1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
গ্যাং নিয়ে গ্যাংটক
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৫:১৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

গ্যাং নিয়ে গ্যাংটক

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বেলা আড়াইটার দিকে শিলিগুড়ি থেকে একটি ছোট্ট টাটা অল্টো গাড়িতে রওনা হলাম সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের উদ্দেশে। বিশাল পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে হিমশীতল ঝিরিঝিরি হাওয়ার অনুভূতি নেওয়ার এক অপূর্ব স্থান হলো সিকিম। এ সফরে চারজনের গ্যাংয়ের অন্যরা হলো রাসেল, অমিত ও প্রিতম।

ছোট্ট শিলিগুড়ি শহর, ক্যান্টনমেন্ট, সেবক পেরিয়ে গাড়ি চলছে তিস্তা নদীর পাড়ঘেঁষা সড়ক ধরে। তিস্তার নীলচে পানির সৌন্দর্যে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। নদীর মতোই এঁকেবেঁকে রাস্তা চলে গেছে, সে রাস্তা ধরে ছুটছে আমাদের গাড়ি। পিচঢালা মসৃণ সড়ক, খানাখন্দ খুবই কম। আশপাশের দৃশ্য বদলাচ্ছিল একটু পরপরই। কখনো পাহাড়ের সারির পাশ দিয়ে ছুটছি, সঙ্গে ঘন জঙ্গল। আবার কখনো পাহাড়গুলো দূরে সরে যাচ্ছিল, সামনে চলে আসছিল গাছের সারি আর ঘন ঘাসের জমি।

শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে লাগল প্রায় ৫ ঘণ্টা। র‌্যাম্পো চেকপোস্ট থেকে পাসপোর্ট ও পারমিট পেপারে এন্ট্রি সিল নিতে বেশি সময় লাগেনি। সেখান থেকে পারমিট না নিলে গ্যাংটক গিয়ে কোনো হোটেলে থাকতে পারবেন না এবং ঘোরাও যাবে না কোথাও।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সিকিম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এর রাজধানী শহর গ্যাংটক। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে। গ্যাংটকের অন্যতম আকর্ষণ হলো এমজি বা মহাত্মা গান্ধী মার্গ। এই এমজি মার্গের রাস্তা ফুল দিয়ে সাজানো। এখানে রয়েছে বসার জায়গা, সুসজ্জিত দোকানপাট এবং পরিচ্ছন্ন রাস্তা। দেখলে মনে হবে ইউরোপের কোনো শহর। এমজি মার্গের এক পাশে মহাত্মা গান্ধীর একটি ম্যুরাল রয়েছে।

গ্যাংটকের রাস্তায় ধূমপান, আবর্জনা ও থুতু ফেলা আইনত নিষিদ্ধ। রাস্তার মাঝখানের বাগান পরিপূর্ণ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রকার ঝুলন্ত টব, মাটিতে বপন করা ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছে। গাছের প্রতিটি ডাল ও পাতায় বিভিন্ন রংবেরঙের লাইটিং করে রাস্তার সৌন্দর্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। কিছুদূর পরপর বাগানের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম ঝরনা। বাগানের গা ঘেঁষে দুই ধারে রাখা বেঞ্চগুলোতে ভ্রমণকারীরা বিশ্রাম করেন, কেউ সেলফি তোলায় ব্যস্ত থাকেন।

গ্যাংটকে এক রাত থেকে আমরা যাই উত্তর সিকিমের পর্যটন এলাকা লাচুং; তিব্বত সীমান্তের কাছে। আমরা যখন পৌঁছাই, তখন সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

লাংচুর দুর্গম পথে

লাংচুর দুর্গম পথে। ছবি: লেখক

উঁচু পাহাড়ি রাস্তায় আমাদের গাড়ি এঁকেবেঁকে চলছে। আর রাস্তার নিচে সঙ্গে বয়ে চলেছে পাথুরে স্বচ্ছ হ্রদ। দুই পাশে পাহাড় আর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা হ্রদের পানির গভীরতা না থাকলেও আছে স্রোতের তীব্রতা। স্বচ্ছ নীলাভ জলের খরস্রোতা হ্রদের মধ্যে পড়ে থাকা বিশাল বিশাল পাথরখণ্ডে ধাক্কা খেয়ে নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে এগিয়ে যাচ্ছে দুরন্ত গতিতে। মাঝে মাঝে দেখা মিলছে বন্য বানরের। ওরা বিভিন্ন দলে রাস্তার বাঁকে বাঁকে বসে আছে।

গ্যাংটক থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লাংচু যেতে সময় লাগল প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা। চারপাশের অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ ও ইয়ামথাং ভ্যালি যাওয়ার পথে স্বচ্ছ নীল পানির ঝরনা মনকে প্রশান্তি দেয়। সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় সুবিশাল বরফের আস্তরণ ও তুষারপাতের অপূর্ব দৃশ্যের দেখা মিলল। বরফ আচ্ছাদিত রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে তিব্বতের বিশেষ জাতের গরু ইয়াক।

খাড়া পাহাড়ের উচ্চতায় এ পর্যটন স্থাপনায় পৌঁছাতে প্রতি মুহূর্তে গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠবে। পাহাড়ের উঁচু-নিচু সরু রাস্তার একেকটা বাঁক রীতিমতো মরণফাঁদ; যাকে বলে ভয়ংকর সুন্দর। লাচুংয়ে দূর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনা, সূর্যের আলোকরশ্মিতে সুউচ্চ পর্বতের মোহনীয় দৃশ্য  প্রতি পদে পদে মুগ্ধ করেছে। শেষ বিকেলে সুউচ্চ পর্বতমালায় সূর্যের আলোকরশ্মি যেন হীরার ওপর বিচ্ছুরিত সূর্যালোকের মতো!

শেষ বেলায় গ্যাংটকের শপিং মলে ঘুরতে গেলাম। ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিলাম। এখানে ছোট ছোট দোকানে বিভিন্ন রকমের পণ্য সাজানো। সস্তায় বিক্রি হচ্ছে কাশ্মীরি শাল, চাদরসহ অন্যান্য পণ্য। রাতে হোটেলে ফিরলাম সকালে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com