বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিবাস শান্তি নিকেতন আজ কেবলমাত্র ভারতবাসীর কাছেই নয় সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছেই একটি তীর্থক্ষেত্র বলে বিবেচিত। তার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তি নিকেতন পত্তন করেন। ১৮৬২ সালে তিনি তার বন্ধু ভূবনমোহন সিংহ কতৃক আমন্ত্রিত হয়ে বীরভূম জেলার রাইপুরে যান। সেখানকার উন্মুক্ত পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত গ্রাম দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে ১৮৬৩ সালে রাইপুরের জমিদারদের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমির পাট্টা গ্রহণ করেন। অদূরে ভূবন ডাঙ্গার সুবিশাল প্রান্তর।
১৮৬৪ সালে সেখানে তিনি একটি একতলা কোঠাবাড়ী তৈরী করে তার নামকরণ করেন শান্তি নিকেতন। স্থানটি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথকেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রহ্মাচর্যাশ্রম বিদ্যালয়। পরবর্তীতে এটি পাঠভবন নামে চিহ্নিত হয়। ১৯২২ সালে এটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। প্রথমে সেখানে সহশক্ষিা ব্যবস্থা চালু হয়। সারা বিশ্বের মধ্যে শুধুমাত্র শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্র ভাবনা অনুযায়ী মুক্তঙ্গানে শিক্ষা ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
ক্রমে শান্তি নিকেতনে গড়ে উঠতে থাকে শিল্পকলা সাহিত্য, বিজ্ঞান, সঙ্গীত ও নৃত্য কৃষি বিদ্যা প্রভৃতি বহুবিধ শিক্ষা ব্যবস্থা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য শান্তি নিকেতনে পড়তে আসে। শান্তি নিকেতন যেতে হলে কোলকাতা থেকে হাওড়া বা শিয়ালদাহ ট্রেনে বোলপুর যেতে হবে। আর বোলপুর ষ্টেশন থেকে শান্তি নিকেতনের দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। ষ্টেশন থেকে শান্তি নিকেতনে যাবার রিক্সা পাবেন। শান্তি নিকেতন পশ্চিমবঙ্গের প্রসিদ্ধ পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লখেেেযাগ্য। সেখানে বছরের অধিকাংশ সময়েই ভিড় লেগেই থাকে। তাই এখানে বিভিন্ন মানের এবং দামের বহু হোটেল গড়ে উঠেছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নসাধের শান্তিনিকেতন সার্বিক সাফল্য লাভ করেছে। তিনি একান্তভাবে অনুভব করেছিলেন গুরু ও শিষ্য পাশাপাশি অবস্থান করে পঠন-পাঠনে লিপ্ত থাকলে যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারবে। চার দেওয়ালে ঘেরা বিদ্যালয়ের বদ্ধ পরিবেশে কেবলমাত্র ছাত্রদেরই নয় শিক্ষকদেরও মন প্রান হাপিয়ে উঠতে বাধ্য তাইতো তিনি মুক্তাঙ্গনে পঠন-পাঠনে ব্যবস্থা করলেন মুক্তঅঙ্গনে, নীল আকাশরে নিচে।
প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে একাকার করে বিদ্যানুশীলনের মাধ্যমে যথার্থ শিক্ষাদান ও লাভ সম্ভব তা তিনি প্রমান করেছেন। শান্তি নিকেতন বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রতিদিন খোলা থাকে। মঙ্গলবার অর্ধদিবস এবং বুধবার বন্ধ থাকে। এছাড়া গ্রীষ্ম ও পূজার ছুটিতে প্রায় ১ মাস বন্ধ থাকে। সে সময় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পর্যটকদের জন্য সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে ছবি তুলতে হলে পূর্র্ব অনুমতি নিতে হয়