপাশের সৌন্দর্য। রাতে ‘দুবাই মেরিনা’ বিভিন্ন রং এর আলোতে এক অপরূপ রুপে সাজ নেয়। চারদিক আলোয় ফুটে উঠে।
পার্ক : আপনি ঘুরে আসতে পারেন ‘আল বারশা পন্ড’ পার্ক থেকে। সেখানে লেক এবং গাছের সমারহে অপরূপ এক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন আপনি। দুবাইতে এত বিশাল সব দালানের মাঝে গাছ খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। কিন্তু এখানে তার ভিন্ন একটি রূপ রয়েছে। এমন সৌন্দর্য দেখে আপনার মনে হতেই পারে, কীভাবে এই পার্কটি এত সুন্দর করে তৈরি করা হলো!
শপিং মল : আপনি দুবাই যাবেন আর শপিং মলে যাবেন না এমনটি হতে পারে না। ঘুরে আসতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও ব্যয়বহুল কিছু শপিংমলে, যেগুলো দুবাইতে অবস্থিত। এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিং মল ‘দুবাই মল’।
দুবাই মল : ‘দুবাই মল’ এক কথায় অসাধারণ। চোখ ধাঁধানো সব দোকান এবং ভেতরের পরিবেশ। ঘুরতে ঘুরতে আপনি বার বার থমকে যাবেন কিছু না কিছু দেখেই। মনে মনে আপনি ভাবতে বাধ্য এটি কীভাবে বানানো হয়েছে, কত দিন সময় লেগেছে এই জিনিসটি বানাতে, দাম কত। বিশ্বের সব নামি-দামি বড় ব্রেন্ডের দোকান পেয়ে যাবেন আপনি এখানে। দাম একটু বেশি হলেও চাইলে কিছু কিনে নিতেই পারেন।
দুবাই মরুভূমি : দুবাইতে অনেক মরুভূমি রয়েছে। দুবাই মরুভূমির জন্যও অনেক বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে ও লোকাল যে পর্যটকরা আসেন তারা গাড়ি ভাড়া করে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ান। দুবাইতে এটিকে ‘Desert Safari’ বলা হয়ে থাকে।
বুর্জ খলিফা’ ও ‘পাম জুমাইরাহ : দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বলা হয়ে থাকে। অনেক পর্যটক শুধু এই দুটি স্থান উপভোগ করতেই বারবার নিজ দেশ থেকে দুবাই উড়াল দেয়। আপনি যদি দুবাই যেতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চই আপনার স্বপ্নে ও আগ্রহের মূল কেন্দ্রেই আছে ‘বুর্জ খলিফা’ ও ‘পাম জুমাইরাহ’।
বুর্জ খলিফা : বুর্জ খলিফার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আগের দিনই এই ভবনে উঠার অনলাইন কপি নিয়ে নিন। দুবাই মলের নিচেই বুর্জ খলিফার টিকিট কাউন্টার। সেখানে আপনার অনলাইন কপি দেখিয়ে টিকেট বুঝে নিন। টিকিট নিয়ে রওনা দিন বুর্জ খলিফার দিকে।
পাম জুমাইরাহ : এখন আপনি জানতে পারবেন, দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আরেকটি, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কৃত্রিম দ্বীপ ‘পাম জুমাইরা’। পাম জুমাইরাহ নিয়ে অবাক করা বিষয় হলো, পাম জুমাইরাহ মহাকাশ থেকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। এই দ্বীপটি তৈরিতে যত সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে পুরো পৃথিবীর চারদিকে ২ মিটার উঁচু এবং ০.৫ মিটার চওড়া দেয়াল তিনবার তৈরি করা যাবে।
এর অ্যাপার্টমেন্ট বা ভিলাগুলোর দাম এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও প্রথম ধাপে সবগুলো (প্রায় ৪০০০) ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। বেশির ভাগই অগ্রিম বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এ তথ্যগুলো পেয়ে আপনি ধরণা করতে পারেন, পাম জুমাইরা কত সুন্দর বা আকর্ষণীয় হতে পারে। এমন সুন্দর দ্বীপ আপনি পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাবেন না। যে কোনো পর্যটক দুবাই যাবে আর পাম জুমাইরাহর সুন্দর্য উপভোগ করবে না- এমনটি হতে পারে না।
মিরাকল গার্ডেন : কবির ভাষায় ‘ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়’। তবে এই বিখ্যাত উক্তিটির বাস্তবতাও রয়েছে দুবাইয়ে। যেখানে ভালোবাসা আর অতিযত্নে এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করা হয়েছে। মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে যেখানে গাছ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর, সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। নাম দেয়া হয়েছে ‘মিরাকল গার্ডেন’।
বিশ্বের সব চেয়ে বড় ফুলের বাগান এটি। বাগানটির অবস্থান দুবাইয়ের শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ সড়কের পাশে। মরুভূমির মধ্যে নির্মিত এই বাগানের আয়তন ৭২ হাজার বর্গমিটার। প্রকৃতির ফুল-পাতা দিয়ে গড়া এই বাগান প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি যেন এক স্বর্গক্ষেত্র। ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডেতে যাত্রা শুরু করে এই বাগান। এখানে প্রবেশ করে কারও বোঝার উপায় নেই মরুভূমির কোনো দেশে আছি নাকি চিরসবুজ কোনো উদ্যানে আছি। চারদিকে নানা রঙের বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুল দিয়ে যে কত অবাক করা আর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করা সম্ভব তা দুবাই মিরাকল গার্ডেন না দেখলে বুঝা যাবে না। কারণ ফুল মানুষকে কতটুকু আনন্দ দিতে পারে তা দর্শনার্থীদের ভিড় দেখলেই বুঝা যায়।
কোরআন পার্ক: মূলত ইসলাম ধর্ম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মানুসারী ও সংস্কৃতির মানুষদের কাছে কোরআনের সৌন্দর্য ও অলৌকিকতা উপস্থাপনের জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে কোরআন পার্ক।
দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ অঞ্চলের ৬০ হেক্টর ও ৬ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে এ পার্ক বিস্তৃত। কোরআনে যেসব গাছ-গাছালি ও জীব-বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ আছে, তার সবই পার্কটিতে রয়েছে। কোরআনে বর্ণিত অলৌকিক ঘটনাবলীর চিত্রায়নও করেছে চিত্তাকর্ষকভাবে।
প্রমিজ ব্রিজ: দুবাইয়ের পর্যটকদের পছন্দের জায়গার নাম ‘প্রমিজ ব্রিজ’। ব্রিজটিতে এখন ঝুলছে হাজার হাজার প্রেমের তালা। ব্রিজটি ঘিরে এর চারপাশে রয়েছে চোখ জুড়ানো নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য। ভ্রমণ করতে এসে পর্যটকরা স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে এ ব্রিজের গায়ে লাগিয়ে যান তালা। দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ এলাকায় তৈরি করা হয় এই সেতু। সেতুর রেলিংয়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে তালা লাগান।
এছাড়াও দুবাইয়ে রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় স্থান। প্রতি বছর এসব জায়গায় ঘুরতে আসেন সারা বিশ্বের কোটি পর্যটক।