মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন
Uncategorized

ঘুরে দেখুন বস্টন শহর

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১

পায়ে হেঁটে না দেখলে শহর চেনা হয় না যারা বলেন, তাঁদের সঙ্গে আমার বিলকুল বিরোধ নেই। সাংবাদিকতার প্রথম পাঠে শিখেছিলাম, যেটা তোমাকে বলা হবে সেটা আসলে জনসংযোগ বা পাবলিক রিলেশন। যেটা বলা হবে না সেটাই সংবাদ। সেভাবে দেখলে একটা শহরের হৃদপিণ্ড, যাকে বলে ডাউনটাউন, সেটাই তার সোচ্চার শোকেস। যা সে হতে চায়, দেখাতে চায়, বলতে চায়। মানে পিআর। কিন্তু হার্টে কি হৃদয় থাকে! আসলে সে যা, যেমন, সেই আটপৌরে রূপটা তার অলিগলি পাকস্থলিতে লেখা থাকে। শহরের গলিঘুঁজি পরখ না করলে কি তাকে অনুভব করা যায়! সে জন্য খেয়ালখুশি মতো হাঁটা জরুরি। তা পায়ে হেঁটে এবং গাড়িতে দিনচারেকে আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন শহর বস্টনের তেমনকিছু দেখাশোনা হল বইকী! সত্যিই চেনা হল কি না, বলতে পারব না।

বস্টন শহরে ঘোরাঘুরির একটা ভাল ব্যবস্থা হল ‘হপ-অন হপ-অফ’ ট্রলি ট্যুর। এখানকার  ট্রলি আমাদের ট্রাম নয়। কথাটা বললাম এজন্য, আমেরিকার অনেক জায়গায় ট্রামকে ট্রলি বলে। লৌহবর্ত্মেই তাদের চলাফেরা। মাথায় বিদ্যুৎ টিকি। বস্টনের ট্রলি তা নয়। একে আমাদের দোতলা বাসের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলা যায়। দেখতে খানিকটা কাচ দেওয়া দোতলা বাসের মতো হলেও, পশ্চিমের অনেক শহরে পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত যানগুলিতে যেমনটা দেখা যায় তেমন হুডখোলা নয়। সকাল ন’টা থেকে বিকেল চারটে অবধি এই ট্রলিগুলি শহরে টহল দিয়ে বেড়ায়। শহরের ১৯-২০টা দ্রষ্টব্যের মধ্যে। টিকিট কেটে যে কোনও একটাতে চড়ে বসলেই হল। যে এলাকা দিয়ে যাচ্ছে ট্রলি, চালক আপনাকে তার ভূগোল ইতিহাস, স্থাপত্যশৈলী এমনকী, ক্ষেত্রবিশেষে সমাজতত্বও বুঝিয়ে দেবেন। পছন্দ হলে নেমে পড়ুন। জায়গাটা ঘুরে ফিরে দেখুন ভাল লাগলে খানিকটা সময কাটান। দেখা হয়ে গেলে ফের উঠুন অন্য কোনও একটা ট্রলিতে। ওই স্টপ থেকেই।

ফলে শহরে হারাবার কোনও সম্ভাবনা নেই। যদিও এখন গুগল সারা পৃথিবী গুলে খেয়েছে। কাজেই ম্যাপের মাঝখানে হারানো খুব মুশকিল। তবু এই ঘোরাঘুরি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের। সহযাত্রীর জন্য দাঁড়াতে হয় না। যেখানে খুশি কম বা বেশি সময় দেওয়া যায়।  যে কোনওটাতেই নামতে উঠতে পারেন আপনি। বিকেল চারটে পর্যন্ত যত খুশি ঘুরে বেড়ান। কেউ বাধা দেবে না। একদিনে না পারেন দুদিনের প্যাকেজও আছে।

