মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত আমেরিকান থেকে শুরু করে বেকার চীনা নাগরিক—বেশির ভাগ ভোক্তাই এখন রেস্তোরাঁগুলোয় সাশ্রয়ী খাবারের দিকে ঝুঁকছেন। খবর: নিক্কেই এশিয়া।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ৫ ডলারে খাবারের একটি প্যাকেজ দেয় ম্যাকডোনাল্ডস। এ প্যাকেজে ভোক্তাদের ব্যাপক সাড়া পায় প্রতিষ্ঠানটি। সীমিত সময়ের জন্য দেয়া এ অফারে ছিল একটি চিজবার্গার বা চিকেন স্যান্ডউইচ, স্মল ফ্রাই (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই), চিকেন নাগেট ও একটি কোমল পানীয়। এসব পণ্য আলাদা আলাদা কিনতে গেলে ট্যাক্স ছাড়াই খরচ পড়ত ৮ দশমিক ৯৬ ডলার।
ম্যাকডোনাল্ডস ইউএসএর প্রেসিডেন্ট জো এরলিংগার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের ভক্তরা কী বলছে, তা স্পষ্ট। তারা আমাদের কাছ থেকে আরো সুলভ মূল্য আশা করে। এবারের গ্রীষ্মে তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাকডোনাল্ডসের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও একই পথে হাঁটছে। তারাও চেষ্টা করছে খাবারের প্যাকেজ ৫ ডলারের আশপাশে রাখতে। গত মাসে ৬ ডলারে সকালের নাশতার একটি প্যাকেজ দেয় স্টারবাকস। এ প্যাকেজে একটি স্যান্ডউইচ ও কফি ছিল। অন্য সময় এ প্যাকেজের দাম থাকে অন্তত ৮ দশমিক ৬২ ডলার। বার্গার কিং, ওয়েন্ডি ও আরবির মতো প্রতিষ্ঠানও এক অংকে বিভিন্ন প্যাকেজ দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তােরাঁগুলো খাবারের উপকরণ ও শ্রমিকের বাড়তি খরচ ভোক্তাদের কাঁধে চাপিয়ে দিত।
গত মাসে ব্যাংক অব আমেরিকা ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণ জনগোষ্ঠী বাইরে খাওয়ার চেয়ে ঘরে খাওয়ার দিকে ঝুঁকছে এবং মুদি দোকান থেকে সাশ্রয়ে কেনাকাটা করছে।
শেষ ১৩ প্রান্তিকের মধ্যে গত জানুয়ারি-জুনে প্রথমবারের মতো মুনাফায় নিম্নমুখী প্রবণতার স্বাদ পায় স্টারবাকস। ১৫ প্রান্তিকের মধ্যে প্রথমবারের মতো একই বাস্তবতার মুখে পড়ে কেএফসি অপারেটর ‘ইয়াম! ব্র্যান্ডস’।
যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি সম্প্রতি কমেছে, তবে এখনো তা প্রত্যাশিত পর্যায়ে আসেনি। এক বছরে দেশটিতে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কভিড-১৯ মহামারীর পর বাড়তি খরচের যে প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই কমে গেছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি মানুষের মধ্যে অর্থ সাশ্রয়ের ঝোঁক তৈরি করেছে।
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিল রেখে উপার্জন না বাড়ায় খরচ কমানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে জাপানের ভোক্তাদের মাঝেও। এরই মধ্যে দুপুরের খাবার দাম কমিয়েছে কেএফসি জাপান। যদিও গত মার্চ ও অক্টোবরে দুই দফায় কিছু খাবারের দাম বাড়িয়েছিল তারা। কিন্তু এতে তাদের ভোক্তা সংখ্যা কমে যায়।
কেএফসি জাপানের মতো দাম কমিয়েছে দেশটির আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এ তালিকায় রয়েছে স্কাইলার্ক হোল্ডিংস ও সাইজেরিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান। এশিয়ার আরেক দেশ চীনেও একই পরিস্থিতি। তবে সেখানে বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ায় সাশ্রয়ী খাবারের প্যাকেজের চাহিদা বেড়েছে। দেশটিতে এরই মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যের নানা প্যাকেজে ভোক্তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে হাইদিলাও ও ইয়ংহে কিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠান।
জাপানের এনএলআই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক তাকেশি তাকাইয়ামা বলেন, ‘একেক দেশের রেস্তোরাঁ একেক কারণে মূল্য কমাতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে মিতব্যয়ী করে তুলেছে। চীনে চলছে সংকোচনমূলক নীতি। অন্যদিকে জাপানে মানুষের আয় প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না।’