কেউ যদি চাকরি ছেড়ে দেয়, স্বাভাবিকভাবেই নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু নাইজেরিয়ার সাবেক কিছু সরকারি কর্মচারির ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয়েছে।
এই কর্মচারিরা চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। কিন্তু এখনও তাদের পুরোনো কর্মস্থল থেকে নিয়মিতই বেতন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এ ধরনের খবর প্রচার হলে দেশটির প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু ক্র্যাকডাউনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর ঘোষণা, ‘এই অপরাধীদের অবশ্যই জালিয়াতি করে পাওয়া বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে।’
সাবিতু অ্যাডামস (ছদ্মনাম) নামের নাইজেরিয়া সরকারের এক কর্মী দুই বছর আগে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিমাসেই বেতন পেয়ে আসছেন। তিনি এখন যুক্তরাজ্যে ট্যাক্সি চালান। অবশ্য প্রেসিডেন্টের কঠোর বক্তব্যকে তিনি খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
অ্যাডামস জানান, প্রতিমাসে দেড় লাখ নাইরা (১০০ মার্কিন ডলার) না পেলে তার খুব একটা সমস্যা হবে না। কারণ ট্যাক্সি চালিয়ে তিনি এর চেয়ে বেশি আয় করেন।
৩৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, ‘যখন আমি প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা শুনলাম, আমার হাসি পেলো। কারণ আমি জানি, আমি এখানে ভালো করছি এবং আমি চিন্তিত নই।’
সরকারি তথ্যমতে, গত দুই বছরে অ্যাডামসের মতো আরও অন্তত ৩৬ লাখ নাইজেরিয়ান নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে থিতু হয়েছেন। অনেক তরুণ নাইজেরিয়ান নিজ দেশে সমৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। তাদের মতে, টিনুবু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যে সংস্কার এনেছেন, এতে নাইজেরিয়ান মুদ্রা নাইরা অনেকগুন দর হারিয়েছে। ফলে বিদেশে ভাগ্যান্বেষণ তরুণ নাইজেরিয়ানদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রবণতাকে বলা হচ্ছে ‘জাপা’। ইয়োরুবা ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে পালিয়ে যাওয়া।
প্রেসিডেন্ট টিনুবু বলেছেন, যারা এভাবে বেতন নিয়েছেন তাদের যেমন তা ফিরিয়ে দিতে হবে, একই সঙ্গে যারা এটি করতে সহযোগিতা করেছেন তাদেরও তদন্তের মধ্যে আনা হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও এর জন্য শাস্তি পেতে হবে।’
যুক্তরাজ্যে ট্যাক্সিচালক হিসেবে কাজ করা অ্যাডামস নিয়মিত বেতনের জন্য তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বসের সঙ্গে আমার খুব ভালো বোঝাপোড়া ছিল এবং তিনিই আমাকে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করেছেন।’
এ ধরনের ক্ষেত্রে বেতনের অর্থের একটি অংশ চুপ থাকার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পকেটে যায়, বাকি অংশ যায় পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও সম্ভবত মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের প্রতিনিধির কাছে। অবশ্য অ্যাডামসের ক্ষেত্রে বিষয়টি ছিল আরও সহজ। তিনি বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে আমার বস ছিলেন আমারই এক আত্মীয়।’
এ ধরনের ভৌতিক কর্মচারি নাইজেরিয়ার অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা। এটি নির্মুলে বহু অভিযান করা হয়েছে। কিন্তু ধারণা করা হয়, এখনও হাজার হাজার কর্মী সরকারি তালিকায় আছেন, প্রকৃত অর্থে যাদের কোনো অস্তিত্বই নেই।
দেশটির কানো রাজ্যের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক আউয়াল ইয়াকাসাই জানান, তিনি এ ধরনের ঘটনা শুনেছেন।
নাইজেরিয়ান সরকারে ৩২ বছর ধরে কাজ করা আউয়াল বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি কখনও কাউকে হাতেনাতে ধরতে পারিনি। তবে আমি এ ধরনের অনেক গল্প শুনেছি, যেখানে একজন চাকরি ছাড়ার পরেও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন।’
গতবছরের মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট টিনুবু সরকারি খরচ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। জানুয়ারিতে তিনি ঘোষণা দেন, এখন থেকে তাঁর ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের দেশে ও বিদেশে যাওয়ার খরচ ৬০ ভাগ কমিয়ে আনা হবে। অবশ্য অনেকেই বলছেন, টিনুবু প্রশাসন যেমনটা বলছে, বাস্তবে তার প্রভাব তেমন একটা নেই। এক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে, এই সময়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়ে টিনুবু এবং তাঁর ডেপুটি কাসিম শেতিমার জন্য উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে।
আরেকটি উদাহরণ সামনে আসছে, যেখানে দেখা যায় এই মাসের শুরুতেই ভাইস প্রেসিডেন্ট শেতিমার জন্য ১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে রাজধানীতে নতুন একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।