বস্টন আমেরিকার ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির আন্দোলন, ব্রিটিশদের সঙ্গে সংঘাতের শহর। নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রাকপর্ব বা সলতে পাকানোর শহর। আর তার সঙ্গে ভারতের বিশেষ করে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের নামও জুড়ে গিয়েছে বহুদিন আগে থেকে। ‘বস্টন টি পার্টি’র কথা অনেকেই শুনেছেন। সংক্ষেপে বললে,১৭৭৬সালের ১৬ ডিসেম্বর ব্রিটিশ বিরোধী গোষ্ঠী সন্স অফ লিবার্টির সদস্যেরা ছদ্মবেশে ব্রিটিশ জাহাজে উঠে কয়েকশো  চায়ের পেটি সমুদ্রের জলে ফেলে দিয়েছিল। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন মোতাবেক তখন চায়ের উপর প্রচুর কর দিতে হত। তারই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন বিদ্রোহীরা। ওই ঘটনাকে আমেরিকান বিপ্লবেরও অংশ বলে ধরে নেওয়া হয়। যে চায়ের পেটি সেদিন জলে ফেলা হয়েছিল তার মধ্যে ‘সিলোনিজ টি’-এর ছিল ভারতের (দার্জিলিং) চা-ও। সম্ভবত বেশিরভাগটাই ছিল ভারতীয়, কারণ দার্জিলিং চায়ের খ্যাতি তখন জগৎজোড়া। সেভাবে দেখলে আমেরিকার স্বাধীনতার যজ্ঞে ঘটের কাঁঠালি কলাটি কিন্তু ভারতেরই।

কলকাতার ছেলে বিবেকানন্দের সঙ্গেও এই শহরের ছিল গভীর সখ্য। শিকাগো ধর্মমহাসভার পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯৪ সালের বসন্তে এখানে এসেছিলেন। উঠেছিলেন বেলেভিউ হোটেলে। এই শহরের ঐতিহ্যবাহী বেকন স্ট্রিটে। এই শহরের ভেনডম হোটেল, অ্যালগনকুইন ক্লাব-সহ বেশকিছু সভায় বক্তৃতা দিয়েছেন। শহরের বুদ্ধিজীবী এবং মান্যগণ্যদের সঙ্গে তার ওঠাবসার কথা ‘পত্রাবলী’র পাতায় পাতায় বিধৃত রয়েছে। সেসময়ের বেলেভিউ হোটেলটি আর নেই। তবে বেকন স্ট্রিট আজও আছে। সরকার আইন করে এই রাস্তা এবং তার দুধারে বাড়িগুলির ঐতিহ্যবাহী নকশা বদলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ফলে আগের মতো অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে গিয়েছে কার্যত একটা পুরো মহল্লা, থুড়ি নেবারহুড। লাল ইটের সারি সারি কন্ডোমিনিয়াম। হঠাৎ ঢুকে পড়লে মনে হবে বুঝি টাইম মেসিনে চড়ে পৌঁছে গিয়েছি দুশো বছর আগে।

বস্টনের হারবার এলাকাটা বেশ সুন্দর। নীল জলে ছোট ছোট সফেনবিন্দুর মতো ইয়াট সুখ আর বৈভবের ছবি আঁকছে। জলের ছলাৎছলাৎ তাদের শরীরে যে দোলা দিচ্ছে ,মাথার উপর উড়ে যাওয়া সিগালের মুখে যেন সেই সমুদ্রসংবাদ। তীরে বিভিন্ন বয়সের পুরুষ মহিলার অলস গুলতানি।  আঁকা ছবির মতো। পাশেই নিউ ইংল্যন্ড অ্যাকোয়ারিয়াম। লম্বা লাইন পড়েছে। জর্জিয়ার বিখ্যাত অ্যাকোয়ারিয়ামের গরিমা এর না থাকলেও রীতিমতো যে বিখ্যাত সেটা বোঝা যায়। সঙ্গে বাচ্চা থাকলে দেখে নেওয়া যায় সেটিও।

