শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:১৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

চলো যাই সেন্টমার্টিন ঘুরে আসি

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বাঙ্গপসাগরের মাঝখানে প্রবাল রাশি মিলে মিশে একাকার হয়ে তৈরী করেছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রকৃতি যেন দুহাত ভরে সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে। সাগরের নীল জলরাশী আর নারিকেল গাছের সারি এ দ্বীপকে দিয়েছে অপার সৌন্দর্য। বালুকাময় সৈকত, প্রবালের প্রাচীর আর কেয়া গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে আলাদা এক বৈশিষ্ট। উত্তাল সাগরের নোনা পানি যখন আছড়ে পড়ে কেয়া গাছের ফাকে, ঝিরি ঝিরি বাতাসে তৈরী হয় সফেদ ফেনা, সে এক মাতাল করা দৃশ্য। রাতের জোৎস্না যখন লুটোপুটি খায় চিকচিকে বালুর বুকে, নীল আকাশ তখন আরো নীলাভ হয়। ছুনছান নিরব রাতে চারিদিকে শুধু সাগরের হুঙ্কার আর ঢেউ এর আছড়ে পড়ার গর্জন। অপূর্ব, অসাধারণ, অদ্ভুত সুন্দর সে দৃশ্য। হাজারো জোৎস্না রাতের চেয়েও সুন্দর সেন্টমার্টিনের একটি নির্ঘুম চাদনী রাত। এখানে সময়ের কাটা এগিয়ে চলে কিন্তু সৌন্দর্য পিপাসার তৃষ্ণা মেটে না।

অসংখ্য নারিকেল গাছ, কেয়া গুল্ম আর সবুজ বনানী এই দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পুরো দ্বীপ ঘুরলে মনে হবে এটি একটি নারিকেল বাগান। আপনি চাইলে নারিকেলের পানিতে তৃষ্ণা নিবারন করতে পারেন।এখানে হাজার তিনেক স্থানীয় লোকজন বসবাস করে। বেশীর ভাগ মুসলমান। খুবই ধার্মিক আর সহজ প্রকৃতির মানুষ তারা। তাই কোন প্রকার চুরি ছিনতাই এর সম্ভাবনা নেই। গভীর রাত পর্যন্ত আপনি জোৎস্না স্নান করতে পারেন, পারেন ঘুরে বেড়াতে।

এটি সত্যিই একটি ভিন্ন প্রকৃতির দ্বীপ। এর একদিকে যেমন প্রবাল প্রাচীর ঘিরে রেখেছে অন্যদিকে বালুকাময় সৈকাত প্রহর গুনছে আপনার অপেক্ষায়। সমুদ্রের স্বচ্ছ পানিতে আপনি সেরে নিতে পারেন গোসল। এই সৈকতের লাল কাকড়া আর নুড়ি পাথর আপনাকে নিঃসন্দেহে আকৃষ্ট করবে। অবচেতন মনে আপনি কুড়িয়ে নেবেন বিভিন্ন রঙ এর নুড়ি পাথর সাথে ঝিনুক।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রাপথটি মন্দ নয়। গাঙচিল আর ডলফিন দেখতে দেখতে এই দুই ঘণ্টার ভ্রমনটি কেটে যাবে। আর দূর সাগরের অথৈই পানির মাঝে। যখন সবুজ দ্বীপটি আপনার দৃষ্টি গোচর হবে। তখন সারা রাতের দীর্ঘ ভ্রমনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমিষেই। দ্বীপটি যতই কাছে আসতে থাকবে ততই আপনার ব্যকুলতা বাড়তে থাকবে। দ্বীপে পা দিয়েই বুঝতে পারবেন এটিকে নিয়ে মানুষ কেন এত মাতামাতি করে। কেনইবা একে বলা হয় সুন্দরের লীলাভূমি।

বাংলাদেশের যতগুলো দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা রয়েছে তার মধ্যে সেন্টমার্টিন অন্যতম। দ্বীপটির দৈর্ঘ প্রায় ৮ কিলোমিটার। দ্বীপের শেষ মাথায় সরু লেজের মত আর একটি অবিচ্ছেদ্য দ্বীপ রয়েছে যার নাম ছেড়াদ্বীপ। জোয়ারের সময় পানি এসে এটিকে মূলদ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে ছেড়াদ্বীপ। ভাটার সময় পানি নেমে গেলে এটি আবার মূলদ্বীপের সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। তখন পায়ে হেটেই যাওয়া যায়। এখানে কোন লোকবসতি নেই এই অংশটি প্রবালময়। এখানে স্বচ্ছ পানির নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো ধরনের প্রবাল। এখানে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। ব্লুমেরিন অবকাশ সহ বেশ কয়েকটি কটেজ আছে। কটেজগুলোও চমৎকার। বিদ্যুৎ নেই তাবে জেনারেটর বা সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। রয়েছে অনেকগুলো খাবার হোটেল। এখানকার তাজা রূপচান্দা মাছের ফ্রাই। সুটকি খুবই মুখরোচক খাবার। কেউ কেউ সেন্টমার্টিন এসে ঐ দিনই ফিরে যায়। আবার কেউ কেউ রাত্রী যাপন করে। যারা রাত্রী যাপন করেন তাদের জন্য রয়েছে দেখার অপার সুযোগ।

একসময় এই দ্বীপটি ছিল একটি বিশ্রামাগারের মতো। বিভিন্ন দেশের বণিকরা বিশেষ করে আরব দেশের বনিকরা পন্য নিয়ে যখন সওদা করতে যেত তখন এই দ্বীপে বিশ্রাম নিত। তখন থেকেই এই দ্বীপকে বলা হতো জাজিরা। পরবর্তীতে এটিকে নারিকেল জিনজিরাও বলা হতো। সর্বশেষে ইংরেজরা এই দ্বীপটি নামকরন করে সেন্টমার্টিন। সাহিত্যের ভাষায় দারুচিনি দ্বীপ নামটিও বেশ পরিচিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com