ভারতের বিশাল দূরত্ব সস্তায় পাড়ি দেবার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক একটি ব্যবস্থা হল ভারতীয় রেলওয়ে ব্যবস্থা। হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা আপনি অত্যন্ত সস্তায় যেতে পারবেন। একটু বেশি খরচ করলে একই সাথে আরামটাও যুক্ত হবে। আর ট্রেনে করে ঘুরে বেড়াবার মজা তো ভিন্নরকম। আসুন, জেনে নিই কিভাবে ঘরে বসেই ট্রেনের টিকিট ঝামেলা-মুক্তভাবে কেটে নেয়া যায়।
বর্তমানে আমরা অগ্রিম টিকিট করতে গেলে সহায়তা নিতে হয় কোন দালাল কিংবা থার্ড-পার্টি এপস এর, যেগুলোর মাধ্যমে টিকিট করলে খরচ বেড়ে যাবার সাথে সাথে কিছুটা অনিশ্চয়তাও থেকে যায়। এর চেয়ে ভাল ব্যবস্থা হল ভারতীয় সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নিজেই টিকিট করে নেয়া। আসুন, রেজওয়ানুল কবীর এর অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টা জেনে নেয়া যাক।
প্রথম ধাপ: প্রথমে আপনাকে
http://www.irctc.co.in একটা একাউন্ট খুলতে হবে। এখানে অ্যাকাউন্ট করাটা ঝামেলার, তবে একটু কৌশল করলে সোজা। এখানে অ্যাকাউন্ট করতে হলে একটা ভারতীয় ফোন নাম্বার লাগবে। ওয়েবসাইটে সাইন-আপ করার সময় জাতীয়তা অবশ্যই বাংলাদেশ দেবেন। আর রেসিডেন্সিয়াল এড্রেস এর ওখানে যে *Pin লেখা আছে, সেখানে আপনার এলাকার কোড, যেমন ধানমণ্ডি ১২০৯ বা লালমনিরহাট ৫৫০০ এরকম পোস্টাল কোড দেবেন। যাদের ভারতীয় ফোন নাম্বার নেই, তাদের উপায় দুটো। এক, আপনি আপনার পরিচিত কারও ভারতীয় ফোন নম্বর ব্যবহার করতে পারেন। দুই. আপনি একাউন্ট খোলার কাজটি বর্ডার পার হবার পরে নিজেই ভারতীয় সিম কিনে করতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপ: এর পর নিজের অ্যাকাউন্ট এ লগ ইন করুন। ফোন আর ইমেইল ভেরিফাই করুন। ফোন ভেরিফিকেশনটা একটু জটিল হতে পারে যদি ফোন নম্বর নিজের না হয়। তবে যার ফোন, তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকলে ফোনে পাঠানো কোড হাতে পাওয়া কঠিন হবে না। আর সব শেষে care@irctc.co.in এর ঠিকানায় আপনার পাসপোর্ট এর একটা স্ক্যান কপি বা ছবি পাঠিয়ে দিন আপনার ইউজার নেম সহ (না দিলেও খুব একটা সমস্যা হবে না, কিন্তু চেষ্টা করবেন দিয়ে রাখতে, পরে কাজে লাগতে পারে)। এর পর স্বাভাবিক নিয়মেই টিকিট কাটুন।
তারিখ এবং অবস্থান ও টিকিট এর ক্লাস সবই দেয়া আছে, সহজ ব্যবস্থা, একটু দেখলেই বুঝে যাবেন। এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন টিকিট কেনার সময় অবশ্যই জাতীয়তা বাংলাদেশী দেবেন । এর পর পাসপোর্ট নাম্বার দিবেন আর অবশ্যই E-Ticket চয়েজ দেবেন।
তৃতীয় ধাপ: ট্রেন ও টিকিট নিশ্চিত করার পর আপনি যখন পেমেন্ট অপশনে যাবেন । তখন আপনার ট্রাভেল কার্ড বা ইন্ডিয়ান কোন ব্যাংক বা এমেক্স, মাস্টার অথবা ভিসা-কার্ড দিয়ে পেমেন্ট দিতে হবে । এখানে টিকিট আপনাকে PDF আকারে দেবে। সেটা প্রিন্ট করিয়ে নিন, সাবধানতার জন্য কয়েক কপি করে সবার কাছে এক কপি করে দিয়ে দিন।
ভারতে সহজে পেমেন্ট করার সুবিধার জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে ট্রাভেল কার্ড করিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যাবে। যাত্রা শুরুর সময় টিকিট প্রিন্ট এর কপি ও নিজের পাসপোর্ট এর ফটোকপি একসাথে করে টিটিকে দেখাতে হবে।
১. IRCTC সরকারি Website সুতরাং কোন রকম এদিক ওদিক করার চেষ্টা করা যাবে না।
২. এক অ্যাকাউন্ট দিয়ে এক সাথে সর্বাধিক ৬ জনের টিকিট কাটতে পারবেন।
৩. ভ্রমণের সময় অবশ্যই টিকিটের কপির সাথে পাসপোর্ট এর ফটোকপি দেবেন । না হলে জরিমানা নিশ্চিত।
৪. অবশ্যই ভ্রমণের ১০ দিন আগে টিকিট বুক করবেন। না হলে টিকিট পাবার সম্ভাবনা কম।
৫. যার অ্যাকাউন্ট তাকে অবশ্যই ভ্রমণ করতে হবে। আপনি গ্রুপে যেতে পারবেন সহজেই, কিন্তু নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অপরিচিত কাউকে করে দেবেন, সে সুযোগ নেই।
IRCTC কিছু সাধারণ সুবিধা:
IRCTC সম্পূর্ণ ভাবে ইন্ডিয়ান সরকার নিয়ন্ত্রিত । এখান থেকে শুধু যে ট্রেন টিকিট কাটতে পারবেন তা কিন্তু না । এখানে রয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত বাস, ক্যাব ও বিমানের টিকিট কাটার সুবিধা। এছাড়া আরও মজার বিষয়, আপনি যদি খাবার বিষয়ে নিশ্চয়তা চান, তাহলে আপনার সীট নাম্বারের জন্য খাবারের অর্ডার দিয়ে রাখতে পারেন আগে থেকে। সেটাও এই ওয়েবসাইট থেকেই সম্ভব।
তথ্যসূত্র: রেজওয়ানুল কবীর
Like this:
Like Loading...