মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত শমশেরনগর বিমানবন্দরটি একসময় ছিল এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ রানওয়েবিশিষ্ট বিমানবন্দর। কিন্তু ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে এই বিমানবন্দর।
এবার শমশেরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত থাকা সাতটি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বিমানবন্দরগুলো হচ্ছে শমশেরনগর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর। দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহন বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজারে রয়েছে অনেক পর্যটন স্পট। পাশাপাশি প্রবাসীদের যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হয়েছে। বেবিচকের ২০৩০ সালের কর্মপরিকল্পনা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
উপরে উল্লিখিত বিমানবন্দরগুলোর কোনোটিতেই বর্তমানে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে না। কয়েকটি রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার দখলে। অনেক বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনো বিমানবন্দরের চারদিকে বাউন্ডারি দেয়ালসহ কোনো ধরনের নিরাপত্তা চৌকি নেই।
শমশেরনগর বিমানবন্দরের আগের নাম ‘দিলজান্দ বন্দর’। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শমশেরনগর বিমানবন্দর। চা বাগানের মনোরম সৌন্দর্যের মাঝে ৬০০ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই নান্দনিক বিমানবন্দর। ৬ হাজার ফুট লম্বা ও ৭৫ ফুট চওড়া রানওয়ে সংযুক্ত বিমানবন্দরটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও আগে এটি নির্মাণ করা হয়, উদ্দেশ্য ছিল সামরিক কাজে ব্যবহার করা।
জানা গেছে, ১৯৪২ সালে ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার (বার্মা) ও ইন্দোনেশিয়াকে দখল করার উদ্দেশ্যে একসঙ্গে বড় যে দুটি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল, তার একটি হচ্ছে শমশেরনগর বিমানবন্দর। ১৯৬৮ সালে একটি দুর্ঘটনার পর এখানে বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে ঐতিহাসিক এই বিমানবন্দর।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে বিমানবন্দরটির রানওয়েসহ বিভিন্ন নিদর্শন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে এই বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। পরবর্তী সময়ে এখানে বিমানবাহিনীর একটি পরীক্ষণ স্কুল স্থাপন করে চালু করা হয় বার্ষিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তখন থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে।
বর্তমানে বিমানবাহিনীর ক্যাডেটদের সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বেবিচকের পিঅ্যান্ডডিকিউ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে ২৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এগুলো ব্রিটিশ সরকারের আমলে তৈরি। সব বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুটের মধ্যে। রানওয়েগুলো বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনায় অনুপযুক্ত। পর্যায়ক্রমে এই রানওয়েগুলোর দৈর্ঘ্য ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ফুটে উন্নীত করার টার্গেট আছে বেবিচকের।
এছাড়া রানওয়ের পিসিএন ৩০ থেকে ৬০ ফুট করার টার্গেট আছে। তাহলে এটিআর কিংবা ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ মডেলের ছোট ছোট যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করা সম্ভব হবে। এই বিমানবন্দর চালু হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াতে আমূল পরিবর্তন আসবে। তা ছাড়া সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও বড় পরিবর্তন আসবে।