গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেন নোতিস মিতারাচি৷ এই সময় তার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷ এই চুক্তি অনুযায়ী, দেশটিতে ৩৫ হাজার বাংলাদেশির মৌসুমি কাজের অনুমতি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে৷ এর মধ্যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে চার হাজার মৌসুমি কর্মী নিবে গ্রিস৷ অন্যদিকে গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত ১৫ হাজার বাংলাদেশিকেও একই স্কিমের আওতায় নিয়মিত করা হবে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রিসের এই চুক্তির বিষয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বিস্তারিত জানিয়েছেন গ্রিক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি৷
নতুন আসা ও অনিয়মিতদের জন্য একই নিয়ম
দীর্ঘদিন ধরেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে গ্রিক সরকার৷ অভিবাসীদের সঙ্গে প্রশাসনের আচরণ নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন অধিকারকর্মীরা৷ সাক্ষাৎকারের শুরুতে মিতারাচি বলেন, ‘‘এই চুক্তির দুইটি দিক আছে৷ প্রথমত, অবৈধ অভিবাসনকে মোকাবিলা করা৷ আমি পরিস্কার বলতে চাই, গ্রিস অবৈধ অভিবাসন মেনে নিবে না৷ আমরা আমাদের সীমান্ত রক্ষা করব৷ কারা ইউরোপে আসবে সেটা আমরা পাচারকারীদের হাতে ছেড়ে দিব না৷ আমি বৈধ অভিবাসনের পক্ষে৷ অভিবাসীরা একটি সম্মানজনক উপায়ে গ্রিসে আসবে এজন্য পাচারকারীদের টাকা দিতে হবে না তাদের৷ তারা এখানে একটা সময়ের জন্য কাজ করবে, তাদের পরিবারকে সহায়তা করবে৷ এরপর আবার ক্রমন্বয়ে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত যাবে৷’’
তিনি জানান, চুক্তির মাধ্যমে প্রতি বছর চার হাজার কর্মী মৌসুমি কাজে গ্রিসে আসার অনুমতি পাবেন৷ তারা প্রতি বছর নয় মাস করে টানা পাঁচ বছর কাজের অনুমতি পাবেন৷ ‘‘এর মানে তারা সম্মানজনক একটি উপায়ে নিজেদের দেশে ফেরত যেতে পারবেন,’’ বলেন তিনি৷
বর্তমানে গ্রিসে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন৷ তাদের অর্ধেকই অনিয়মিত৷ দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী এই ১৫ হাজার বাংলাদেশিকেও একই স্কিমের আওতায় নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে৷ তবে এক্ষেত্রে তারাও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর গ্রিসে থাকার সুবিধা পাবেন৷ ‘‘একটা পর্যায়ে তাদের সবাইকে দেশে ফিরে যেতে হবে,’’ বলেন নোতিস মিতারাচি৷
প্রক্রিয়া কী হবে
মিতারাচি জানান, বিদ্যমান অনিয়মিত অভিবাসীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত হওয়ার জন্য কাজের চুক্তিপত্র দেখাতে হবে৷ একইভাবে প্রতি বছর যে চার হাজার কর্মী বাংলাদেশ থেকে আসবেন ভিসা পাওয়ার জন্য তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসের পক্ষ থেকে তার কাছে এই প্রক্রিয়ার খরচ বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বড়জোর একটি আবেদন ফি নেয়া হবে৷ কিন্তু সেটা উল্লেখযোগ্য নয়৷ প্রশাসনিক খরচ হিসেবে গোটা পাঁচ বছরের জন্য খরচ ১২০ ইউরোর মতো হতে পারে৷’’
তবে এক্ষেত্রে বড় একটি সমস্যা হলো বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন ব্যয় বিশ্বে অন্যতম বেশি৷ তবে গ্রিসে আসতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যাতে অতিরিক্ত খরচ না হয় সে বিষয়ে গ্রিক সরকারের উদ্যোগ থাকবে বলেও জানান মিতারাচি৷ এই আইনপ্রণেতা বলেন, ‘‘আমরা নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি৷ যাতে গোটা আবেদন প্রক্রিয়াটিকে সরল করা যায়, যাতে তাদের বাড়তি কোনো খরচ করতে না হয়৷’’
বর্তমানে গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি দেশটির কৃষিখাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করছেন৷ তাদের অনেকেই শ্রম শোষণের অভিযোগ করেন৷ নোতিস মিতারাচি বলেন, স্কিমের আওতায় নিয়মিত হওয়া অভিবাসীরা দেশটির শ্রম আইন অনুযায়ী সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাগুলো ভোগ করবেন৷ এক্ষেত্রে তাদের চাকরি, ন্যূনতম বেতনের নিরাপত্তা দেয়া হবে৷
‘‘দীর্ঘমেয়াদি মৌসুমি ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রিস অন্যতম পথ প্রদর্শক দেশ৷ এই পাঁচ বছর তিনি একজন নিয়োগকর্তার অধীনে একই চাকরীতে নিযুক্ত থাকার নিরাপত্তা পাবেন,’’ বলেন তিনি৷
নিয়ম না মানলে ‘গোটা প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে’
প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময় পরে অভিবাসীদের ফেরত যাওয়ার এই বিষয়েও জানতে চাওয়া হয় গ্রিক মন্ত্রীর কাছে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা মৌসুমি ভিসা স্কিম৷ তাদেরকে বছরে তিন মাসের জন্য গ্রিসের বাইরে থাকতে হবে৷ এই সময়ে তারা নিজ দেশে যাবেন না অন্য কোথাও সেটা তাদের বিষয়৷’’
তবে গ্রিস যে ভিসা দিবে তা দিয়ে শুধু দেশটিতেই আসা যাবে বলেও জানান তিনি৷ অর্থাৎ, শেঙেন ভিসা সুবিধার মতো ইউরোপের অন্য দেশে তারা ভ্রমণের সুযোগ পাবেন না৷
কেউ যদি ভিসা ও চুক্তিভঙ্গ করেন তাদের বিরুদ্ধে দেশটি কঠোর হবে বলেও জানান মন্ত্রী৷ এর ফলে গোটা প্রক্রিয়া বা চুক্তিতেও প্রভাব পড়বে বলে আভাস দেন তিনি৷ বলেন, ‘‘কেউ যদি নয় মাসের বেশি থাকে তাহলে তার ভিসা বাতিল হবে৷ এতে গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হবে এবং তা বাংলাদেশ ও গ্রিসের চুক্তিতেও প্রভাব ফেলবে৷’’
কবে শুরু
সাক্ষাৎকারে নোতিস মিতারাচি চলতি বছরই চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি বলেন, ২০২২ সালের শেষ থেকে ২০২৩ সালের শুরুতেই এর প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ আশা করছি ২০২৩ সালের মধ্যে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে৷’’ তবে এই চুক্তি নিয়ে গ্রিসে বসবাসরত মাত্র পাঁচ বছর থাকার অনুমতি এবং প্রতি বছর নয় মাস থাকার নিয়ম নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে৷