1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
চুকনগরের আব্বাস হোটেলের চুইঝালের খ্যাতি দেশজুড়ে
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০১:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সস্তায় বিদেশ ভ্রমণ: স্বপ্নকে সত্যি করার বিজ্ঞানসম্মত গাইড ব্রিটেনে ভিসা বদল, বাংলাদেশিদের জন্য কী পরিবর্তন ক্রিপটিক গর্ভাবস্থা – যখন নিজেই জানেন না আপনি গর্ভবতী পর্যটন ভিসায় বিদেশ গিয়ে কাজ করলে কী কী শাস্তি হতে পারে স্পা থেকে সিনেপ্লেক্স , যা যা আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বিমানবন্দরে তিন বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে ইটালি, সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশিরাও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ইইউতে অভিবাসী কমেছে ২০ ভাগ, শীর্ষে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ ভারতের এই গ্রামে মেয়েদেরকে কাপড় ছাড়াই থাকতে হয়

চুকনগরের আব্বাস হোটেলের চুইঝালের খ্যাতি দেশজুড়ে

  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। দেখলেই জিভে জল চলে আসে। এমনই মুখরোচক খাবারের জন্য দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে খুলনার চুকনগরের আব্বাস হোটেলের। ভোজনরসিকদের কাছে আব্বাস হোটেলের মাংসের জনপ্রিয়তার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে চুইঝাল, রসুন ও মসলায় পরিপূর্ণ দেশি খাসির মাংস। সব সময়ই ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় থাকে। নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চুইঝালের খাসির মাংসের স্বাদ নিতে ছুটে আসেন এখানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আব্বাস হোটেলের রসুই ঘরের আগের কক্ষে আটি বেঁধে রাখা হয়েছে চুইঝাল, বস্তাভর্তি রসুন, পেঁয়াজ আর শুকনা মরিচ। সেখানে কাজ করছেন তিন নারী। তারা চুইঝাল, রসুন আর পেঁয়াজ কাটছেন। প্রস্তুত করছেন মসলা। এরপর রসুই ঘরে যেতেই দেখা মেলে বড় কড়াইয়ে মাটির চুলায় কাঠ পুড়িয়ে রান্না হচ্ছে খাসির মাংস। মাঝে-মধ্যেই বড় লম্বা হাতায় নেড়ে দেওয়া হচ্ছে যেন তলায় লেগে না যায়। বিভিন্ন পাত্রে বেটে রাখা মসলা আর আস্ত রসুন রাখা হয়েছে। চুইঝাল কেটে পানি ঝরানো হচ্ছে। খাসির মাংসের সঙ্গে মসলা, চুইঝাল, রসুনের মিশ্রণে ছড়িয়ে পড়েছে সুঘ্রাণ। এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রসুই ঘরের চুলা জ্বলতেই থাকে।

জানা গেছে, ষাটের দশকে আব্বাস হোসেন নামে এক ব্যক্তি চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলেন এই হোটেল। চুইঝাল ও খাসির চমৎকার মেলবন্ধনের রান্না প্রথম শুরু করেন তিনি। সেই থেকে তাদের তিন প্রজন্ম এই চুইঝালের মাংস রান্না করে আসছেন। বর্তমানে খুলনার চুকনগর, সোনাডাঙ্গা ও জিরো পয়েন্টে আব্বাস হোটেলের তিনটি শাখা রয়েছে। শুধুমাত্র চুকনগর আব্বাসের হোটেলে দৈনিক ২০ কেজি চুইঝাল আর ৪০-৫০ কেজি খাসির মাংস রান্না হয়। খুলনার ঐতিহ্যবাহী চুইঝাল খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি রয়েছে ঔষধিগুণ।

Dhaka post

যশোরের ঝিকরগাছা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন মো. আজিজ রহমান। তিনি বলেন, এই হোটেলের সন্ধান অনেক আগে থেকেই পেয়েছি। আসবো আসবো করে আসা হয়নি। এখানকার রান্না খুব ভালো শুনেই আজ পরিবার নিয়ে এসেছি। এসে দেখি খাবার সত্যিই মানসম্পন্ন। রান্না এবং পরিবেশ ভালো।

হোটেলে দুপুরে খেতে আসা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফজলুল হক মনি বলেন, এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার টেবিলে বসতে পারার বিষয়টি বেশ উপভোগ্য। খাসির মাংসের চুইঝালের স্বাদ মনে রাখার মতো। এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কামনা করি এবং এরা যেন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে খাওয়াতে পারে।

