বান্দরবান বাংলার ভ‚সর্গ হিসেবে পরিচিত। অনেকে বান্দরবানকে বাংলার দার্জিলিংও বলে থাকেন। সৌন্দের্যের লীলাভ‚মি বান্দরবানকে সৃষ্টিকর্তা সাজিয়েছেন যেন দুহাত ভরে। ঋতু বৈচিত্রের সঙ্গে বান্দরবান রূপ বদলায়। মেঘলা পর্যটন স্পটটি বান্দরবান শহরের প্রবেশ দ্বারে। বান্দরবান শহর থেকে ৫কিঃমিঃ দূরের এই পর্যটন কেন্দ্রে হ্রদের পানিতেও বোটে চড়ার ব্যবস্থা আছে, হ্রদের উপর দুটি ঝুলন্ত সেতু, উন্মুক্ত মঞ্চ, মিউজিয়াম, ক্যান্টিন ও চিড়িয়াখানা আছে। পাহাড়ের চ‚ড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত নীলচল পর্যটন কেন্দ্র থেকেও সমগ্র বান্দরবন দেখা যায়। রাতের মেঘ মুক্ত আকাশে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন এখান থেকে। বিশেষ করে নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অপূর্ব। এখান থেকে পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বান্দরবান থেকে ৮কিঃমিঃ দূরে শৈলপ্রপাত ঝর্ণা অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ সৃষ্টি। সর্বক্ষণ ঝর্ণার হিমশীতল পানি এখানে বয়ে যাচ্ছে। এখানে দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেষে আদিবাসী বম সম্প্রদায়ের সংগ্রামী জীবন প্রত্যক্ষ করতে পারেন। এখানে বম জনগোষ্টির তৈরি বিভিন্ন পণ্য সুলভমূল্যে পাওয়া যায়। বছরের বেশিরভাগ সময় দেশী বিদেশী পর্যটকে শৈলপ্রপাত ভরপুর থাকে।
বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড় বান্দরবান জেলায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বর্ষাকালে ভারী মেঘ যখন পাহাড়টিকে ঘিরে ফেলে তখন পর্যটকেরা মেঘের মধ্যে ভেসে বেড়ায়। চিম্বুকের আশে পাশে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি ¤্রাে সম্প্রদায়ের বসবাস। পাহাড়ে উঠতে আকাবাকা পথ পেরিয়ে উপরে উঠতে হয়।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৪৭ কিঃমিঃ দূরে থানচি রোডে পাহাড়ের চ‚ড়ায় নীলগিরি অবস্থিত। এটি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এবং পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষন। নীলগিরি যাওয়ার পথে রাস্তার দুপাশে ঘন সবুজে ঢাকা সারি সারি পাহাড়, জুমচাষ, ছোট ছোট গ্রাম আপনাকে মুগ্ধ করবে।পাহাড়ের চ‚ড়ায় প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে স্বচ্ছ মনোরম সরোবরটি বগা লেক। সমতল থেকে ১৭০ ফুট উপরে অবস্থিত লেকটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎস নেই। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস এই লেকের ভেতর ড্রাগন দেবতার বসবাস করে। এটি বাংলাদেশের একটি রহস্যময় স্থান। এটি রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ১৭ কি.মি. দূরে অবস্থিত। বান্দরবান উপজেলায় অবস্থিত অপরূপ সুন্দর জলপ্রপাত নাফাখুম। নাফা নামের এক প্রকার মাছ দেখা যায় এখানে। মাছগুলো ¯্রােতের বিপরীতে লফিয়ে লাফিয়ে ঝর্ণা পেরোবার চেষ্টা করে বলেই এই জলপ্রপাতের নাম নাফাখুম।
বান্দরবন শহর থেকে মাত্র ৩কিঃমিঃ দূরে বালাঘাটায় পুরপাড়া নামক স্থানে সুউচ্চ পাহাড়ের চ‚ড়ায় বৌদ্ধদের পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণমন্দির অবস্থিত। সম্পূর্ণ সোনালি আর মেরুন রং এ সজ্জিত এ মন্দিরটি দেখতে মনে হবে স্বর্ণ দিয়ে মোড়ানো। স্বর্ণমন্দিরের বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর অবকাঠামো আপনার দৃষ্টি কাড়বে। এই জায়গা থেকে কালাঘাট উপশহরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। মন্দিরের ঘণ্টার আওয়াজ, বাতাসের আওয়াজ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
চিম্বুক পবর্তমালা থেকে বালিপাড়া যাওয়ার পথে থানচি রোডে নীল দিগন্ত অবস্থিত। পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জীবন নগরে পৌঁছে আশেপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
যেতে পারেন রিজুক ঝর্ণা দেখতে। বান্দরবান শহর থেকে ৫৪ কিঃমিঃ দূরে রুমায় অবস্থিত। প্রায় ৩শ ফুট উচু থেকে ঝরে পড়া জলপ্রপাতের রিমঝিম সুরের মুর্ছনা আর আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। রিজুকের চারিপাশে মারমা, বম নৃ গোষ্ঠির বসবাস। এখানে নৌকায় ভ্রমন করতে পারেন। ঝর্ণার শীতল পানিতে গোসল করতেও পারেন।
দেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে একটি হলো কেওক্রাডং। এর উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। শুকনো মৌসুমে যানবাহনে বগা লেক থেকে কেওক্রাডং যাওয়া সম্ভব হলেও বর্ষা মৌসুমে শুধুমাত্র পায়ে হেটে যেতে হয়।
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় অবস্থিত অনিন্দসুন্দর জলপ্রপাত আমিয়াখুম। পাহাড়ের বুক চিরে স্বচ্ছ পানির ধারা যেন ছুটে চলেছে অবিরাম গতিতে। বনের নিস্তবদ্ধতায় পানির কলকল শব্দ আপনাকে দরুনভাবে আনন্দ দেবে। এছাড়া আরো কিছু ঝর্ণা আছে আশেপাশে। তার মধ্যে বাকলাই ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, জমজ ঝর্ণা, চিংড়ি ঝর্ণা, ঝুরঝুরি ঝর্ণা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বান্দারবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় উপবন লেকে যেতে পারেন। এই লেকে রয়েছে দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু। নীরব নিস্তব্দ প্রকৃতি আর পাখি দেখে আপনাকে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
বান্দরবানের লামা উপজেলা শহর থেকে ৭কিঃমিঃ দূরে নিরিঙ্গা পাহাড়। এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ ফুট উচু। আন্দারমানিক আর একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্থান। বাংলাদেশ যে এত সুন্দর তা বান্দরবান না আসলে কখনো অনুভব করতে পারবেন না।
এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে। তাই আগে থেকেই বুকিং করে গেলে ভাল হয়।
বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর বান্দরবানে ২ রাত ৩দিনের প্যাকেজ পরিচালনা করে।