প্রতি বছরের মতো এবারও সিডনির বন্ডাই সৈকতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব। স্থানীয়দের ভাষায় এটাকে বলা হয় ফেস্টিভ্যাল অফ দ্য উন্ডস। এই উৎসব প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
চলছে ঘুড়ির বিকিকিনি
মাঝে কোভিডের দুই বছর ছাড়া প্রতি বছরই এই উৎসব হয়েছে। বন্ডাই সমুদ্র সৈকত এমনিতেই পর্যটকদের কাছে খুবই পরিচিত নাম। আর এই বিশেষ উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানে মানুষের আনাগোনা আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন দেশের মানুষ এসে এই উৎসবে যোগ দেন।
বন্ডাই সৈকতের দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি
এই উৎসবটা বড়দের পাশাপাশি ছোটদেরও ভীষণ প্রিয়। তাই আমরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম সেখানে যাওয়ার। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা দুপুরের পরপরই সৈকতে হাজির হয়ে গেলাম। তখন সৈকতের উপরিভাগে শুধু মানুষ মানুষ।
চরকি হাতে ঘুড়ি উৎসবের শিশুরা
সব বয়সী মানুষই ছিল সেই লোকারণ্যে। শিশুরা কেউ চরকি হাতে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। চরকিগুলোকে এখানে বলা হয় উইন্ড মিল। আবার কেউ বিভিন্ন প্রতিকৃতির ঘুড়ি উড়াচ্ছে। আর অভিভাবকেরা তাদের সাহায্য করছেন।
ফেস্টিভ্যাল অফ দ্য উইন্ডস এর বিজ্ঞাপন
সৈকতের পাড়ের গ্রাফিতি দেখতে দেখতে হেটে আমরা সৈকতের বালিতে চলে গেলাম। সেখানে সৈকতের আকাশে উড়ছে হরেক রকমের তিমি, হাঙ্গর, জিব্রা, গোখরো সাপ, টিয়াপাখি, ড্রাগন।
উড়ছে এলিয়েন ঘুড়ি
এমনকি এদিন উড়ার সাঁধ পূর্ণ করেছে উড়তে না পারা পেঙ্গুইন পাখিও। এগুলোর সঙ্গে উড়ছে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা আদলের ঘুড়িও। এমনকি এদের মধ্যে দেখি একটা এলিয়েন ঘুড়িও উড়ছে। সৈকতের একটা জায়গা ঘিরে পেশাদার মানুষেরা ঘুড়ি উড়াচ্ছেন।
পেঙ্গুইনের উড়ার সাঁধও পূর্ণ হয়েছে
এর বাইরেও সৈকতজুড়ে আগত দর্শনার্থীরা বিভিন্ন রকমের ঘুড়ি উড়াচ্ছিলেন। নীল আকাশটা যেন নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন রঙের ঘুড়িতে। আমরা ভাবছি সৈকত থেকে ওপরে উঠেই বাচ্চাদের ঘুড়ি আর চাকরি কিনে দেব। ঠিক তখনই হঠাৎ এক অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রমহিলা আমাদের দেখে বললেন, তোমরা কি একটা ঘুড়ি চাও, তাহলে আমার ঘুড়িটা নিতে পারো।
উড়ছে অস্ট্রেলিয়ার মানচিত্র এবং মাকড়শা
আমরা তাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে খুশিমনে উনার ঘুড়িটা নিলাম। অক্টপাসের মুখের আদলের এই ঘুড়িটা ছিল নীল বর্ণের। আর তার লেজও ছিল আটটা। এরপর শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও পালা করে সেই ঘুড়ি সৈকতের আকাশে উড়ানো হলো। ঘুড়ি হাতে পেয়ে যেন বড়দের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শিশুটাও জেগে উঠলো।
ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি চললো সৈকতে আঁছড়ে পড়া সমুদ্রের পানিতে পা ভেজানো। বাচ্চাগুলো পা ভেজাতে গিয়ে পুরো শরীরই ভিজিয়ে ফেললো। এরপর ওপরে উঠে সৈকতের সবুজ ঘাসে পা মেলে বসে চললো সাংস্কৃতিক উৎসব উপভোগ।
উড়ছে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ঘুড়ি
সেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের চমৎকার সব পরিবেশনা নিয়ে হাজির হয়েছিল। এর পাশাপাশি ছিল মিনি সার্কাস। বাচ্চারা সার্কাসের মানুষদের কাজকর্ম খুবই উপভোগ করলো। এখানে বিভিন্ন দেশের খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকান দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেখান থেকে বাহারি স্বাদের খাবার কিনে খেয়ে নিলাম।
চলছে দলবেঁধে ঘুড়ি উড়ানো
এভাবেই একটা দিন যেন বাতাসের গতিতে শেষ হয়ে গেলো। দৈনন্দিন ব্যস্ততা ফেলে দারুণ একটা দিন পার করলাম আমরা। ঘুড়ির তালেতালে যেন আমাদের মনটাও কিছুক্ষণের জন্য নীল আকাশে পাখা মেলেছিল।
সার্কাস প্রদর্শনীর একটি মুহূর্ত
এরপর আমরা ফেরার পথ ধরলাম। ফেরার পথটা ছিল বেশ দীর্ঘ। প্রথমে বাস তারপর ট্রেন। আবার এক জায়গায় ট্রেন বদলও করতে হয়েছিল। কুমু ভাবি বললেনঃ ভ্রমণটা ক্লান্তিকর হলেও উপভোগ্য ছিল। আমরা সবাই উনার সঙ্গে একমত হয়ে পরের বছর আবার যাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম।