বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

চুক্তিতে বিয়ে করে যুক্তরাজ্যে যেতে চান গৃহবধূ, স্বামীর আত্মহত্যা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ মে, ২০২৩

গৃহবধূ আরেকজনকে চুক্তিতে বিয়ে করে যুক্তরাজ্য যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেনে পর্তুগালে থাকা স্বামী নুরুল ইসলাম সাজু (২৫) আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন সাজুর পরিবারের সদস্যরা।

গত মঙ্গলবার পর্তুগালের লিসবন শহরে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টার দিকে দরজার পর্দা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সাজু আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। ওই দিন রাত ১১টার দিকে বন্ধু আতিকুর রহমান এ খবর জানান সাজুর পরিবারের সদস্যকে। নিহত সাজু সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের খাগদিয়র গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে। মরদেহ আগামী বুধবার বা বৃহস্পতিবার দেশে পৌঁছাতে পারে তার মরদেহ।

সাজুর পরিবার সদস্যদের দাবি, স্ত্রীর প্ররোচনায় সাজু আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। আত্মহত্যার আগে স্ত্রীর বিষয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন সাজু। স্ত্রীর কারণে আত্মহত্যা করবেন বলেও মাকে জানান। কিন্তু ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না মা।

স্থানীয়রা জানান, ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সাজু। ২০১৯ সালে সাজু প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান যান। ২০২১ সালে গ্রিস হয়ে তিনি পুর্তগালে পৌঁছান। সেখানে থাকার সময় ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে ভিডিও কলে একই বছর ১৫ নভেম্বর ওসমানীনগরের ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তার শ্বশুরও প্রবাসী।

নিহত সাজুর পরিবারের সদস্যরা জানান, স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্য যেতে চেয়েছিলেন সাজুর স্ত্রী। এ কথা জানার পর আইইএলটিএস-সহ সব খরচ বহনসহ স্ত্রীকে যুক্তরাজ্যে পাঠানোর পক্রিয়া শুরু করেন সাজু। কথা ছিল স্ত্রীকে প্রথমে যুক্তরাজ্যে, পরে পর্তুগালে নিজের কাছে নিয়ে যাবেন। স্ত্রীকে যুক্তরাজ্য নিতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই পরিবারের সদস্যদেরও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন সাজু। গত দুই মাস আগে ছেলের কথায় ব্যাংক লোন নিয়ে এক লাখ টাকা পুত্রবধূকে দেন সাজুর মা।

সব ঠিক থাকলেও বিপত্তি বাধে যুক্তরাজ্য ভিসার আবেদনে। তিনি স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে অন্য একজনকে স্বামী বানিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে স্ত্রীর সঙ্গে সাজুর ঝগড়া হচ্ছিল। কিছুদিন আগে মায়ের কাছে কল দিয়ে এসব বিষয়ে কথা বলেন সাজু। মা ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে পুত্রবধূর সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন। পরে সাজুর মা মোবাইল ফোনে একাধিকবার সাজুর স্ত্রীকে কল দিলেও সাড়া পাননি। ফলে এ নিয়ে কথা বলারও সুযোগ হয়নি তার।

সাজুর মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে সাজু তার স্ত্রীকে লন্ডন নেওয়ার জন্য সকল কাজ করেছে। সে টাকার লোভে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে কন্টাক্ট ম্যারেজে (চুক্তিবদ্ধ বিয়ে) যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পায়তারা করলে সাজু মেনে নিতে পারেনি। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে আমার ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে তার স্ত্রী। আমি এর বিচার চাই।’

সাজুর বড় বোন মিলি বেগম বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে ভাইয়ের বিয়ের সকল প্রমাণসহ ওসানীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা গ্রহণ করছে না। সাজু আত্মহত্যা করলেও তার স্ত্রীর পরিবারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাই, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাজুর স্ত্রী ও শাশুড়ির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আমিন বলেন, সাজু প্রবাসে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে। তার পরিবার ডেথ সার্টিফিকেটসহ অন্য প্রমাণাদি দিতে না পারায় মামলা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। সঠিক কাগজপত্র পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com