ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। পাহাড় ও সাগরের মেলবন্ধন রয়েছে এখানে। রয়েছে ৮টি প্রাকৃতিক ঝরনা, কৃত্রিম লেক, সমুদ্রসৈকত। এই জনপদে একবার এলে অনেক পর্যটন স্পট দেখার স্বাদ মিটবে ভ্রমণপিপাসু মানুষের।
এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া, দেশের ষষ্ঠ সেচ প্রকল্প মুহুরি প্রজেক্ট, উপজেলার অলিনগরে অবস্থিত হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট, করেরহাট ফরেস্ট ডাক বাংলো, ডোমখালী সমুদ্র সৈকত, মিরসরাই শিল্পনগর সমুদ্র সৈকত, রূপসী ঝরনা, বাওয়াছড়া লেক ও হরিনাকুন্ড ঝরনা, রূপসী ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা, সোনাইছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা, খৈয়াছড়া ঝরনা মেলখুম গিরিপথ ও আরশি নগর ফিউচার পার্ক।
প্রকৃতি ঘেরা অপার এক সৌন্দর্যের নীলাভূমি ডোমখালী উপকূলীয় বনাঞ্চল ও সমুদ্রসৈকত। সবুজের সমারোহ মিলে এক অপার সৌন্দর্যের নীলাভূমি। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষার জন্য ’৮০-এর দশকে সাগরের কোলজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে হাজার হাজার একর ম্যানগ্রোভ বন। এখানে রয়েছে কেওড়া, বাইন, গড়ান, গেওয়া, সুন্দরীসহ নানা জাতের বৃক্ষ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। বাঁধের উত্তর ও পশ্চিমে বয়ে চলা দৃষ্টিনন্দন সমুদ্রসৈকত।
উপজেলার পশ্চিম দক্ষিণে অবস্থিত ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে বেড়িবাঁধ সড়কে চোখে পড়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের ঢল। শোনা যায় সমুদ্রের গর্জন, বনের মধ্যে পাখিদের কলকাকলীর শব্দ। দক্ষিণা নির্মল বাতাসে শীতল করে ক্লান্ত শরীর।
জোয়ার-ভাটার খেলায় অপরূপ হয়ে ওঠে এই সৈকত। বৃষ্টিতে সুপার ডাইক পর্যন্ত পানিতে টইটম্বুর থাকে। ২০১২ সালে সর্বপ্রথম মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু। এরপর বঙ্গপোসাগর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয় সুপার ডাইক। সুরক্ষার জন্য ডাইকে বসানো হয়েছে হাজার হাজার ব্লক। মূলত এরপর আবিষ্কার হয় সমুদ্রসৈকতের। বিশেষ করে বসুন্ধরা পয়েন্টে বেশি পর্যটক চোখে পড়ে। গত তিন বছর ধরে সেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন হাজার হাজার পর্যটকরা।
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করছে।
উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান। এরমধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে।
মিরসরাই উপজেলার ঝরনাগুলোর মধ্যে যাতায়াতের পথ সহজ রূপসী ঝরনায়। চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক। অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে। রূপসী ঝরনা পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
বছরের পর বছর ঝরনা পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে। কয়েক বছর পূর্বে রূপসী ঝরনা নামে আবিষ্কার হলো এটি। মিরসরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোল অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাত। দেশের যে কোন স্থান থেকে মিরসরাই এর বড়দারোগাহাট বাজারের উত্তর পাশে নেমে পূর্বদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও যে কোন গাড়িতে অথবা হেঁটে যাওয়া যাবে।
প্রকৃতির আরেক নাম মুহুরি। যেখানে আছে আলো-আঁধারের খেলা। আছে জীবন-জীবিকার নানা চিত্র। মুহুরির চর, যেন মিরসরাইয়ের ভেতর আরেক মিরসরাই। অন্তহীন চরে ছোট ছোট প্রকল্প।
এপারে মিরসরাই, ওপারে সোনাগাজী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে। পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়ানিয়া প্রকৃতি। নুয়ে পড়া মনোবল জেগে উঠবে পূবের জেগে ওঠা চরে। ডিঙি নৌকায় ভর করে কিছুদূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা সাদা বক।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (পুরোনো) জোরারগঞ্জ বাজারে নেমে ধরতে হবে সংযোগ সড়কের পথ। জোরারগঞ্জ-মুহুরি প্রজেক্ট সড়ক নামে এ সড়কে দেখা মিলবে হরেক রকমের মোটরযানের।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার মহামায়া লেক। সবুজে ঘেরা ছোট-বড় পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা স্বচ্ছ নীলাভ জলের এই লেক আর পাহাড়ি ঝরনা প্রকৃতির অপূর্ব নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের কোলাহল আর যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে হাজারো পর্যটক প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন এখানে।
