বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার গতি ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলের সঙ্গে দূরত্ব কমছে ঘূর্ণিঝড়টির।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ঝুঁকির আশঙ্কায় শনিবার সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শনিবার সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজার-ঢাকা রুটে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগামীকাল রবিববার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোর্তজা সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে। কাল সন্ধ্যার আগে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজারে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আজ শনিবার সকাল সাতটা থেকে কাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কক্সবাজার বিমানবন্দরের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।”
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কক্সবাজার-ঢাকা রুটে প্রতিদিন বাংলাদেশ বিমান, ইউএস–বাংলা, নভোএয়ারসহ চারটি সংস্থার অন্তত ১০টি বিমান চলাচল করছে। দৈনিক অন্তত ৪০টির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। তা ছাড়া কক্সবাজার উপকূলের হ্যাচারিগুলোয় উৎপাদিত বাগদা চিংড়ির পোনা খুলনায় পরিবহন করা হয় কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে একাধিক কার্গো বিমানে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আজ সকাল থেকে কক্সবাজার-যশোর রুটেও কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ আছে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, সকাল ছয়টার দিকে কিছু যাত্রী ঢাকায় যেতে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছালেও কার্যক্রম বন্ধ রাখার খবর পেয়ে তারা হোটেলে ফিরে গেছেন।
এদিকে, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দেওয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ জন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চর ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ–পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ–পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে কাল রবিবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও এর কাছের উপকূলীয় এলাকায় “মোখা”র অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।