দার্জিলিং, কালিম্পং বা কার্সিয়াং যেখানেই যান না কেন, অক্টোবর থেকে মার্চ বেড়ানোর জন্য আদর্শ সময়। শীতের সময় ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্খা দেখা যায় ভাল ভাবে।
বৌদ্ধ পূর্ণিমায় কালিম্পং শহরে বিশেষউৎসব হয়। মন্ত্র উচ্চারন করতে করতে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। মিছিল চলে মনাষ্ট্রির উদ্দশ্যে। বেড়ানোর সময় গরম পোষাক আর কেড্স পরলে ভাল হয়। রাতের বেলা টর্চ সঙ্গে রাখুন। পাহড়ি বাস্তায় উঠারসময় কাজে লাগবে।
এন,জি,পি,তে গেলে গাড়ীতে সিকিম হাইওয়ে ধরে কলিম্পং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। শহর ছাড়িয়া পাহাড়ি রাস্তা শুরু হওয়া মাত্র তাপমাত্রার পরিবর্তন আর গাছপালার সৌন্দর্য আপনাকে আভিভুত করবে। সুনতালে কমলালেবুর চাষ হয় ভাল। সিজনে রাস্তার পাশে কমলালেবু চোখে পড়বে।
রামবি বাজারে মাশরূম চাষ হয়। এখানে মাশরুমের সাথে আরো পাবেন পেপে, মুলা, লাল সীম আর সর্ষে শাক। তিস্তা নদীর পাশ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়বে নানা রংএর দোতালা বাড়ী। পাহাড়ি বাড়ীগুলো বৈচিত্রময়। কাঠের বারান্দায় ফুলগাছের টবে উপচে পড়েছে নানা রংয়ের বাহারি ফুল।
এন জি পি থেকে কালিম্পং পৌছাতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। কালিম্পং শহরটি ভিষণ আকার্ষনীয়। এর আশেপাশে বেশ কিছু গ্রাম আছে প্রকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা।
এখানকার মূল আকর্ষন মনাষ্ট্রি। এখান থেকে হিমালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। কালিম্পং এর সবচেয়ে উচু পয়েন্ট জেলে পাহাড়। পাহাড়িরা মেঘের সঙ্গে বসবাস করে। জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড় থেকে আকাশ পরিস্কার থাকলেকাঞ্চনজঙ্ঘা আর বয়ে চলা তিস্তা স্পষ্ট দেখা যায় মনাষ্ট্র্রি ঘুরে যেতে পারেন পাইন ভিউ নার্সারি। এশিয়ার মধ্যে ক্যাকটাসের বৃহত্তম সংগ্রহ এই নার্সারিতে। যাদের গাছপালায় উৎসাহ আছে, বাগান করতে যারা ভালবাসেন তারা অবশ্যই যেতে পারেন এই নার্সারিতে। ফুল ফোটার মৌসুমে গেলে বড়ই ভাল লাগবে এই নার্সারি।
কালিম্পংশহরে হাট বসে শনিবার। টাটকা শাক শবজি ফলমূল মধু থেকে শুরু করে নিত্যপ্রায়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায় এখানে। এখানকার মধুর খুব সুনাম আছে। শনিবার এখানে থাকলে একবার এই হাটে যেতে ভুলবেন না।
এখানে পাওয়া যায় গুড়ের সন্দেশের মতো ললিপপ। দুধ থেকে তৈরী হয়। খেতে আমাদের দেশের প্যাড়ার মতো মনে হয়। ললিপপ এখানে খুবই জনপ্রিয়। বাড়ীর জন্য কিনে নিতে পারেন।
কালিম্পং এর কাছেই ছোট ছবির মতো এক গ্রাম নাম চিবো। কালিম্পং থেকে গাড়ীতে মাত্র দশ মিনিট। একটি সুন্দর রিসোর্ট আছে এখানে। পাহাড়ি গ্রামের ভিতর শহরের সব সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই থাকার জায়গাটি খুবই সুন্দর। পাহাড়ের ধাপে ধাপে সাতটি কটেজ। আবহাওয়া ভালো থাকলে ঘরের বারান্দা থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
কুয়াশাভরা মেঘেলা দিনের হিমেল ঠান্ডাই হোক বা রোদ ঝলমলে উষ্ণ সকাল সবটাই দারুন উপভোস্য। চিবোতে গোরখা সম্প্রদায়েরলোকজনই বেশি। কালিম্পং এ অবশ্য লেপচা সম্প্রদায়ের আধিক্য ।
ঘরগুলো ছিমছাম। খাটো চেয়ার, সোফা, টেবিল সবই রয়েছে জায়গামতো। ওয়াশরুমগুলো ঝকঝকে। গরম পানির সুব্যবস্থা আছে রিসোর্টে। ঘরের সাথে টানা বারান্দা। যেখান থেকে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন। তিন ধরনের ঘর আছে এখানে। ভাড়া ১৫০০, ১৭০০, এবং ২৫০০ টাকা। যারা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তারা প্যারা ডাইভিং করতে পারেন। সবুজ ঘাসের আঙ্গিনা পেরিয়ে ভাইনিং এরিয়া। এখানে ওয়াই ফাইয়ের ব্যবস্থাও আছে।
খাবারের মধ্যে পাস্তা, নুডুলস যেমন আছে,আবার পুুরি সবজিও পাবেন। চায়েজ ইজ ইওরস এখানে দুর্দান্ত এবাটা সালাদ পাবেন। পাতলা গাজর, শশা আর বাধাকপির ষ্ট্রিপের সাথে বাগানের টাটকা পুদিনা, কাচা আম আর অলিভ ওয়েলের ড্রেসিং দেওয়া ছালাদ খুবই সুস্বাদু।
ধুমায়িত দার্জিলিং চা নিয়ে ঘর লাগোয়া বারান্দায় বসেই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা সবদিকেই পাহাড়ে ঘেরা।
ঝলমলে রোদে দূর থেকে দেখা যায় দার্জিলিং, নামচি, রাবাংলা আর কালিম্পং শহর। বারান্দার নীচ দিয়ে পায়ে চলা পথ বেয়ে চলে যেতে দেখবেন একদল ছেলেমেয়ে। পিঠে বাচ্চা বেধে মহিলারা কাজে যায়।
প্রচুর ফুলের চাষ হয় এখানে। ব্রেকফাস্টের সাথে পাবেন নিজেদের বাগানের পাকা কলাও পেপে। চিজ অমলেট টোস্ট আর দার্জিলিং এর চা।
কাছেই সিলারগাও। গাড়ীতে যেতে একঘন্টা সময় লাগে। ছবির মতো গ্রাম। চিবোর চেয়ে এখানকার ভিউ বেশি সুন্দর।
ছড়ানো ছিটানো গ্রামের বাড়ীগুলো। যে যার দৈনন্দিন গৃহস্থলির কাজে ব্যস্ত। খোলা আকাশের নিচে পবেন মেমো আর কফি।ফেরার পথে পেডং হয়ে ফিরতে পারেন। এখান থেকে কিনতে পারেন স্পিনাচ পাস্তা, চিজ, মধু, বিস্কুট। খুবই ভাল এবং সস্তা।
এবার ফেরার পালা। কালিম্পং ভ্রমনের স্মৃতি আপনার সারাটা জীবন মনে থাকবে।