ফ্রান্সের প্যারিসে যাওয়া স্বপ্ন সবার মনেই থাকে, তবে সাধ্য হয় না অনেকেরই। তবে হবহু প্যারিসের মতো সৌন্দর্য যদি আপনি কাছে কিনারে পেয়ে যান, তাহলে তো মন্দ হয় না। আবার খরচও কম পড়বে।
পাশের দেশ ভারতে গেলেই আপনি হুবহু প্যারিসের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন, এমনটিই মত পর্যটকদের। আর এ কারণে পন্ডিচেরিকে বলা হয় ভারতের ফ্রান্স বা প্রাচ্যের প্যারিস। প্রায় ৩০০ বছর ফরাসীরা সেখানে রাজত্ব করেছিলেন।
ইন্দো-ফরাসি সংস্কৃতি অনুসৃত এই স্থানে যেমন আছে সমুদ্রসৈকত ও লোভনীয় খাবার আবার আছে ঔপনিবেশিক রাস্তা ও ফরাসি স্থাপত্য। এসব কারণেই স্থানটিকে প্রাচ্যের প্যারিস বলা হয়।
এই স্থানে ভ্রমণের আদর্শ সময় হলো শীতকাল। এ সময় আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম থাকে। পন্ডিচেরিতে আছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা আপনার চোখ ও মন দুটোই জুড়াবে।
সমুদ্রসৈকত
পন্ডিচেরির সমুদ্রসৈকত দারুণ সুন্দর। সেখানকার সরকারি ভবনগুলোর অনেকগুলিই সমুদ্রের ধারে অবস্থিত। সৈকত সংলগ্ন রাস্তা অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ইচ্ছে হলে খালি পায়েই এলাকা ভ্রমণ করতে পারবেন।
সমুদ্রের ধার সব সময়ই পর্যটকে ঠাসা থাকে। প্রতি সপ্তাহেই সেখানে থাকে উপচে পড়া ভিড়। এই অঞ্চলের চারপাশে ১০টিরও বেশি সৈকত আছে। সার্ফিংয়ের জন্য, অরোভিল বিচ জনপ্রিয়।
ব্যাক ওয়াটার বোটিং উপভোগ করার দারুণ জায়গা প্যারাডাইস বিচ। যোগাসনের জন্য শান্তিপূর্ণ জায়গা পেতে চাইলে চলে যেতে পারেন প্রমেনেড বিচে। সান বাথ ও মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত মাহে বিচ। ক্যানোয়িংয়ের জন্য আদর্শ কারাইকাল সমুদ্রসৈকত।
ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার
ইন্দো-ফরাসি নিদর্শনের সেরা উদাহরণ হল ফ্রেঞ্চ কলোনির ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার্স ও সেখানকার রাস্তাগুলো। ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারগুলো ‘হোয়াইট টাউন’ নামে পরিচিত।
ক্যাথেড্রালের ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের নিয়ম মেনে ফ্রেঞ্চ ভিলাগুলি সব ধূসর, সাদা, পিচ ও হলুদ রঙে রাঙা। এখানকার ভারতীয় পার্ক, অরবিন্দ আশ্রম, লা মেসন রোজ, কিউরিও সেন্টার ঘুরতি পারেন।
অরোভিল কমিউন
পন্ডিচেরিতে গিয়ে অরোভিলে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না। সেখানকার উন্নতমানের এসেনশিয়াল অয়েল, ধূপকাঠি ও সূক্ষ্ম হস্তশিল্প বিখ্যাত। অরোভিল কমিউন গঠিত হয় ১৯৬৮ সালে।
সেখানকার লাল বালির পাথরের অ্যাম্ফিথিয়েটারের নাম মাতৃ মন্দির, বুটিক ডি অরোভিল, মন্ত্র পটারি, লা ফার্ম চিজ ও অরোভিল বেকারির সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারবেন।
তামিল কোয়ার্টার- ব্ল্যাক টাউন
সেখানকার ঘরবাড়ি ইমারতগুলোতে তামিল সংস্কৃতি স্পষ্ট। আছে মইসন তামোলে ও মেসন পেরুমলের মতো জনপ্রিয় তামিল ভবন। এটি তার অ্যাকুয়ারেলাস গ্যালারিতে আছে অমূল্য সব শিল্প সম্পদ।
কখন যাবেন পন্ডিচেরি?
বছরের যে কোনো সময়ই প্রাচ্যের প্যারিসে বেড়াতে যেতে পারেন। তবে পন্ডিচেরি দেখার সেরা সময় অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি মাস।
এই সময় সেখানকার আবহাওয়া যেমন মনোরম থাকে, তেমনই সুন্দরভাবে পালিত হয় সেখানকার বড়দিন ও নিউ ইয়ার উদযাপন।
কীভাবে যাবেন?
পুদুচেরির নিকটতম শহর হলো চেন্নাই। এটি পুদুচেরি থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে পন্ডিচেরি থেকে চেন্নাই যাওয়ার সড়কপথ খুব ভালো। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও মাদুরাই থেকে বাসে চেপে পন্ডিচেরি যাওয়া যায়।
আর ট্রেনে যেতে চাইলে পন্ডিচেরির থেকে নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হলো ভিলুপুরম-পন্ডিচেরি। মূল শহর থেকে রেলস্টেশনের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার।
কলকাতা, নয়াদিল্লি, চেন্নাই ও মুম্বাই’সহ অন্যান্য রেলওয়ে স্টেশন থেকে সেখানে সরাসরি যেতে পারবেন।
সূত্র: ব্যাকপেক এন এক্সপ্লোর