একটু দূরেই বস্টন টি পার্টির  সেই স্মারক সংগ্রহশালা। ইউ এসএস কনস্টিটিউশন সংগ্রহশালা। সেই সংগ্রশালার ভেতরে দুশো বছর আগে জাহাজে যেমন জিনিসপত্র থাকতো, সেসবের ভিড়। জাহাজের আবহ তৈরি করতে কাঠের সেলার, ডেক চেয়ারের পাশাপশি এক জায়গায় দেখা গেল একটা ছাগলকে উপর থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে তার রেকর্ডেড ব্যাঁ-ব্যাঁ-ও শোনা যাচ্ছে। সমুদ্রযাত্রায় ওরা যাতে বেশি বেগড়বাঁই করতে না পারে সে জন্য নাকি এইভাবে প্রাণীদের ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা ছিল সেকালে। এছাড়া নাবিকদের কাজকর্মের খতিয়ান লেখা খাতা, ক্যাপ্টেনের পোশাক, সমুদ্রে পথ নিরূপণ করার বিভিন্ন যন্ত্র। এমনকী, সমুদ্রের তলদেশ থেকে উদ্ধার করা একটি মদের বোতলও স্থান পেয়েছে সংগ্রহশালায়। সেটি নাকি কোন ক্যাপ্টেনের। সংগ্রহশালার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরনো সেই জাহাজ। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা।

বস্টন শহরের যখন গোড়াপত্তন হয়, তখন আয়তন ছিল মাত্র এক বর্গমাইল। এই কয়েক শতাব্দীতে আড়েবহরে অনেকটাই বেড়েছে শহরের কলেবর। প্রায় ৪৮ বর্গমাইল। তবু সেটা তেমনকিছু নয়। লোকসংখ্যাও মাত্র পৌনে সাত লক্ষ। তার মধ্যে একটা বড় অংশই দেশবিদেশ থেকে এখানকার বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রী। শহরের সেই চরিত্রটা ঘুরতে ঘুরতে সহজেই টের পাওয়া যায়।

এই শহরে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের স্টেট বিল্ডিংয়ের ঠিক উল্টোদিকেই বস্টন কমন। আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো পাবলিক পার্ক। ১৬৩৪ সালে এর সূচনা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য। ঐতিহাসিক এই পার্কে একসময় স্থানীয় গরুবাছুর চরতো। একাংশে ছিল কবরখানা। একাংশ ব্যবহার করা হতো অপরাধীদের প্রকাশ্যে ফাঁসিতে লটকানোর জন্য। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় এই পার্কেই বিপ্লবীরা জড়ো হতেন। বিখ্যাত ফ্রিডম ট্রেইল। পরবর্তী কালে মার্টিন লুথার কিং থেকে শুরু করে গ্লাসনস্ত পেরেস্ত্রোইকার জনক রুশ রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচভ এমনকী, পোপ জন পলের ঐতিহাসিক জনসভাও এই পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমেরিকার গান-ল’য়ের বিরুদ্ধে বিশাল জমায়েত হল এই সেদিনও।

আন্দোলিত সবুজ ভূমিরূপের ৫০ একর এলাকায় একদিকে রয়েছে একটি জলাশয়, একটি মিনার। পাশেই রয়েছে বস্টন পাবলিক গার্ডেন। এখানে রয়েছে এক মা হাঁস ও তার আটটি শাবকের স্ট্যাচু। রবার্ট ম্যাকক্লোস্কি’র লেখা বিখ্যাত সচিত্র শিশুপাঠ্য ‘মেক ওয়ে ফর ডাকলিংস’ অনুকরণে। শোনা যায় লেখক নাকি একদিন দেখেছিলেন এক ট্রাফিক গার্ড রাস্তার গাড়িঘোড়া থামিয়ে ছানাপোনা সমেত হাঁসের পরিবারটিকে নির্বিঘ্নে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছেন। সেই ঘটনাই তাঁর গল্পের প্রেরণা।

ব্রিটিশ আমেরিকায় শহর হিসেবে ফিলাডেলফিয়ার উত্থানের আগে বস্টনই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে প্রথম পাবলিক পার্কের মতো আমেরিকার অনেক ‘প্রথম’-এরই জন্মস্থান এই শহর। প্রথম ভূগর্ভ ট্রেন, প্রথম পাবলিক স্কুল তার মধ্যে অন্যতম।

ঐতিহাসিক শহর নিঃসন্দেহে। তবে এখন বস্টন শহরের খ্যাতি কিন্তু উচ্চশিক্ষা, ব্যাঙ্কিং আর ওষুধ নির্মাতা সংস্থার কারণে। এ শহরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক, শিক্ষক। তাঁদের কাছে এমআইটি কিংবা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর হল বস্টন। এই নামগুলো সেই কবে থেকে মনে ছবি বিশ্বাস কিংবা কমল মিত্তিরের গলা খাঁকারির মতো সমীহ উৎপাদন করে চলেছে। শুনলেই কেমন একটা শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয়ের উদ্রেক হয়।

কী আশ্চর্য ঠিক আমার মতো না হলেও স্থানীয় মানুষজনের মনেও এমআইটি সম্বন্ধে তেমনই একটা ধারণা রয়েছে দেখলাম। শহর দেখতে বেরিয়ে একদিনের গাড়ির চালকের মুখে শুনলাম এমআইটি’র ফুল ফর্ম ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি নয়। ওঁরা বলেন, ‘মিলিয়নেয়ারস ইন ট্রেনিং’। তা আমাদের গাড়ির চালক বিগ টম ( ছোট টমটি কে, আর জানতে চাইনি। আছে নিশ্চয়) এই শহরে ‘পালাবাড়হা’, এমন মুখপ্রিয় গুপ্তজ্ঞানের অধিকারী হবেন তাতে আর আশ্চর্য কী!  টমের বাবা-মা ছিলেন বেহালাবাদক। বস্টন সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার সদস্য। ট্রলি চলতে চলতেই শোনা গেল তাঁর ছোটবেলার কথা। শহরের সবচেয়ে বড় রাস্তাটি হল ম্যাসাচুসেটস অ্যাভিনিউ। একানেই একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। এই রাস্তার ধারেই বিখ্যাত সিম্ফনি হল। কতদিন এই হলে বাবা-মায়ের মহড়ার কারণে তাঁকে আসতে হতো। একলা চেয়ারে বসে সুরের মূর্চ্ছনায় কোনও কোনওদিন ঘুমিয়ে পড়তেন। ট্রলির গতিময়তায় মিশে যাওয়া এক অখ্যাত নাগরিকের শৈশবের সে আখ্যান শুনতে মন্দ লাগছিল না।

বস্টন শহরের প্রাণ এ শহরের নদীটি। চার্লস। বস্টন আর কেমব্রিজ শহর দুটিকে আলাদা করে রেখেছে। এ নদীতে বেশ কয়েকটি ব্রিজ রয়েছে। হেঁটেও পার হওয়া যায়। বস্টনের স্কাইলাইন ভিড় করে আসে ক্যামেরায়। ম্যাসাচুসেটস অ্যাভিনিউ ধরে হেঁটে গেলে পড়বে এমআইটি। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ভবন। গথিক এবং আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মিলমিশটি লক্ষ্য করার মতোই। এমআইটি ছাড়িয়ে আরও খানিকটা এগোলে হার্ভাড। বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্ত্বরটিতে অধিকাংশ ভবনই পুরনো আমলের। ছাত্রছাত্রীদের দলবেঁধে ঘোরাফেরা, রাস্তা থেকে চোখে পড়া শ্রেণিকক্ষ, বিশাল লাইব্রেরি, সবকিছু মিলিয়ে ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ। এরই মধ্যে কৌতূক উদ্রেক করবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপুরুষ জন হার্ভার্ডের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি। চেয়ারে বসা মূর্তির বাঁ পায়ের বুটটি দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় একটু বেশিই চকচকে। কারণ খুঁজতে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না। দেখা যাবে ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই হার্ভার্ডের বুট ছুঁয়ে যাচ্ছেন। জানা গেল, স্থানীয় বিশ্বাস, ওতে নাকি সৌভাগ্যবৃদ্ধি হয়। আমাদের মতো পর্যটকেরাও কেউ কেউ ভাবছেন ‘চরণ ছুঁয়ে যাই’।

চার্লস নদীর মতো না হলেও কিছুটা বিখ্যাত শহরের চার্লস স্ট্রিট। পর পর পুরনো দোকানের সারি। বেশিরভাগই অ্যান্টিকের দোকান। অ্যান্টিক পরখ করার সৌভাগ্য হয়নি। তবে রাস্তাটিকে পুরনো মহল্লার মর্যাদা দিতে প্রশাসন যত্নবান। রাস্তার ধারের স্ট্রিট লাইটগুলি আজও গ্যাসের বাতি নিয়েই জ্বলছে। শুনলাম এর জন্য বিশেষভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

আমেরিকার অনেক বড় শহরেই রয়েছে মিউজিয়াম অফ আর্টস। আকারে আয়তনে তো বটেই , সংগ্রহের প্রাচুর্যেও নজরকাড়া। বস্টনের মিউজিয়াম অফ আর্টসের গল্প তাদের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। এই সংগ্রহশালায় উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত চিত্রকরদের বেশকিছু মাস্টারপিস রয়েছে। রেমব্রান্ট থেকে শুরু করে ইম্প্রেশনিস্টদের মধ্যে ভ্যান গখ, মনেট। পোস্ট ইম্প্রেশনিস্টদের মধ্যে সেজান, পল গঁগ্যা,মাতিস উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রদ্যাঁর বেশ কয়েকটি ভাস্কর্যও রয়েছে এখানে। রয়েছে ইওরোপীয় চিত্রকলার আরও কয়েকহাজার সংগ্রহ। সমসাময়িক শিল্পীদের বিভিন্ন মাধ্যমের কাজও স্থান পেয়েছে, তার মধ্যে আইস পেন্টিং, টেক্সটাইল যেমন রয়েছে রয়েছে, গ্লাস,পটারি, এমনকী, এক বিশাল বারান্দার  সিলিং থেকে কাগজের কাপ দিয়ে তৈরি এক ইনস্টলেশনও দেখা গেল। কিছু বছর আগে বোসপুকুরের ভাঁড়ের প্যান্ডেলের কথা মনে পড়ল।

শুধু শিল্পকলা নয়। প্রাচীন বিভিন্ন সভ্যতার নানা নিদর্শনও রয়েছে। মিশর, ভারত, চিন, কোরিয়া –সহ বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক উৎখননজাত নানা সামগ্রীও এই সংগ্রহশালাকে সম্বৃদ্ধ করেছে।

অনেকগুলি সংগ্রহশালাই রয়েছে এ শহরে। বিজ্ঞান সংগ্রহশালার পাশাপাশি আর যেটির নাম উল্লেখ করতে হয়, সেটি হল, ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার আর্ট মিউজিয়াম। সেটির স্থাপত্য এবং অন্দরসজ্জা ইতালিয় নবজাগরণের সময়কার প্যালাজ্জোর মতো। এটিও জনগণের জন্য উন্মুক্ত ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা।

শহর দেখা হল। শুধু আফশোস রয়ে গেল এই শহরের ‘ইয়ে ওল্ডে ইউনিয়ন অয়েস্টার হাউস’-এর ঝিনুকের কোনও পদ চেখে দেখা হল না। এছাড়াও এই রেস্তোরাঁর টুপিতে নাকি আরেকটা পালক আছে। টুথপিক বা খড়কে কাঠির জন্ম নাকি এই রেস্তোরাঁতে। ক্ল্যাম, অয়েস্টার-সহ বিভিন্ন রকমের সিফুডের প্রামাণ্য এই দোকানটিকে ছুঁয়ে যাওয়ার জন্য ভবিষ্যতের কোনও সময়-সুযোগের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

সব মিলিয়ে বস্টন ভারী সুন্দর এক শহর। সভ্যতার জগঝম্প নেই, আধুনিক হয়েও আটলান্টিকের নোনা হাওয়ায় সে যেন শীতল এক প্রাণবন্ত অবসর।

কীভাবে যাবেন: সরাসরিফ্লাইটনেই।কলকাতাথেকেদুবাই।দুবাইতেকেবস্টনআসাযায়।

কখনযাবেন: আমেরিকারপূর্বউপকূলেরএইপ্রাচীনশহরেস্প্রিং এবং ফল সিজিনেই আসা ভাল

থাকবেন কোথায়: বস্টন শহরের হোটেলের ভাড়া একটু বেশি। তবে পছন্দমতো বাজেট হোটেলও রয়েছে প্রচুর।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com