ভারতের মধ্যপ্রদেশ ভোপাল থেকে আসা তারক বৈরাগী বলেন, বাংলাদেশে আমার আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। আমি ঘুরতে এসেছি। শুনেছিলাম এখানে খাওয়ার খুব সুন্দর জায়গা আব্বাস হোটেল। আজ সেখানে খাবার খেলাম। খুব ভালো লেগেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ।

Dhaka post

আব্বাস হোটেলের ম্যানেজার আব্দুল ওহাব বলেন, এখানে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে। আমাদের এই রান্না মাংস বিদেশেও নিয়ে গেছে অনেকে। খেয়ে ভালো লাগে বিধায় বিভিন্ন দেশে আমাদের খাবার যায়।

চুকনগর আব্বাস হোটেলের মালিক আব্দুল হালিমের ছেলে আলী আকবার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হোটেলে একটাই আইটেম। তাহলো খাসির মাংস। আর এই খাসির মাংসের বিশেষত্ব হলো চুইঝাল ও রসুন। চুইঝাল দিয়ে আমরা খাসির মাংসটাকে ভুনা করে রান্না করি এবং খাবারটা খুবই সুস্বাদু হয়। আস্তে আস্তে কাস্টমারের কাছে ভালো লাগা থেকে আজ সুনামের সঙ্গে হোটেল চলছে।

তিনি বলেন, আমার দাদুর নামেই এই হোটেল। তিনিই হোটেল শুরু করেছিলেন। আজ ৩৩ বছর হলো তিনি মারা গেছেন। তারপর বাবা-চাচারা দেখাশোনা করেছে, এখন আমরা পরিচালনা করছি।

Dhaka post

হোটেল শুরুর ইতিহাস সম্পর্কে তিনি বলেন, চুকনগর বাজারে কোনো হোটেল ছিল না। দাদা এখানে হোটেল ব্যবসা শুরু করেছিল। দাদুকে রান্না শিখিয়েছিল তার আম্মা। অনেকে বলে, তিনি মাদ্রাজ থেকে শিখে এসেছে, এটা সত্য নয়। রান্নার কলাকৌশল দাদুর আম্মা তাকে শিখিয়েছে, তার সঙ্গে দাদু চুইঝালের মিশ্রণ ঘটিয়ে স্বাদে পরিবর্তন এনেছেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন হাটে গিয়ে খাসি কিনে নিয়ে আসে আমাদের কর্মচারীরা। প্রতিদিন সকালে সুন্দরভাবে প্রসেস করা হয়। আমরা নিজেরাই এগুলো করি। আমাদের বাইরের কোনো বাবুর্চি নেই। নিজেরা রান্না করি। সেজন্য খাবারের মানটা এখনো ধরে রাখতে পেরেছি। প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি মাংস, ২০ কজির মতো চুইঝাল রান্না হয়। ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি পিচ মাংস ১৭০ টাকা এবং এক প্লেট ভাত ২০ টাকা নেওয়া হয়। আর ডাল ফ্রি থাকে। সব মিলে ১৯০-২০০ টাকায় একজন ভালোভাবে খেতে পারে।

Dhaka post

আলী আকবর বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিদেশেও মানুষ আমাদের রান্না করা মাংস নিয়ে যায়। কিছু দিন আগে নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, নায়ক সিয়াম এসে খেয়ে গেছেন। এর আগেও এসেছেন নায়ক রিয়াজ, গায়ক এন্ড্রু কিশোরসহ ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদ, এমপি-মন্ত্রী। খুলনা আসলেই তারা আমাদের এখানে এসে খেয়ে যায়। সবাই খাওয়া-দাওয়া করে সুনাম করেছে, তখন আমাদের নিজেদের কাছে খুব ভালো লাগে। ব্যবসা নয়, সুনামটা ধরে রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আব্বাস হোটেলের নাম ভাঙিয়ে খুলনা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় হোটেল করেছে। খুলনার চুকনগর, সোনাডাঙ্গা আর জিরো পয়েন্ট বাদে আমাদের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুলনার ঐতিহ্যবাহী চুইঝাল আর আব্বাস হোটেল যেন একসঙ্গে মিশে আছে। চুইঝাল রান্নার স্বাদটাই অন্যরকম। চুইঝালের অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রতিনিয়ত কেউ যদি চুইঝালে খায় তাহলে বাতের ব্যথা এবং মাতৃকালীন ব্যথা নিরসন হয়। যাদের ঘুম কম হয়, তাদের ক্ষেত্রে চুইঝাল ভালো কাজ করে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com