শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

চীনের দর্শনীয় স্থান

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২

চেংদু রিসার্চ বেজ অব জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং

চীনের জায়ান্ট পান্ডা শুধুমাত্র চীনা পর্যটকদের কাছেই জনপ্রিয় না, এই প্রাণীটি পৃথিবী জুড়ে শিশু থেকে শুরু করে সবার কাছে জনপ্রিয়। আপনি যদি পাণ্ডা সম্পর্কে না জানেন তবে আপনার জন্য বলছি, চীনের জায়ান্ট পান্ডা ভালুকের মত দেখতে সাদাকালো রঙের এক প্রকার প্রাণী। চীনের অনেক চিড়িয়াখানাতেই আপনি এদের দেখতে পাবেন। তবে সবচেয়ে বেশি জায়ান্ট পাণ্ডার দেখা মেলে সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু শহরে – যা জায়ান্ট পাণ্ডার হোমটাউন হিসেবে পরিচিত এটি চীনের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই শহরের উত্তরে অবস্থিত চেংদু রিসার্চ বেজ অব জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং সেন্টারে প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব কাছ থেকে এই কিউট প্রানিটিকে দেখার সুযোগ আছে।

১৯৮৭ সালে মাত্র ৬টি বৃহৎ পাণ্ডা নিয়ে এই রিসার্চ সেন্টার এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এই সেন্টারে ৮০টির মত জায়ান্ট পাণ্ডা রয়েছে। এখানে এখন পর্যন্ত ১২৪টি জায়ান্ট পাণ্ডার জন্ম হয়েছে। এখানে আপনি ভলান্টিয়ার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে পান্ডাদের কাছাকাছি যেতে পারেন এবং এদের জীবনধারণ ও বংশবিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

লি নদী

চীনের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান মধ্যে অন্যতম একটি স্থান হল লি নদী। চীনের গ্রামাঞ্চলের দিকে অবস্থিত এই লি নদী বিখ্যাত এর ক্রিস্টাল ক্লিয়ার পানি, শহরের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে যাওয়া এবং নদী পাশের চমৎকার পাহাড়ের জন্য। গুইলিনে অবস্থিত এই লি নদী শিল্পীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, লি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে চীনের চিত্রশিল্পীগণ এবং কবিগণ তাদের শিল্পকর্মের প্রেরণা পেয়ে থাকেন। ৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লি নদীটির গুইলীং এবং ইয়াংসু এর মধ্যবর্তী স্থানটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর।

নদীটির দুপাশে চমকপ্রদ আড়াআড়ি পাহাড়, নলখাগড়ার বন, গ্রামগুলির সুসজ্জিত চাষাবাদ এবং ঘন বাঁশ বাগান পর্যটকদের নজর কেঁড়ে থাকে। মেঘলা এবং রৌদ্রজ্জ্বল দিনে লি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কেঁড়ে নেয়। পর্যটকদের সুবিধার্থে নদীটি ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছোট ছোট বাঁশের নৌকা এবং সুসজ্জিত জাহাজ রয়েছে। পর্যটকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী নৌকা বা জাহাজে চড়ে নদী ভ্রমণ করে থাকেন।

দ্য ট্যারাকোটা আর্মি

১৯৭৪ সালে সাংহাই প্রদেশের সিয়ান শহরের প্রান্তদেশে সেখানকার কৃষকেরা খনন কাজের মাধ্যমে যে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি উন্মোচিত করে তা নিঃসন্দেহে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার – দ্য ট্যারাকোটা আর্মি। আর এই আবিষ্কারটি চীনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রায় ২০০ বছর ভূগর্ভস্থ ছিল এই টেরাকোটা আর্মি। এটি চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এর সমাধি মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত।

আসলে এই টেরাকোটা আর্মি জীবন্ত কোন সেনাবাহিনী নয়। সম্রাট এর মৃত্যুর পর স্থানীয় লিনথং জেলার কৃষকেরা সম্রাটের সম্মানার্থে এসব পোড়ামাটির সৈন্যবাহিনী তৈরি করে। এখানে মানুষের মত দেখতে ৮০০০ টি সৈন্য মূর্তি আছে যেগুলো লম্বায়ও প্রায় মানুষের মত। এই মূর্তিগুলোর একটির সাথে অন্যটির চেহারার মিল নেই। তাই নির্মাণের দক্ষতা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। সৈন্যর পাশাপাশি আরো রয়েছে ৫২০ টি ঘোড়া, ১০০ টির মত রথ এবং বেশকিছু বেসামরিক লোকজন। পোড়ামাটির এই সৈন্যবাহিনীতে সামরিক পদমর্যাদার স্বরূপ সাজানো হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, প্রাচীন সামরিক বাহিনী যেভাবে সুসজ্জিত থাকতো, কৃষকদের তৈরি মূর্তিগুলোতে সেই রূপ দেয়া হয়েছে।

বেইজিং এর নিষিদ্ধ নগরী

চীনের আরেকটি দর্শনীয় এবং জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হল বেইজিং এর নিষিদ্ধ নগরী। একসময় এই নগরীতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল, তাই এর নাম হয় নিষিদ্ধ নগরী। এখানে চীনের প্রাচীন স্থাপত্যবিদদের দ্বারা নির্মিত এই প্রাসাদটিতে চার হাজারেরও বেশি সুসজ্জিত কামড়া রয়েছে। এসব কামড়াগুলিতে লাল এবং হলুদ রংয়ের কারুকার্য রয়েছে। এই প্রাসাদের ছাদ সোনা দিয়ে তৈরি। এটি ‘ইম্পেরিয়াল প্যালেস’ নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জটিল প্রাসাদ। কথিত আছে এখানে ৯৮০টি ভবন ও ৯৯৯৯ টি কক্ষ আছে! মিং এবং কিং সম্রাটদের থেকে শুরু করে ১৯১২ সালে চীনের শেষ সম্রাট পুই পর্যন্ত এই প্রাসাদই ছিল সম্রাটদের বাসস্থান। বর্তমানে এই প্রাসাদটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

চীনের মহাপ্রাচীর

চীনে ভ্রমণের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে উঠে চীনের মহাপ্রাচীর – ‘দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর, চীনের প্রতীক এবং চীনের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান। প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার। গড়ে এর উচ্চতা প্রায় ৬ থেকে ৮ মিটার এবং কিছু কিছু জায়গায় প্রায় ১৬ মিটার পর্যন্ত। চীনের এই প্রাচীরটি বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। প্রাচীন যাযাবর জাতি, বিশেষত, যাযাবর মঙ্গোলিয়ানদের থেকে বাঁচানোর জন্য চীনা সম্রাটরা এই প্রাচীর নির্মাণ করেন। চীনে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই দেখতে ভুলবেন না এই প্রাচীন আত্মরক্ষামূলক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শনটি।

চীনের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর আরো আছে: রেইনবো মাউন্টেইন, লাসায় অবস্থিত পোতালা প্রাসাদ, সাংহাই এর দ্যা বান্ড, ভিক্টোরিয়া হারবার, হুয়াংশান এর হলুদ পাহাড় (মাউন্ট হুয়াং), হংজ়ৌ এর ওয়েস্ট লেক, লেশান জায়ান্ট বুদ্ধ, হানি টেরেস, লংমেন গুহা, ইয়ুংগ্যাং গুহা ইত্যাদি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com