হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি পড়ার সময় নিধি এবং শিখর সিংহের পরিচয়। সেখানেই প্রেম। নিধির বরাবরই ইচ্ছা ছিল মার্কেটিংয়ের চাকরি করার। পড়াশোনা শেষ করে নিধি একটি মার্কিন সংস্থায় মার্কেটিং এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্টের চাকরি পান। আর বায়োটেকনোলজি নিয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে শিখর যান হায়দরাবাদ।
সেখানেই প্রথম উপলব্ধি করেন যে, ন্যায্য মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার কোথাও নেই, মানুষের ভরসা তাই স্ট্রিট ফুড। সেটা ছিল ২০০৭ সাল। তার শিঙাড়া কিয়স্ক খোলার ইচ্ছার কথা নিধিকে জানান তিনি। কিন্তু তখন ব্যবসা শুরুর প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। ২০০৯ সালে শিখর বায়োকন কোম্পানিতে যোগ দেন। এর দু’বছর পর বিয়ে করেন ভারতীয় নিধি-শিখর।
সংসার, চাকরি— সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু শিখরের মনের কোণে সেই শিঙাড়া কিয়স্ক রয়ে গিয়েছিল। প্রায়ই দু’জনের মধ্যে এটা নিয়ে কথা হত। এর অনেক বছর পর, ২০১৫ সালে অবশেষে দু’জনে ব্যবসাটা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। শিখর তার পরদিনই চাকরি থেকে ইস্তফা দেন আর নিধি কোম্পানিতে কথা বলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর ব্যবস্থা করে ফেলেন।
প্রথমে বেঙ্গালুরুতে ফ্ল্যাটের কাছেই ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে শিঙাড়া বিক্রি শুরু করেন তারা। রাঁধুনিও রেখেছিলেন। কিয়স্কের নাম হয় ‘সামোসা সিংহ’। নিধি-শিখর দু’জনেই স্বাস্থ্যকর দিকটা নজর রেখেছিলেন প্রথম থেকেই। শিঙাড়া খেলে যেন আঙুলে তেল লেগে না থাকে, সে দিকে বিশেষ নজর ছিল তাদের। দামটাও বেশ কম রেখেছিলেন তারা।
২০ টাকায় দুটো আলু শিঙাড়া আর ৫৫ টাকায় দু’টো অর্থাত্ এক প্লেট চিকেন মাখানি শিঙাড়া। এ ছাড়া চকোলেট শিঙাড়াও বিক্রি শুরু করেন তারা। পাশাপাশি হোম ডেলিভারিও চলছিল। ক্রমে দিনে তাদের ৫০০টা করে শিঙাড়া বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু এ বার আরো বড় কিছু করার সময় এসে গিয়েছিল।
নিধি এবং শিখর কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। জার্মানির ইঞ্জিনিয়ারিং জায়ান্ট ‘দ্য কোম্পানি’ তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। ৮ হাজার শিঙাড়ার অর্ডার দেয় তারা। ব্যবসাটাকে বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার এটাই ছিল সেরা সুযোগ। কিন্তু সমস্যা ছিল অর্থের। ঝুঁকি নিয়ে নিধি এবং শিখর তাদের ফ্ল্যাট বেচে দেন।
সেই টাকা ব্যবসায় নিয়োগ করেন। একটা বড় রান্নাঘর কিনে তৈরি করেন তারা। শিঙাড়া যাতে খারাপ না হয়ে যায়, ভিতরের পুরটাও যাতে ডেলিভারির দিন পর্যন্ত টাটকা থাকে, সে রকম অভিনব কিছু ব্যবস্থা করেছিলেন শিখর এবং তার রাঁধুনি। হাইজিন বজায় রাখার জন্য শিঙাড়ায় কোনো প্রিজারভেটিভও দেয়ার তীব্র বিরোধী ছিলেন তারা।
এরপর আইনক্স, পিভিআর, ক্যাফে কফি ডে, টিসিএস সমস্ত জায়গায় ক্রমে তাদের নিজের আউটলেট খোলা হয়। বেঙ্গালুরুতে তাদের ৭টা আউটলেট রয়েছে বর্তমানে। ব্যবসা আরো বাড়ানোর জন্য নিধি শিঙাড়া উত্সবের আয়োজন করেন। বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানান। উত্সবে শিঙাড়া খেয়ে অনেকেরই ভাল লেগে যায়। তারা তাদের সংস্থায় ‘সামোসা সিংহ’-এর আউটলেটের ব্যবস্থা করেন।
ব্যবসা যত বাড়তে থাকে আরো উন্নত রান্নাঘর ও সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তার জন্য প্রয়োজন ছিল আরো অর্থের। এ বার আর নিধি-শিখরের পক্ষে বিনিয়োগ করা সম্ভব ছিল না। কোরো বিনিয়োগকারীর খোঁজ শুরু করেন তারা। তারা খোঁজ পান কানওয়ালজিত্ সিংহ নামে এক বিনিয়োগকারীর, যিনি ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
নিধিকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন শেখর। অনেক চেষ্টায় কানওয়ালজিতের ফোন নম্বর জোগাড় করলেও, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তারা। নিধি এতটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, ঠিকানা জোগাড় করে কানওয়ালজিতের বাড়ির সামনে হাজির হন। কিন্তু দু’দিন অপেক্ষা করেও তার সঙ্গে দেখা হয়নি নিধির। দু’সপ্তাহ পর ভাগ্যবশত ফোনে যোগাযোগ হয় তার।
নিধি এবং শিখরের অফুরন্ত এনার্জি এবং ব্যবসার প্রতি ডেডিকেশন ভাল লেগে যায় কানওয়ালজিতের। বিনিয়োগ করতে রাজিও হয়ে যান তিনি।বর্তমানে দিনে ১০ হাজার শিঙাড়া তৈরি করে ‘সামোসা সিংহ’। সমস্ত আউটলেটে ফ্রোজেন সিঙাড়া চলে যায় রান্নাঘর থেকে। গ্রাহককে সরাসরি গরম গরম ভেজে দেয়া হয়।
শিখর-নিধির পরবর্তী লক্ষ্য বেঙ্গালুরুতেই প্রতিদিন ৫০ হাজার শিঙারা বিক্রি করা। বেঙ্গালুরুর বাইরে হায়দরাবাদেও তাদের আউটলেট চালু হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি পুণেতেও তাদের আউটলেট চালু হবে বলে আশা করছেন তারা। ব্যবসায় নতুনত্ব আনার চিন্তা সব সময়ই করে চলেন তারা।
কী ভাবে গ্রাহকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, আরো নতুন কী চালু করা যায়, প্রতিনিয়ত ভেবে চলেছেন তারা। বর্তমানে ‘সামোসা সিংহ’-এর ব্যবসার পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক বছর তা বেড়ে ৮ কোটি হবে বলে আশা করছেন শেখর-নিধি। তথ্যসূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ।