মুম্বই। আরব সাগরের ধারে দেশের বাণিজ্য নগরী এটি। আর এই শহরের সবচেয়ে নাম করা রাস্তাটির নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র মার্গ। তবে এই নামটা পোশাকী। আসলে এটি হল মুম্বইয়ের বিখ্যাত মেরিন ড্রাইভ। প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ এই পথের আকৃতি অনেকটা আমাদের হাঁসুলি বাঁকের মতো। তবে সে শহরের লোকেরা এর নাম দিয়েছে রানির গলার হার। আসলে রাতের বেলা প্রাচীন মুম্বই শহরের এই এলাকার বাড়িগুলিতে যখন আলো জ্বলে ওঠে, তখন মেরিড ড্রাইভের বাঁকটিকে দেখলে মনে হয় যেন হীরে জহরত বসানো দামী নেকলেস। ঠিক যেমন রানিরা নিজের গলায় পরেন। ভোরে আবার এ জায়গার শোভা আলাদা। সাধারণ মানুষ তো বটেই বহু বলিউড সেলিব্রিটি, নামীদামি শিল্পপতিরাও মেরিন ড্রাইভে জগিং করতে যান। সারাদিন ধরে এখানে পর্যটক, এবং অবসর কাটানো মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। আর মাঝরাতে এখানে বলিউড তারকারা বেড়াতে যান।
তেরোশো শতাব্দীতে মুম্বই শহরে এসেছিলেন সৈয়দ পীর হাজি আলি শাহ বুখারি নামের এক ধনী সওদাগর। এই শহরেই তিনি সংসার পেতে বসেন। কিন্তু ধর্মপ্রাণ এই মানুষটি শেষ র্যন্ত ইসলাম ধর্ম প্রচারেই মন দেন। নির্মাণ করেন এক সুফি দরগা। সমুদ্রতট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে ওয়ার্লি উপসাগরের একদম কেন্দ্রে একটি ছোট্টো দ্বীপে অবস্থান করছে এই হাজি আলি দরগা। ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের একটি অসাধারণ নিদর্শন এটি। একমাত্র ওয়ার্লি উপসাগরে ভাঁটার সময়ই দরগায় পৌঁছোনো সম্ভব। অনেকটা গঙ্গাসাগরের কপিল মুনির প্রাচীন আশ্রমের মতো। ভাঁটার সময় সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে হাজি আলি দরগায় পৌঁছোনোর রোমাঞ্চই আলাদা।
সমুদ্রতটেই অবসর যাপন
আরবসাগরের তীরে মুম্বই শহরের অবস্থান হওয়ায় তার পশ্চিমাংশ জুড়ে শুধুই সমুদ্র তট। বিখ্যাত জুহু বিচ থেকে শুরু করে চৌপাট্টি বিচ, মাধ আইল্যান্ড বিচ, ভার্সোভা বিচে ঘুরে বেড়াতে দারুণ লাগবে। সপ্তাহান্তে স্বপরিবারে শহরবাসী এই বিচগুলিতে ছুটি কাটাতে আসেন। সবচেয়ে ভিড় হয় জুহু বিচে। বুড়ির মাথার পাকাচুল, কালা খাট্টা, বরফ গোলা, বড়া পাও, ডাবের জল, ফুচকা, চাট সব পাবেন এখানে। সারা বছরই এখানে মেলার পরিবেশ। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের শোভা দেখতে চাইলে গরাই বিচে যাওয়া যেতে পারে। আর শান্তিতে সময় কাটাতে গেলে আকশা বিচে যাওয়াটাই শ্রেয়।
সবুজের টুকরো
ইট-কাঠ-পাথরের ভিড়ে বোঝাই মুম্বই শহরের মাঝে চোখ এবং ফুসফুসকে শান্তি দেবে সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক। এ যেন মুম্বইয়ের ভিতরে ছোট্টো এক টুকরো সবুজের আস্তানা। এখানে আছে দুটি হ্রদ। আর এখান থেকে সহজেই যাওয়া যায় বিখ্যাত কানহেরি গুহায়। গৌতমবুদ্ধ এবং বৌদ্ধ ধর্মের নানা স্থাপত্যের দেখা মিলবে এই গুহায়।
রেলগাড়ি ঝমঝম
মুম্বই এলে একবার অন্তত শহরের প্রাণকেন্দ্রটিকে চোখের দেখা দেখা দরকার। অবশ্য শুধু চোখের দেখা কেন, সামান্য টাকার টিকিট কেটে মুম্বই লোকালে চড়ে বসলেই বা বাধা দিচ্ছে কে? এই রেল যোগাযোগই শহরের জীবনযাত্রাকে চাঙ্গা করে রেখেছে। ভাসির পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বন্দর লাইনের ট্রেনে চেপে দেখে নেওয়া যায় মুম্বইয়ের রোজনামচা। সিএসটি, পনভেল, খার– এরকম নানা স্টেশন থেকে ভর্সি যাওয়ার ট্রেন পাওয়া যায়। ভাড়া, নামমাত্র।