চকোলেট ভালবাসে না এমন লোক দূর্লভ এ দুনিয়ায়। বিশ্বের অনেক দেশই চকোলেটের উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত কিন্তু ছোট্ট দেশটার সঙ্গে টেক্কা দেওয়া কঠিন। হ্যা ঠিকই ধরেছেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের কথাই বলছি। গন্তব্যস্থান জ়ুরিখ। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। আছে অজস্র ব্যাঙ্ক, ফিফা, গুগলের হেডকোয়ার্টার, অজস্র কাফে, সুইস ঘড়ির দোকান আর চকোলেট। যদিও চকলেটের মূল উপকরণ কোকো, চিনি ইত্যাদি বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও প্রায় এদেশের একাধিক ব্র্যান্ড বিশ্ববিখ্যাত প্রায় অষ্ঠাদশ শতাব্দী থেকে। যেমন লিন্ডট্ (Lindt), নেসলে (Nestle), টোবেলরন (Toblerone), ল্যাডারেক (Läderach), ক্যামি (Camille), মিল্কা (Milka) ইত্যাদি ইত্যাদি। এই মিল্ক চকোলেটের উৎপত্তি কিন্তু এই সুইৎজ়ারল্যান্ডেই। এছাড়াও যে কতরকমের চকোলেট যে কি বলব।
যদিও মজার ব্যাপার হল, চকোলেটের সমস্ত উপকরণই অন্যান্য দেশ থেকে আসছে। কিন্ত তৈরি হচ্ছে খোদ সুইৎজ়ারল্যান্ডে, এক অভিনব উপায়ে, যার স্বাদে গোটা পৃথিবীর লোক মোহিত। এর মূল কারণ হল এখানকার উচ্চমানের খাঁটি দুধ। সুইস চকোলেটের বৈশিষ্টই হল দুধ আর চিনির পরিমান কোকোর থেকে বেশি। তাই স্বাদে শ্রেষ্ঠ আর মুখে দিলেই গলে যায়। আবার বেলজিয়ান চকোলেটে কোকোর পরিমান বেশি তাই তার স্বাদ আবার অন্যরকম। দুধের উৎপাদন এদেশে সবচেয়ে বেশি অন্যান্য উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে। প্রায় ২১ শতাংশ। খাঁটি স্বাদের জন্য সব রকমের দুধের তৈরি খাবারের স্বাদই আলাদা। যেমন দই তেমনি চিজ় আর মাখন।
চকোলেটের কথায় ফেরা যাক। এই যে প্রথমে যতগুলি চকোলেট ব্র্যান্ডের নাম করলাম সেগুলো এক-একটি পরিবারের। প্রথম মিল্ক চকোলেটের অভিনব উপায়ে তৈরি করেছিলেন Francois Louis Cailler প্রায় ১৮১৯ সালে। তারপর থেকে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরেছে অনেক চকোলেট তৈরির কারখানা, যা অনেকের জীবিকার উপায়ও বটে। আর সারা বিশ্বে নাম। এখানে চকোলেট ফ্যাক্টরি টুর হয়, যা পায়ে হেঁটে বা বোটে করেও হয়। এছাড়া সব ব্যান্ডেরই রড় বড় দোকান আছে জ়ুরিখে যেখানে আপনার পছন্দের সব রকম চকোলেট কিনতে পারবেন। সুইৎজ়ারল্যান্ডের আর একটি দুগ্ধজাত খাবারের জন্য বিখ্যাত যা হল চিজ়। এখানকার Emmental cheese খুব বিখ্যাত ও সুস্বাদুও বটে। এছাড়াও প্রায় ৪৫০ রকমের চিজ় এদেশে হয়।
জ়ুরিখ কিন্ত খুব সুন্দর শহর। আয়তনে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বৃহতম ও ব্যস্ততম শহর। কিন্তু সারা শহর ট্রামে করে সুন্দর ঘুরে বেড়ানো যায়। এখানে প্রচুর দোকান যারা বাজার করতে আসেন তাদের কাছে স্বর্গ। একটি রাস্তার কথা তো না বললেই নয় Bahnhofstrasse, লোকে বলে বিশ্বের তৃতীয় ও ইউরোপের সবচেয়ে দামি শপিং অ্যাভিনিউ। পায়ে হেঁটে রাস্তার একপ্রান্ত থেকে আরেক মোড় দুধারে দোকান দেখতে দেখতে অনায়াসে সময় কেটে যাবে। চকোলেট ছাড়াও সুইস ঘড়ি ও গহনার জন্যও বিখ্যাত। এখানকার রেলওয়ে স্টেশনও দেখবার মতো, বিভিন্ন লেভেলের এবং সেখানেও শপিং সেন্টার। দিনে প্রায় ৩০০০ ট্রেন যাতায়াত করে এটি বিশ্বের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন। এখান থেকে আশেপাশে অনেক জায়গা ডে ট্রিপ করা যায়। যেমন লুর্সান, মাউন্ট টিটলিস্, ইনটারলেকেন ইত্যাদি আরও অনেক।
কলকাতা থেকে দূরত্ব ৪৬২১ মাইল। সব ফ্লাইটই via বা মুম্বাই বা দিল্লী থেকে ডায়েরেক্ট প্লেনে সোজা জ়ুরিখ।
গ্রীষ্মকালই যথাযত সময় এইসময় তাপমাত্রা মনোরম ২২-২৪ সে আসেপাশে থাকে। শীতকালে অনেক সময় -২ বা -৩ মধ্যে।
ছোট বড় সব রকমের হোটেল আছে এছাড়াও সেল্ফ ক্যাটারিং ফ্ল্যাটও সহজে উপলব্ধ। অনলাইনে সহজে দেশে বসেই বুক করা যায় তাহলে নিশ্চিন্তে যাওয়া যায়।