প্রাণের টানে ছুটে আসা পথ যেন ক্রমশই বন্ধুর হতে চাইবে মনের কোণে জায়গা মৃদু উত্তেজনায়। দূর থেকে দেখা যায় প্রায় পাহাড়সম বাঁধ। উভয় পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। বাঁধে উঠতেই! আহ, কি অপরূপ শোভা। বাঁধের ধারে অপেক্ষমাণ সারি সারি ডিঙি নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত বোট। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্বচ্ছ পানিতে তাকাতেই দেখা যায় নীলাকাশ। পূর্ব-দিগন্তের সারি পাহাড়ের বুক চিরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যেতেও মন চাইবে কল্পনায়। সঙ্গের সাথী পাশে নিয়ে গেলে তো কথাই নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে গেলেও কোনো মানা নেই।
লেকের নীল জলরাশিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নৌকা ভ্রমণের সুবিধা। ডিঙি নৌকা, ময়ূর পঙ্খী নৌকা ছাড়াও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য কায়াকিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইফ জ্যাকেট পরে বৈঠা বেয়ে পর্যটকরা উপভোগ করছেন প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। এখানে রয়েছে ভালো মানের হান্ডি রেস্টুরেন্টে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা।
মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঝরনাগুলো মধ্যে অন্যতম বোয়ালিয়া ঝরনা। একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন এই অনিন্দ্য সুন্দর ঝরনা থেকে। ব্যস্ততম যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু অবসর নিয়ে যে কোনো সময় ঘুরে আসতে পারবেন।
চারদিকে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়। সবুজের নান্দনিকতা, বিস্তীর্ণ পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিবেষ্টিত এই বুনো ঝরনা। এখানে আছে বিমোহিত হওয়া প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় সিক্ত এখানকার জনজীবন যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ তেমনই প্রকৃতির মমতায় ভরপুর।
দূর থেকে শোনা যায় ঝরনার নূপুরধ্বনি। অতিথি পাখিদের কলতান। পাহাড়ি সবুজ গাছের সমারোহ। তার নাম বাওয়াছড়া কৃত্রিম লেক। শুধু লেক নয়, হরিনমারা নামে একটি ঝরনা। উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট এটি। এ যেন সৌন্দর্যের সাথে অপরূপ সৌন্দর্যের মিতালী। পাহাড়ি ঝরনার মুখে বাঁধ, পাহাড়িয়া সবুজ গাছের সমারোহ। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ মুগ্ধ হবেন বাওয়াছড়া দেখে। এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে পর্যটকদের।
মিরসরাই উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে এটি অবস্থিত। অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্য। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে পড়ছে লেকে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। অঝোরে পাহাড়ের এ ‘কান্না’ যে কারো মনে নাড়া দেবে। যেন একটু ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে যাই! লেকে ছোট্ট একটি নৌকা রয়েছে, সেই নৌকায় লেকে মনের আনন্দের ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা।
মিরসরাই উপজেলার করেরহাট অলিনগরে অবস্থিত হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। হরিণ ও দৃষ্টিনন্দন কারো কাজ বিস্তৃত বাগানকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বাগানটি দেখতে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমী নানা বয়সী মানুষ। পরিবার পরিজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বনভোজনের জন্য এখানে সুবিধা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নিয়মনীতি এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠছে এখানকার হরিণগুলো। হরিণের বিচরণ আর প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই এখানে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। হরিণগুলোর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ও রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখতে তদারকি করছে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ। খামারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিলসডেল মাল্টি ফার্ম’।